সাকিব আল হাসান: বাংলাদেশ ক্রিকেটারকে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের খেলা থেকে বিশ্রাম বিসিবি


 

আগামী মাসের শেষদিন পর্যন্ত সাকিব আল হাসানকে কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য বিবেচনা করবে না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।

আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো এক সিদ্ধান্তে আজ বুধবার বিসিবি বলেছে যে সাকিব আল হাসানকে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে।

বোর্ডের ক্রিকেট অপারেশন্সের প্রধান জালাল ইউনুস মিরপুরে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "সাকিব আল হাসান যেহেতু বলছেন তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে (খেলার জন্য) প্রস্তুত নন, তাই আমরা তাকে বিশ্রাম দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"

দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের জন্য বিসিবি দল ঘোষণার পরে বাংলাদেশের ক্রিকেট তারকা সাকিব জানিয়েছিলেন যে তিনি ওই সফরে যেতে আগ্রহী নন। বিষয়টি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে জালাল ইউনুস বলেন,  এটা নিয়ে আরও কথা বলা প্রয়োজন।

সাকিব আল হাসান আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজে শেষ করে একটা বিজ্ঞাপনের কাজে দুবাই যাওয়ার আগে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন বিমানবন্দরে এবং সেখানেই তিনি তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন।

সাংবাদিকদের তিনি তখন বলেন যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য তিনি 'মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত নন'।

তার ঠিক দু'দিন আগে পর্যন্তও অবশ্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নাজমুল হাসান পাপন নিশ্চিত ছিলেন যে সাকিব আল হাসান দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাবেন। ওই দিন একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, "সাকিবের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে না যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।

সাকিব আল হাসানের ছুটি নেয়া-না নেয়ার বিষয়গুলো মিডিয়ার মাধ্যমেই কেন আসছে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে বিসিবি ক্রিকেট অপারেশন্সের প্রধান বলেন, সে আমাদের সাথে কথা বলতে পারতো। সে প্রেসিডেন্টকে (নাজমুল হাসান পাপন)কেও বলেছেন, খেলবেন। কিন্তু আজ সাকিব জানিয়েছে সে এখন মনে করে না সে মানসিকভাবে পুরোপুরি ফিট।

সাকিব এখনও আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারদের একজন। সে মানসিক অবস্থার ব্যাপারটা বলেছে সেটাকে আমরাও গুরুত্ব দিতে চাচ্ছি," বলেন জালাল ইউনুস।

আমরাও চাই যাতে সাকিব এসব কথা আমাদের সাথে আলোচনা করে, মিডিয়ার সাথে না বলে।

জালাল ইউনুস আরও বলেন,  একটা ক্রিকেটার যখন শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে, কখন তাকে জোর করার কোনও কারণ আমরা দেখি না। সাকিব আল হাসানের কথায় যেহেতু বারবার মানসিক অবস্থার কথাটা এসেছে, তাই এখানে আমরা সতর্ক থাকছি।

তবে সাকিব আল হাসান এর আগেও বেশ কয়েকটি সফরের ঠিক আগে আগে ছুটি চেয়েছিলেন। শুরু ২০১৭ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে, এরপর ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ড সফর, ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে এবং চলতি বছর নিউজিল্যান্ডে দলের সাথে যাননি সাকিব আল হাসান।

এমন একটা উদাহরণ বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিসিবি ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান।

"আরও ১৪-১৫ জন ক্রিকেটার আছেন তাদের কাছে বার্তাটা ভালো যাচ্ছে না। আমরাও চাই সিনিয়র ক্রিকেটাররা যাতে আরেকটু দায়িত্বশীল আচরণ করেন।

জালাল ইউনুস আরও বলেন, সাকিব আগে আসুক, আসার পর আমাদের সাথে বসবে সাকিব। তার থেকে আমরা পরিকল্পনার কথা শুনবো সে অনুযায়ী আমরা পরের ব্যবস্থা বা সিদ্ধান্ত নেব।

