
নবী করিম (স.) ইতেকাফের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। তিনি প্রতি বছর রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। এমনকি একবার বিশেষ কারণে তিনি ইতেকাফ করতে না পারলে, শাওয়াল মাসে ১০ দিন রোজা রেখে ইতেকাফ করেছেন (বুখারি শরিফ)।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (স.) ওফাতের আগ পর্যন্ত রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করে গেছেন। তারপর তার স্ত্রীগণও তা পালন করেছেন।’ (বুখারি ৪৯৯৮)
ইতেকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত
ইতেকাফ এমন একটি ইবাদত, যা আত্মার পরিশুদ্ধি সাধনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া, অর্থাৎ কোনো এলাকায় একজন ব্যক্তি এই সুন্নত আদায় করলে, পুরো এলাকার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু কেউ না করলে সবাই গুনাহগার হবেন।
হাজার মাসের চেয়ে উত্তম যে রাত
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘ইতেকাফকারী নিজেকে পাপ থেকে মুক্ত রাখে এবং তার জন্য সব নেকি লেখা হতে থাকে।’ (মিশকাত)
রসুলুল্লাহ (স.) বলেন,
ﻭَﻣَﻦِ ﺍﻋْﺘَﻜَﻒَ ﻳَﻮْﻣًﺎ ﺍﺑْﺘِﻐَﺎﺀَ ﻭَﺟْﻪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻴْﻨَﻪُ ﻭَﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﺛَﻠَﺎﺙَ ﺧَﻨَﺎﺩِﻕَ، ﻛُﻞُّ ﺧَﻨْﺪَﻕٍ ﺃَﺑَﻌْﺪُ ﻣِﻤَّﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟْﺨﺎﻓِﻘَﻴْﻦِ
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার আশায় মাত্র একদিনের জন্য ইতেকাফে থাকবে, আল্লাহ তার এবং জাহান্নামের মধ্যে তিন খন্দকের দূরত্ব সৃষ্টি করে দেন। এক একটি খন্দকের গভীরতা হলো আসমান ও জমিনের মধ্যকার দূরত্বের চেয়েও বেশি।’ (তারগিব ওয়াত তারহিব ৪/৩৪৪)
ইতেকাফের শর্তাবলি
ইতেকাফে মনোনিবেশের জন্য কিছু শর্ত রয়েছে:
রোজা রাখা
মসজিদে অবস্থান করা
অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা
অধিক প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের না হওয়া
এ সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেন,
السُّنَّةُ عَلَى الْمُعْتَكِفِ أَنْ لاَ يَعُودَ مَرِيضًا وَلاَ يَشْهَدَ جَنَازَةً وَلاَ يَمَسَّ امْرَأَةً وَلاَ يُبَاشِرَهَا وَلاَ يَخْرُجَ لِحَاجَةٍ إِلاَّ لِمَا لاَ بُدَّ مِنْهُ وَلاَ اعْتِكَافَ إِلاَّ بِصَوْمٍ وَلاَ اعْتِكَافَ إِلاَّ فِي مَسْجِدٍ جَامِعٍ
‘ইতেকাফকারীর জন্য সুন্নত হলো, সে কোনো রোগী দেখতে যাবে না, জানাজায় অংশগ্রহণ করবে না, স্ত্রীকে স্পর্শ করবে না, তার সঙ্গে সহবাস করবে না এবং অধিক প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবে না, রোজা না রেখে ইতেকাফ করবে না এবং জামে মসজিদে ইতেকাফ করবে।’ (আবু দাউদ ২৪৭৩)
যে আমলে শবে কদর নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায়
নারীদের জন্য ইতেকাফ
নারীরাও ইতেকাফ করতে পারেন, তবে তাদের জন্য উত্তম হলো নিজ ঘরে নামাজের নির্ধারিত স্থানে ইতেকাফ করা।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ অর্থাৎ, ‘নবীজির (স.) স্ত্রীগণও ইতেকাফ করতেন।’ (বুখারি ৪৯৯৮)
লাইলাতুল কদর ও ইতেকাফ
ইতেকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের সন্ধান করা। রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন,
فَالْتَمِسُوهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ، وَالْتَمِسُوهَا فِي كُلِّ وِتْرٍ
‘তোমরা তা (লাইলাতুল কদর) শেষ দশকে তালাশ করো এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তালাশ কর।’ (বুখারি ২০২৭)
সুতরাং, ইতেকাফের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সহজে এবং নিশ্চিতরূপে কদরের রাত পেতে পারে এবং আল্লাহর অপার রহমত ও নেকি অর্জন করতে পারে। কেউ যদি শুধু এক রাতে ইবাদত করে তাহলে তা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।