রাজনৈতিক ও পারিবারিক দ্বন্দ্বে খুন হয়েছেন মিঠু


আগামী সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হতে আগ্রহী ছিলেন ফুলতলার জামিরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মামুন রহমান। তিনি কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপির সদস্যও। ওই একই আসনে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার আলাউদ্দীন মিঠুও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। এ কারণে নিজের পথ পরিষ্কার করতে মিঠুকে খুন করতে মামুন পরিকল্পনা করেন বলে পুলিশ জানায়।
পুলিশের ভাষ্য, মিঠুকে খুন করতে মামুন রহমান ৩০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। আর এ ক্ষেত্রে তিনি মিঠুদের পারিবারিক শত্রু শিমুল ভূঁইয়ার সাহায্য নিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে ফুলতলার দামোদর ইউনিয়নের নতুন হাট এলাকায় নিজ ব্যবসায়িক কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন মিঠু। এ সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে তাঁর এক দেহরক্ষী নওশের গাজী নিহত হন। আহত হন মিঠুর শ্বশুর সৈয়দ ফজলুল আলম। ঘটনার পরের দিন মিঠুর ছোট ভাই রাজ সরদার বাদী হয়ে ফুলতলা থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। এ পর্যন্ত এ হত্যাকাণ্ডে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে তিনজন আদালতের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ডিআইজি মো. দিদার আহমেদ এসব কথা জানান। তিনি বলেন, মিঠু হত্যার ঘটনা যৌথভাবে তদন্ত করছে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও র‍্যাব। সংস্থাগুলোর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হত্যা সংঘটিত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রকৃত তথ্য উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়েছে।
আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া তিনজনের বরাত দিয়ে ডিআইজি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনায় ছিলেন মিঠুর বাবা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি শিমুল ভূঁইয়া। আর এতে আর্থিক সহায়তা করেছেন মামুন রহমান।
ডিআইজির ভাষ্যমতে, কয়েক মাস আগ থেকেই মিঠুকে খুনের পরিকল্পনা হয়। এ জন্য প্রায় চার মাস আগে দামোদর ইউনিয়নের গাড়াখোলা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শিমুল হাওলাদারকে মিঠুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য পাঠানো হয়। তিনি মিঠু সম্পর্কে শিমুল ভূঁইয়াকে নানা তথ্য জানাতেন। আর এ দুজনের মধ্যে এসব তথ্যের আদান-প্রদানকারী হিসেবে কাজ করতেন ভূঁইয়া পরিবারের আরেক সদস্য মুশফিকুর রিফাত ভূঁইয়া। এসব তথ্যের ভিত্তিতে এ হত্যার পরিকল্পনা সাজানো হয়।
এরই মধ্যে গ্রেপ্তার শিমুল হাওলাদার ও রিফাত ভূঁইয়া দুজনই আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী র‍্যাব-৬ হাসনাত রিজভী মার্শালকে গ্রেপ্তার করে। মার্শাল দামোদর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব। মার্শাল আজ আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এ ঘটনায় তিনি মামুনের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের কাজ করেছেন বলে পুলিশের দাবি।
এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া তাইজুল ইসলাম ওরফে রনিকে গত রোববার রাতে পুলিশ একটি শটগানসহ গ্রেপ্তার করে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই শটগানটি দিয়ে মিঠুকে গুলি করা হয়।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে দিদার আহমেদ গ্রেপ্তার চারজনের কথা বললেও বাকি চারজনের নাম প্রকাশ করেননি। তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে তাঁদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে তাঁদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। অপরাধীরা যে দলেরই হোক না কেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
মামুন রহমানের পারিবারিক সূত্র জানায়, এক মাস আগে লন্ডনে চলে গেছেন মামুন রহমান। সেখানে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা থাকেন। গত মেয়াদে চেয়ারম্যান থাকার সময়ও তিনি বেশির ভাগ সময়ই লন্ডনে ছিলেন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন