
নিজ সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে শুক্রবার এক পোস্টে সাজা কমানোর এ ঘোষণা দেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট।
সাত বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জননিন্দিত সাবেক আইনপ্রণেতা জর্জ স্যান্টোসের সাজা কমিয়ে তার দ্রুত মুক্তির পথ করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
নিজ সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে শুক্রবার এক পোস্টে সাজা কমানোর এ ঘোষণা দেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট।
জালিয়াতির অভিযোগে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত স্যান্টোস কারাগারে তার সাজা ভোগ করছিলেন।
সাজা কমানোর কারণ ব্যাখ্যা করে ট্রাম্প তার পোস্টে বলেন, জর্জ স্যান্টোস এক প্রকার দুর্বৃত্তপনা করেছেন, কিন্তু দেশজুড়ে অনেক দুর্বৃত্ত রয়েছে, যাদের সাত বছর কারাগারে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, স্যান্টাস লম্বা সময় ধরে নির্জন কারাবাসে আছেন। সব বর্ণনা অনুযায়ী, তার সঙ্গে ভয়াবহ বাজে আচরণ করা হয়েছে।
‘কাজেই আমি এইমাত্র সাজা কমানোর জন্য সই করলাম, যা জর্জ স্যান্টোসকে তাৎক্ষণিকভাবে কারাগার থেকে মুক্তি দিচ্ছে। শুভকামনা জর্জ, মহান জীবনের পথে হাঁটো’, পোস্টে বলেন ট্রাম্প।
সিএনএন জানায়, চলতি বছরের ২৫ জুলাই আদালতে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্যান্টোসের ৮৭ মাসের সাজা ভোগের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর কয়েক মাসের মধ্যে ৩৭ বছর বয়সী সাবেক এ রিপ্রেজেন্টেটিভের সাজা কমিয়ে দিলেন প্রেসিডেন্ট।
আদালতে নিজেকে সমর্পণের আগে সৌদি সংবাদমাধ্যম আল অ্যারারিয়া ইংলিশকে স্যান্টোস বলেন, তিনি ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন, কিন্তু তার মনে হয়েছে, ট্রাম্প তাতে সম্পৃক্ত হতে চাননি।
সংক্ষিপ্ত ও কেলেঙ্কারিময় রাজনৈতিক জীবনের পর কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হন সাবেক রিপাবলিকান রিপ্রেজেন্টেটিভ জর্জ স্যান্টোস। জালিয়াতি ও পরিচয়কেন্দ্রিক প্রতারণার দায়ে এপ্রিলের শেষের দিকে তাকে সাত বছরের বেশি সময়ের কারাদণ্ড দেন ফেডারেল এক বিচারক।
নিউ ইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট জাজ জোয়ানা সেইবার্ট স্যান্টোসকে ৮৭ মাসের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।
রয়টার্স জানায়, গত বছরের আগস্টে স্যান্টোস ২৩টি অভিযোগের মধ্যে দুটির—চাঁদা সংগ্রহের সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো এবং দাতার নাম দেখানোতে জালিয়াতি—বিষয়ে দোষ স্বীকার করেন। ২০২২ সালের নির্বাচনের সময় নিউ ইয়র্ক সিটির একাংশ এবং পূর্ব উপশহরের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হতে রিপাবলিকান পার্টির আর্থিক সহায়তা পাওয়ার লক্ষ্যে তিনি এসব করেন।
ইউএস অ্যার্টর্নি’স অফিস ফর দ্য ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ড বিভাগের প্রধান জন ডারহ্যাম জানান, স্যান্টোসকে ৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার কাছ থেকে ২ লাখ ডলারের বেশি অর্থ বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
স্যান্টোসের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে ডারহ্যাম সে সময় বলেন, ‘এগুলো আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি অপমান এবং তার কাছ থেকে প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা বাস্তব মানুষ, যারা বাস্তব ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
‘আজকের রায় দেখিয়ে দিল এমন জঘন্য অপরাধ কখনোই বরদাশত করা হবে না।’
জালিয়াতির মামলায় স্যান্টোসের ৮৭ মাসের সাজা চেয়ে চলতি এপ্রিলেই প্রসিকিউটররা আদালতে বলেন, তার অপরাধের মাত্রা এতটাই নজিরবিহীন যে, এ ক্ষেত্রে দণ্ডের সর্বোচ্চ সীমা প্রযোজ্য।
নির্বাচনি প্রচারে স্যান্টোস দাবি করেছিলেন, তিনি নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে পড়েছেন, গোল্ডম্যান স্যাকস ও সিটি গ্রুপে চাকরি করেছেন এবং তার দাদা-দাদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের হাত থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। পরে প্রমাণিত হয়, এসবের কিছুই সত্য নয়।
নির্বাচনি প্রচারের অর্থ ব্যক্তিগত ব্যয়ের জন্য ব্যবহার, দাতাদের ক্রেডিট কার্ড অনুমতি ছাড়া ব্যবহার, এমনকি চাকরি থাকা অবস্থায় বেকার ভাতা নেওয়ার মতো অভিযোগে স্যান্টোসের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের মে মাসে ফেডারেল অভিযোগ গঠন করা হয়।
যদিও আগস্টে তিনি ২৩টির মধ্যে কেবল দুটি অভিযোগে দোষ স্বীকার করেন, তবে এ সংক্রান্ত চুক্তির অংশ হিসেবে মামলার অভিযোগপত্রে বর্ণিত সব অনিয়মই স্বীকার করেন তিনি।
কংগ্রেসে মাত্র ১১ মাস সয়য়ে স্যান্টোস একের পর এক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। সহকর্মী আইনপ্রণেতারা তাকে দূরে সরিয়ে রাখেন এবং টেলিভিশনের রাত্রিকালীন কমেডি অনুষ্ঠানে তিনি নিয়মিত বিদ্রূপের শিকার হন।
হাউস এথিকস কমিটির তদন্তে উঠে আসে, তিনি চাঁদার অর্থ ব্যয় করেছেন বোটক্স, বিলাসবহুল ব্র্যান্ড হারমিস এবং অ্যাডাল্ট কনটেন্ট প্ল্যাটফর্ম অনলি ফ্যানসে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তাকে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করা হয়।