৩০শে এপ্রিল পর্যন্তই কেন বিশ্রাম

সাকিবের ব্যাপারে বিসিবি'র এই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, সে যেহেতু বলেছে সে শারীরিকভাবে ফিট না, সে ওয়ানডে খেলতে চাচ্ছিল না, হয়তো সে কিছুটা বিশ্রাম চাচ্ছিল।

আগামী মাসের মধ্যে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজ আছে - এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড পুরো সময়টিতে সাকিবকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকেই বিরত থাকার জন্য পরামর্শ দিয়েছে।

জালাল ইউনুস বলেন,  কোন সিনিয়র অ্যাকটিভ ক্রিকেটারকে হুট করে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তটা বিসিবির জন্য কোনওভাবেই সহজ নয়। তারা এখনও খারাপ খেলছে না, তাই কোনও ক্রিকেটারকে বিশ্রাম দেয়ার আগেও আমাদের ভাবতে হয়। কারণ এখানে গোটা দলের ব্যাপার।

তবে যেহেতু সাকিব আল হাসান কেবল দক্ষিণ আফ্রিকা না যাওয়ার ব্যাপারেই বলেছেন, তাই সে বিষয়টি বিবেচনা করেই ৩০শে এপ্রিল তারিখটা ধার্য করা হয়েছে বলে জানান মি. ইউনুস।

আমরা তাকে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি দিয়েছি, কারণ সামনে শ্রীলঙ্কা সিরিজ আছে। ওটা বিবেচনা করেই এই তারিখটা বেছে নিয়েছি।

৩০শে এপ্রিলের মধ্যে সাকিব ও বিসিবির মধ্যে আরও কথা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তখন সাকিব তার পরিকল্পনা বিসিবিকে জানাবে এবং বিসিবি সাকিবকে জানাবে তারা কী চায়।

সাকিব ইস্যুতে বিসিবির কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত

এর আগে গতকাল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির প্রধান এবং জাতীয় ক্রিকেট দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছিলেন যে খেলতে না চাইলে সাকিবকে অনুরোধ করার কিছু নেই।

সাকিবের ব্যাপারে কোন  কেয়ার করবে না  বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, এমন কথাই সাংবাদিকদের বলেছিলেন বাংলাদেশের এই সাবেক অধিনায়ক।

"সাকিব যদি খেলতে না চায়, বিসিবি ডোন্ট কেয়ার,  খোলামেলা মন্তব্য ছিল খালেদ মাহমুদের।

কেউ যদি খেলতে না চায় তাঁর জন্য বাংলাদেশ দল বসে থাকবে এটা ভুল চিন্তা। ওকে রিকোয়েস্ট করার কিছুই নেই, ও তো আমাদের এমপ্লয়ি।

সাকিবের এখন থামার সময় হয়েছে এমন ধারনা পোষন করে খালেদ মাহমুদ সুজন আরও বলেন, "সাকিব বিসিবি চালাতে পারে না। সে বলতে পারে না, আমি আজ খেলবো কাল খেলবো না।

এর আগে সোমবার রাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনও কড়া ভাষায় সাকিব আল হাসানের সমালোচনা করেন।

যদি এই সময়ে আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) থাকতো, তবে কি সে ছুটি নিতো? - প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি।

সাকিব আল হাসান রবিবার কী বলেছিলেন?

একটি বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে অংশ নিতে দুবাই যাওয়ার আগে ঢাকার বিমানবন্দরে রবিবার সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছিলেন সাকিব আল হাসান।

এসময় তিনি যেসব মন্তব্য করেন তার অনেকগুলোই ছিলো আপাত পরস্পরবিরোধী।

প্রথমে তিনি বলেন  দক্ষিণ আফ্রিকায় দলের সাথেই যাবো - কিন্তু একটু পরেই আবার বলেন  এমনও হতে পারে ওয়ানডে না খেলে টেস্ট খেলবো"।

আবার এর পরে যোগ করেন যে তিনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে কেবল ছয় মাস নয়, বরং অন্তত ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত অর্থাৎ নয় মাসের ছুটি চেয়েছেন বোর্ডের কাছে।

আর এর পরে তিনি যুক্তি দেখান যে তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্রিকেট খেলার জন্য 'রেডি ফিল করছি না।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন