চীন ও ভারত গরু মেরে জুতো দান রোহিঙ্গাদের



গণহত্যা ও নৃশংসতার মুখে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের চীন ও ভারতের ত্রাণ সাহায্যকে ‘গরু মেরে জুতো দানের মতো অবস্থা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জিসাসের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ মন্তব্য করেন।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংস গণহত্যা ও নির্যাতনের উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে কী দেশ, কী পৃথিবীতে বাস করছি আমরা। যেখানে মনুষ্যত্বের, মানবতার কোনো মূল্য নেই। শুধু ক্ষমতা আর অর্থনৈতিক স্বার্থই বড় হয়ে দাঁড়াল?’
বিএনপির মহাসচিব প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘কী কারণে আজকে চীনের মতো দেশ মিয়ানমারকে সমর্থন দিচ্ছে? কী কারণে রাশিয়া সমর্থন দিচ্ছে। কী কারণে ভারত—যারা গণতন্ত্র, মানবাধিকারের জন্য বিশ্বে নন্দিত, তারা আজকে কীভাবে এদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। বলছে, আমরা তো ত্রাণ পাঠাচ্ছি। এটা হচ্ছে গরু মেরে জুতো দানের মতো অবস্থা আর কি। একদিকে খুন করছে, হত্যা করেছ, আমার স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে ফেলছে, অন্যদিকে বলছে আমরা তো ত্রাণ পাঠাচ্ছি। বন্ধ করো এই গণহত্যা।’
রোহিঙ্গাদের অমানবিক জীবনযাপনের বর্ণনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না, কী মানবেতর জীবন তারা যাপন করছে। কল্পনার বাইরে, মাথার ওপরে কোনো ছাদ নেই। ১০ দিনের শিশুকে বুকে নিয়ে একটি ছোট্ট প্লাস্টিকে ডেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। বিশ্ববিবেকের কাছে আবেদন জানাই, আপনারা এগিয়ে আসুন, মিয়ানমারকে বাধ্য করুন তাদের গণহত্যা বন্ধ করতে, তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিতে।’
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়টি সিদ্ধান্ত ছাড়া শেষ হওয়ার উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বরাবরই বলেছি, আমাদের কেউ এসে কিছু করে দিয়ে যাবে না। আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি, প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকে চীন, রাশিয়া ও ভারতে যাওয়া উচিত তাদের কনভিন্স করার জন্য। বলা উচিত, এটা আমাদের জন্য বিশাল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিয়ানমার সরকার একটা জাতিকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করার জন্য কাজ করছে। আর আমরা চুপ করে বসে আছি।’
মিয়ানমারকে সরকার একটি শক্ত কথাও বলেনি
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের অবস্থানের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘মিয়ানমারকে সরকার একটি শক্ত কথাও বলেনি। এখন পর্যন্ত গণহত্যার জন্য মিয়ানমার সরকারকে দায়ী করেনি, নিন্দা পর্যন্ত জানায়নি। গণহত্যা কথাটিও বলেনি। এমনকি রোহিঙ্গাদের শরণার্থী বলতে তারা রাজি নয়। তারা মনে করে অনুপ্রবেশকারী। জানি না এর মধ্যে কী ডিপ্লোমেসি আছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ দুটি। এটা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ। আমাদের গণতন্ত্র নেই। মানুষ ভোট দিতে পারবে কি না, নাগরিকেরা তার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কি না, অর্থাৎ আমাদের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণভাবে অনিশ্চিত। অন্যটি হচ্ছে, আমরা এখন বাইরের দ্বারা আক্রান্ত। এই দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা জাতীয় ঐক্য ছাড়া সম্ভব নয়। এটি মোকাবিলা করতে সব শ্রেণি-পেশাজীবীকে একাত্তরের মতো আবার এক হতে হবে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকারের লোকজনের কথাবার্তায় মনে হয় তারা সব সয়লাব করে দিয়েছে ত্রাণে। তিনি দাবি করেন, সরকারের, আওয়ামী লীগের কোনো ত্রাণ নেই, যা দিচ্ছে দেশের মানুষ। আজকে বিদেশ থেকে এত সাহায্য আসছে। এখন পর্যন্ত শুনিনি বিদেশি সাহায্যগুলো দেওয়া হচ্ছে।
পাঁচ বিশিষ্ট মানুষকে গুম করা হয়েছে
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, গত পাঁচ দিনে পাঁচজন বিশিষ্ট মানুষকে গুম করা হয়েছে। একজনকে দয়াপরবশ হয়ে মৌলভীবাজারে ছেড়ে দিয়েছে। এ কোনো দেশে বাস করছি। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ফরহাদ মজহারের মতো বিশিষ্ট মানুষকে তুলে দিয়ে আবার পাগল বানিয়ে ফেরত দিয়ে যায়। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে যুদ্ধাপরাধী বলে ফাঁসি দিয়েছে, তাঁর ছেলে কী অপরাধ করেছে? সাত মাস পর ফেরত দিয়েছে, এখন পর্যন্ত সে ঘর থেকে বের হয় না। গোলাম আযমের ছেলে আযমীর, এখন পর্যন্ত খোঁজ নেই। মীর কাশেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার, তাঁর এখন পর্যন্ত খোঁজ নেই। এঁদের অপরাধ কী? তাঁদের বাবারা? ঠিক আছে, বিচার তো করেছেন, ফাঁসি দিয়েছেন, সঠিক-বেঠিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। এঁরা (ছেলেরা) কী অপরাধ করেছেন। এঁদের অপরাধ তো আপনারা চিহ্নিতই করতে পারছেন না। এই যে গুমের সংস্কৃতি, হত্যার সংস্কৃতি—এখন এ দেশের একমাত্র সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির নেতা এম এ মান্নান, জয়নাল আবেদীন, সাংবাদিক নেতা আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নবীনতর পূর্বতন