
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির লুইভিলের ব্যালার্ড হাই স্কুলে ক্লাস শুরুর ঘণ্টা থেকে শেষ পর্যন্ত মোবাইল ফোন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। গত আগস্টে স্কুলের লাইব্রেরি থেকে শিক্ষার্থীরা ৮৯১টি বই নিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬৭ শতাংশ বেশি।
স্কুলের গ্রন্থাগারিক স্টেফানি কনরাড বলেন, ‘আগে ফাঁকা সময় পেলেই বাচ্চারা ফোনে ডুবে যেত। একেবারে খোলসের ভেতর ঢুকে থাকত। এখন তারা বই পড়ছে, কথা বলছে, একে অপরের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে—এটা সত্যিই অসাধারণ।’
শুধু লাইব্রেরিতেই নয়, ফোন নিষিদ্ধ হওয়ার প্রভাব পড়েছে ক্যাফেটেরিয়াতেও। দুপুরের খাবারের সময় শিক্ষার্থীরা এখন গল্প করছে, হাসছে, তাস খেলছে, এমনকি বাইরে ছোটখাটো খেলাধুলাও করছে। শুক্রবারে বিঙ্গো খেলার আয়োজনও শুরু হয়েছে।
স্কুলের প্রিন্সিপাল জেসন নয়িস বলেন, ‘আগে যেখানে সবাই চুপচাপ স্ক্রল করত, এখন সেখানে প্রাণবন্ত পরিবেশ। সংখ্যায় মাপা না গেলেও পরিবর্তনটা স্পষ্ট।’
তবে সবাই যে খুশি, তা নয়। দশম শ্রেণির ছাত্রী কালি ভিকার্স প্রথমে নীতিটি নিয়ে সন্দিহান ছিল। তার মতে, ফোন না থাকার কারণে কিছু শিক্ষার্থী অস্থির হয়ে ওঠে। তবে এখন সে স্বীকার করছে, বন্ধুদের সঙ্গে আলাপচারিতা বেড়েছে।
মনোবিজ্ঞানী ও গবেষক জ্যাঁ টুয়েঞ্জি এই উদ্যোগকে ইতিবাচক মনে করেন। তার মতে, ফোন ছাড়া থাকা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে, সামাজিক দক্ষতা গড়ে তোলে এবং মানসিক স্বাস্থ্যেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তবে কিছু অভিভাবক জরুরি পরিস্থিতিতে সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রিন্সিপাল নয়িস এ বিষয়ে বলেন, ‘স্কুল কর্তৃপক্ষের কেন্দ্রীভূত যোগাযোগ ব্যবস্থাই বেশি নিরাপদ।’
এদিকে লাইব্রেরিয়ান কনরাড মনে করেন, এই পরিবর্তন শুধু বই পড়ার অভ্যাস ফিরিয়ে আনেনি, বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই ভাগাভাগির আনন্দও তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি দুজন নবম শ্রেণির ছাত্র তাদের বই বদল করে পড়তে চাইল। এটা দেখে মনে হলো, তারা একে অপরকে বই পড়তে অনুপ্রাণিত করছে। যা একজন শিক্ষকের জন্য আনন্দের।’