
ময়মনসিংহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক ব্যক্তির কমেন্টের জবাবে ‘বেহেতশ’ নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগে ধর্ম অবমাননার মামলায় কারাগারে থাকা সংস্কৃতিকর্মী শামীম আশরাফকে (৩৮) আদালত জামিন দিলেও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের দুই মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। তাকে আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য উল্লেখ করে পুলিশের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে শ্যোন অ্যারেস্টের আবেদন করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ময়মনসিংহ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল হকের আদালতে কারাগারে থাকা শামীম আশরাফের জামিন শুনানি হয়। আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। এরপরই কোতোয়ালি থানা পুলিশ সন্ত্রাস বিরোধী আইনের দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করে আদালতে। নগরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক শামীমমের পরিচালিত শামীম এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়ের ভেতরে ষড়যন্ত্রের লিপ্ত থাকায় ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর থানায় দায়ের হওয়া একটি সন্ত্রাস বিরোধী আইনে গ্রেফতার দেখানো হয়। এছাড়াও চলতি বছরের ২৫ জুন নগরের নতুন বাজার এলাকার ক্যাপিটাল কলেজের অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেন খান আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার মামলায় গ্রেফতার হন। সন্ত্রাস বিরোধী আইনে পুলিশের করা সেই মামলাতেও শামীম আশরাফকে গ্রেফতার দেখানো হয়। গ্রেফতার দেখানোর দুটি আবেদনেই শামীম আশরাফকে আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ আদালত পরিদর্শক পিএসএম মোস্তাছিনুর রহমান বলেন, তাকে শ্যোন অ্যারেস্টের নথি কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ধর্ম অবমাননা ও সাইবার সুরক্ষা আইনের মামলায় ৯ অক্টোবর শামীম আশরাফের ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে শামীম আশরাফের বিরুদ্ধে ৬ অক্টোবর রাতে নগরের কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন খেলাফত মজলিসের ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইয়াসিন আরাফত। পরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের ধারায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। এর আগে সেদিন রাতেই পুলিশ নগরের আমলাপাড়া এলাকা থেকে শামীম আশরাফকে গ্রেফতার করে।
ধর্ম অবমাননার মামলায় জামিন পাওয়া শামীম আশরাফকে আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য উল্লেখ করে সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখানো প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, এসব ঘটনায় আসামির কাগজে কলমে সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিভিন্ন ছবি ও অ্যাক্টিভিটি এসব তথ্য রয়েছে। সেই তথ্যগুলোসহ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি-(এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরজু আহমেদ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শামীম আশরাফের সম্পৃক্ততা নিয়ে ফেসবুকে লেখেন, শামীম আশরাফকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে করা মামলায় জামিন প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু জামিনে তাকে বাইরে আসার সুযোগ দেওয়া হয় নি। উল্টো জামিনের দিনে তাকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। শামীম আশরাফকে পছন্দ করার কারণ তাঁর বন্ধুদের আছে, অপছন্দ করার কারণেরও অভাব নাই! তাঁকে ঘৃণা করার সুযোগও হয়ত আছে! কিন্তু জুলাইয়ে প্রতিদিন রাজপথে থাকা শামীমকে সন্ত্রাস বিরোধী দুটি মামলায় গ্রেফতার কিছুটাও কি বিস্ময়ের নয়! ধর্ম অবমাননার অভিযোগ কি এই গ্রেফতারের হাতিয়ার হয়ে উঠলো? এও কি ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করা নয়?
তিনি আরও লেখেন, শামীম জুলাইয়ের প্রতিদিন আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন। যখন জুলাইয়ের পক্ষে কেউ পোস্টার ব্যানার ছাপেনি, তখন ছাপিয়েছেন তার প্রেস থেকে! রাষ্ট্রযন্ত্র যে কি অদ্ভুত জিনিস! বুঝা দায়! এই দমনবাদী প্রক্রিয়ার নিন্দা জানাই। জামিনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ম অবমাননা’র অভিযোগে মেরিট থাকলে এর বিচার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হতে দিন। এত বড়ো বড়ো রাজনৈতিক মামলা ভিন্ন জিনিস!