October 12, 2025
1759602478.Laxmipur-

মেঘনা নদীতে ছিল ইলিশের অকাল। এবার পুরো মৌসুমজুড়ে জেলেদের জালে আশানুরূপ মাছ ধরা পড়েনি।

এরমধ্যেই মেঘনায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে।
মা ইলিশ রক্ষায় শনিবার (৪ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া অভিযান শেষ হবে আগামী ২৫ অক্টোবর মধ্যরাতে।

জেলেরা জানিয়েছে, নদীতে মাছ ধরা না পড়ায় এবার অভাব-অনটনের মধ্যে পড়তে হয়েছে তাদের।

আর ট্রলার মালিকরা জানিয়েছেন, ধারদেনা করে নদীতে নৌকা ভাসিয়েছেন তারা। কিন্তু মৌসুম শেষে তাদের খরচও ওঠেনি।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীর হাট এলাকার ট্রলার মালিক হারুন। জ্বালানি এবং আনুষাঙ্গিক মিলে লাখ টাকার মতো খরচ করে সাগরে ট্রলার নিয়ে মাছ শিকারে যান তিনি। পাঁচ দিন মাছ শিকার করে এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। লাভের অর্ধেক ট্রলারের, আর বাকি অর্ধেক ১০ জন জেলের। সে হিসেবে একজন জেলে পাঁচদিন মাছ শিকার করে দুইশ টাকা করে পেয়েছেন।

ওই ট্রলারের জেলেরা জানান, এবার মৌসুমজুড়ে মাছ শিকার করে তাদের আয়-রোজগার ছিল যৎসামান্য। যা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলতো তাদের।

জেলে মফিজ মাঝি বাংলানিউজকে বলেন, নদীতে ইলিশ না থাকায় এবার তেমন আয় রোজগার হয়নি। তাই মৌসুম শেষে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। আমাদের পরিবার পরিজন আছে। ধারদেনাও আছে।

তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময়ে নিবন্ধনকৃত জেলেদের সরকারের পক্ষ থেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। কিন্তু একটি পরিবারে শুধু মাত্র চাল দিয়ে কিছুই হয় না। আনুষাঙ্গিক অনেক কিছুই তো লাগে। তাই এ ২২ দিন আমরা কীভাবে চলবো, সে দুশ্চিন্তায় আছি।

একই দুশ্চিন্তার কথা বললেন জেলে নুর হোসেন। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরেই নদীতে তেমন মাছ নেই। আমরা জেলেরা অভাব অনটনে আছি। সরকারি যে সহায়তা দেওয়া হয়, তাও যৎসামান্য। আবার অনেক প্রকৃত জেলেরা সহায়তাও পায় না। জেলেদের প্রতি সরকারের আরও বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।

এদিকে কয়েকজন জেলে অভিযোগ করেন, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন এ দেশের জেলেরা আইন মেনে চললেও বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ শিকার করে ভারতীয় জেলেরা। তারা মা ইলিশ ধরে নিয়ে যায়।

সাগরের জেলে মো. সবুজ বাংলানিউজকে বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ দিয়ে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে ভারতীয় জেলেরা ফিশিং বোট নিয়ে প্রবেশ করে। আমরা নিষেধাজ্ঞা মেনে চললেও সাগরের ওই অংশ থেকে তারা ইলিশ শিকার করে নিয়ে যায়।

অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞা শুরুর রাতেই জেলেরা নৌকা-জাল নিয়ে নদীর তীরে চলে আসে।

শনিবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে সদর উপজেলার মজুচৌধুরীর হাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা জাল এবং নৌকা মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছে। আপাতত জেলেরা মেঘনা নদী সংলগ্ন খালে নৌকা নোঙর করে জালগুলো গুছিয়ে রাখবে।

জেলে মাইন উদ্দিন বলেন, নৌকা মেরামত করে নিচ্ছি। অভিযান শেষে যাতে পুনরায় নদীতে নামতে পারি।

জেলে মফিজ ও নুর হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞায় মাছ শিকার বন্ধ। তাই এ সময় জাল মেরামত করে নিচ্ছি।

উল্লেখ্য, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের অভিযান আগামী ২৫ অক্টোবর শেষ হবে। এ সময়টাতে মেঘনা নদীতে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাত, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলাতে প্রায় ৫৫ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে নিষেধাজ্ঞাকালীন জেলার ৪৪ হাজার ১৬৭ জেলে পরিবারের মাঝে ১১০৪ মেট্টিক টন ভিজিএফ চাল বিতরণ করা হবে। প্রত্যেক জেলে পরিবার ২৫ কেজি করে চাল পাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *