October 18, 2025
rasel-68f34645571aa

জেগে থাকা শহরেও ভোর হয়। আসে নতুন দিন, নতুন সম্ভাবনা। ছাঁদ যাদের আকাশ সমান, রোদের নরম আলো তাদের জন্য বিলাসিতা নয় বরং নিয়তির নিষ্ঠুর বাস্তবতা।

তবে রাজধানীর ফুটপাতে বেড়ে ওঠা দুই পথশিশু করতে চায় পড়ালেখা, স্বপ্ন দেখে বড় হওয়ার। অভাব-অনটন, রোদ-বৃষ্টি এ সবকিছু সঙ্গে নিয়েই চলছে তাদের পড়াশোনা। কাছের এক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া এই দুই পথশিশু যেনো জানান দিচ্ছে , ‘জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়’।

তাদের ক্ষেত্রে হয়তো বলাই যায়— স্বপ্ন যখন আকাশ ছোঁয়ার, পারিপার্শ্বিক বাধা তখন ছাই হয়ে উড়ে যায়।

চোখেমুখে ঠিকরে পড়া আলোই যেনো কলিংবেলের মত দরজা খোলার জানান দেয় তাদের ঘরে। চোখেমুখে দারুণ দ্যুতির আড়ালে আছে একসমুদ্র কষ্টের গল্প। সকালের খাওয়া বলতে কেবল এক গ্লাস মাঠা। লড়াই যখন ৩ বেলা খাবার জোটানোর, তখন আইসক্রিম-চকলেটের বাসনা তাদরে জীবনে স্বপ্নের হাওয়াই মিঠাইয়ের মতন।

দু্ই শিশুর বৃদ্ধ অভিবাবক মা বলেন, ‘আমার কোন চওয়া-পাওয়া নেই। ওরা যদি কোচিং করতো তাহলে ওরা আগাইতো। কেউ এই দায়িত্ব নিলে খুব উপকার হতো। সবার মতো ওরাও চায়, ভালো কিছু খেতে। ওরাও তো মানুষ, কিন্তু কী করব; দিতে পারি না।’

বেলা ১১টায় তাদের স্কুল ছুটির পর শুরু হয় দিনের দ্বিতীয় অধ্যায়। খেলাধুলা থেকে পড়াশোনা, সবটাই দশ ফুট প্রস্থ ঘর নামক ফুটপাতে। এখানেই বারান্দা, আঙ্গিনা কিংবা মাঠ। দৃষ্টির সীমা বহুদুর, তবু কোনটাই যেন নিজের নয়। অ্যাতো শূণ্যতায়ও, কি দারুণ উচ্ছ্বলতায় দুই শিশুর জীবন চলে। ভুলে থাকে ঠিকানাহীন জীবনের কথা।

নিজেদের মধ্যে খুনশুটিতেই তারা খুঁজে নেয় শৈশবের আনন্দ। মাঝে মাঝে সেখানে উঁকি দেয় এক টুকরো শখ। কোমল হাতের আঙ্গুল রাঙ্গায়, আধো আধো মেহেদি রঙে। কখনও অতি কাজল চোখ কিংবা ব্লাসনের অতি রঙ্গে চোখেমুখে বর্ণিল জীবনের আহ্বান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণার তথ্যে জানা গেছে, শুধু রাজধানীতে প্রায় ৫০ হাজার ছিন্নমূল মানুষের বসবাস। আরেক হিসেব বলছে, সারাদেশে শুধু পথশিশুর সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ লাখ।

রাস্তার পাশে দাড়ানো নিঃসঙ্গ বৃক্ষের মতো ওরা জন্মায় অসহায়ত্বের ধুলোয়। মুখে জমে থাকা ধুলিকনা আসলে সভ্যতার পরিত্যাক্ত অক্ষর। অপেক্ষায় থাকে, উজ্জ্বল দিনগুলোর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *