October 13, 2025
68d8dd0cf24cc

নেপালে গণঅভ্যুত্থান ও সরকারের পতনের পর তরুণ নেতারা এবার ভোটের ময়দানে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেনারেশন-জেড (জেন-জি) তরুণদের আন্দোলনের প্রভাবশালী মুখ সুদান গুরুং ঘোষণা করেছেন, তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন এবং কেপি শর্মা অলির নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

২৭ সেপ্টেম্বর (শনিবার) আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক সপ্তাহে বিক্ষোভের ফলস্বরূপ ক্ষমতাচ্যুত হয় নেপালের কেপি অলি সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন সাবেক বিচারপতি সুশীলা কার্কি। ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী বছরের মার্চে দেশজুড়ে জাতীয় নির্বাচন হবে। এ প্রেক্ষাপটে গুরুং দলীয় বা জোটগত বুননে নির্বাচন লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং ক্ষমতাচ্যুতদের দ্রুত বিচার সম্পন্ন এবং নির্বাচন থেকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন।

গুরুং এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার দল এখন শুধু একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের বিকল্প হবে না—বরং এটি হবে ‘পরিবর্তনের আন্দোলন’। তিনি জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমর্থকদের একত্র করে তারা একটি জাতীয় আন্দোলন ও ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ‘চূড়ান্ত লড়াই’ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।

তার বক্তৃতা ও সাক্ষাৎকারে গুরুং সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে কড়া মন্তব্যও করেছেন—তাদের ‘স্বার্থপর ও দুর্নীতিগ্রস্ত’ আখ্যা দেন এবং বলেন, তারা আমাদের রাজনীতিকে টেনে এনেছেন। যদি তারা রাজনীতি চান, তবে সেই রাজনীতি-ই পাবেন; আমরা পরবর্তী নির্বাচনে লড়ব এবং এখন পিছু হটব না।

৩৬ বছর বয়সী গুরুং জেন-জির নেতৃত্বে তৃণমূল পর্যায়ের বিদ্রোহের মুখ হিসেবে দ্রুত খ্যাতি অর্জন করেন। অভিযোগ ছিল, সরকার পরিকল্পিতভাবে ফেসবুক, এক্স ও ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেয়—এর প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয় এবং দুদিনের মধ্যে অলি সরকার পতিত হয়।

নেতৃত্ব ও সংগঠন‑গঠন নিয়ে গুরুং আশা প্রকাশ করে বলেছেন, তারা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে (ডিসকর্ড, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি) সারা দেশ থেকে নীতিগত দাবি সংগ্রহ করছে এবং স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে আইন ও যোগাযোগ কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তিনি মনে করেন, এই প্রস্তুতি তাদের ‘শাসনের জন্য প্রস্তুত’ করে তুলবে এবং তার দল নেপালি জনগণের প্রতিটি কণ্ঠস্বরের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে।

গুরুং এও জানিয়েছেন, তিনি এককভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নয়—বরং দল বা জোট হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, যদি আমি একাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়াই করি, তাহলে আমাদের তরুণ শক্তি হারাবে। একসঙ্গে আমরা আরও শক্তিশালী।

নিজের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে গুরুং বলেন, এখনই তিনি নিজেকে ‘সঠিক ব্যক্তি’ দাবি করছেন না, তবে জনগণ যদি তাকে নির্বাচিত করে, তবে অবশ্যই তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তিনি মন্তব্য করেন, তাকে চুপ করানোর বিভিন্ন চেষ্টাই হয়েছে—তার বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে—তবু তিনি বলেন, ‘আমি ভীত নই; আমাকে হত্যা করলেও আমার আন্দোলন থামে না। আমার সম্প্রদায়কে বাচাতে হবে—এখনই, নাহলে কখনই না।’

নেপালের রাজনীতিতে জেন-জির উত্থান ও গুরুংয়ের অংশগ্রহণ দেশটির নির্বাচনী প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক চর্চা এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের পটভূমি বদলে দিতে পারে। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এ তরুণ নেতৃত্ব কতটা জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারবেন ও তারা কতখানি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের সমর্থন পেতে সমর্থ হবে—এসবই এখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক প্রশ্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *