October 12, 2025
68ea77fe61f85

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকেই নিজ বাড়ি ছাড়তে হয়েছে গাজাবাসীদের। গতকাল শুক্রবার যুদ্ধবিরতির পর আবারও বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন গাজার বাসিন্দারা। তবে বাড়ি ফিরেও পুরোপুরি স্বস্তি পাচ্ছেন না তারা। একেকজনের বাড়ি-ঘর পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। বাড়িফেরা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে। একেকজন বর্ণনা করেছেন একইসঙ্গে ভয়ঙ্কর ও আনন্দের অভিজ্ঞতা।

গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান জেলার ইসমাইল জায়দা বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আমার বাড়ি এখনো অক্ষত আছে। কিন্তু এই জায়গাটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে, আমার প্রতিবেশীর বাড়ি ধ্বংস হয়েছে, পুরো জেলা উধাও হয়ে গেছে।’

মাহদি সাকলা নামে আরেকজন ফিলিস্তিনি জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির খবর শোনার সাথে সাথেই তার পরিবার গাজা শহরের উত্তর দিকে যাত্রা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার ভাষ্য, ‘কোনও ঘরবাড়ি নেই, সেগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে আমরা বাড়ি ফিরতে পেরেই খুশি, এই ধ্বংসাবস্থার মধ্যেও। এটাও অনেক আনন্দের। দুই বছর ধরে আমরা কষ্ট ভোগ করছি। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বাস্তুচ্যুত হয়েছি।’

একসময় এই অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ছিল খান ইউনিস। শহরটির দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সরে যাওয়ার পর শত শত ফিলিস্তিনি তাদের ঘরবাড়িতে ফিরে এসেছেন। তারা কেবল ভাঙা ভবন ও তার ধ্বংসস্তূপ দেখতে পাচ্ছেন।

শহরটির বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা ফাতমা রাদওয়ান অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, ‘কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। কেবল কয়েকটি কাপড়, কাঠের টুকরো এবং হাঁড়ি। মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছে।’

খান ইউনিসের আরেক বাসিন্দা আহমেদ আল-ব্রিম জানিয়েছেন, তিনি তার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ থেকে কেবল কাঠ উদ্ধার করতে পেরেছেন, যা তিনি রান্নার জন্য জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতেন। তার ভাষ্য, ‘আমরা আমাদের এলাকায় গিয়েছিলাম। এটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আমরা জানি না এরপর আমরা কোথায় যাব। আমরা আসবাবপত্র, কাপড়, বা অন্য কিছু; এমনকি শীতের পোশাকও পাইনি। কিছুই অবশিষ্ট নেই।’

ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর শুক্রবার সকাল থেকেই গাজার কিছু অংশে ভারী গোলাবর্ষণ থেমে গেছে। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা নিশ্চিত করেছে, ইসরায়েলি সেনা এবং সাঁজোয়া যান গাজা সিটি এবং খান ইউনিস, উভয় স্থান থেকেই সরে আসছে।

হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনী যে এলাকাগুলি থেকে সরে এসেছে সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী পাঠাচ্ছে।

এদিকে, রবিবার থেকে গাজায় অতিরিক্ত সাহায্য সরবরাহ শুরু করার জন্য ইসরায়েল কর্তৃক জাতিসংঘকে সবুজ সংকেত দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই তথ্য জানিয়েছেন একজন জাতিসংঘ কর্মকর্তা। তাদের সাহায্যের মধ্যে ১ লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী অন্তর্ভুক্ত থাকবে যা এরই মধ্যে জর্ডান এবং মিশরের মতো প্রতিবেশী দেশগুলিতে মজুদ করা আছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা শুরুর পর কমপক্ষে ৬৭ হাজার ২১১ জন নিহত এবং ১ লক্ষ ৬৯ হাজার ৯৬১ জন আহত হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *