October 24, 2025
23666-68fb2e8d0926c

গুম, খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় ১৫ জন শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তা সেনানিবাসের সাব-জেলে বন্দি রয়েছেন। বুধবার থেকে তারা সেখানে অবস্থান করছেন। প্রথম দিন বুধবার সবার স্বজনই তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। স্বজনের উপস্থিতিতে কিছু সময়ের জন্য হলেও একটা আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। সব আসামির স্বজনই সাক্ষাতের সুযোগ পান।

সাক্ষাতের সময় কেউ কেউ বাসা থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে এলেও সেগুলো ভেতরে নিতে দেওয়া হয়নি। আসামিরা খাচ্ছেন কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া খাবার। সাক্ষাতের জন্য আধা ঘণ্টা সময় নির্ধারণ থাকলেও স্বজন বেশি হওয়ায় সবাইকে ২০ মিনিট করে সুযোগ দেওয়া হয়। এ সময় দুজন এআইজি (প্রিজন্স) এবং তিনজন ডেপুটি জেলারসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কারাসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সূত্র জানায়, কারা কর্মকর্তাদের ধারণা ছিল, স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় অবেগপ্রবণ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটতে পারে। সেজন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখা হয়েছিল। কিন্তু কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। সাক্ষাতের সময় পারিবারিক আলোচনা ছাড়াও মামলা পরিচালনাসহ নানা বিষয়ে কথা হয়েছে। কারাবিধি অনুযায়ী প্রথম সাক্ষাতের ১৫ দিন পর স্বজনরা দ্বিতীয় দফায় দেখা করার সুযোগ পাবেন।

আরও পড়ুন
সাব-জেলে যেভাবে রাখা হয়েছে সেনা কর্মকর্তাদের
সাব-জেলে যেভাবে রাখা হয়েছে সেনা কর্মকর্তাদের

বুধবার প্রথমদিনের সাক্ষাতে সবার স্ত্রী এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে এসেছিল অনেকের সন্তান। কারাবিধি অনুযায়ী মা-বাবা, ভাই-বোন, ছেলের স্ত্রী এবং মেয়ের জামাইকে স্বজন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ১৫ সেনা কর্মকর্তার প্রথম দিনের সাক্ষাতে স্ত্রী ও সন্তান ছাড়া অন্য কোনো স্বজন আসেননি। কয়েকজন আসামির হাজিরা আছে আগামী ৫ নভেম্বর। যাদের ওইদিন আদালতে হাজির করা হবে তাদের স্বজনরা ওইদিন দেখা করার সুযোগ পাবেন।

সাব-জেলে আসামিরা কী ধরনের খাবার খেয়েছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক কারা কর্মকর্তা বলেন, সকালে তারা রুটি ও সবজি খেয়েছেন। দুপুরে ডাল, ভাত ও সবজির বাইরে কেউ মাছ এবং মাংস খেয়েছেন। দুপুরের মতো রাতেও সবার জন্য কমন মেন্যু ছিল ডাল, ভাত, সবজি এবং মাছ বা মাংস। যাদের মাংস পছন্দ তাদের মাছ দেওয়া হয়নি। আর যাদের মাছ পছন্দ তাদের মাংস দেওয়া হয়নি।

সাব-জেলের বন্দিরা কীভাবে সময় ব্যয় করছে জানতে চাইলে কারাসংশ্লিষ্ট সূত্র বলেন, বেশির ভাগ সময়ই শুয়ে বসে সময় পার করছেন। বই এবং পত্রিকা পড়ে ও টেলিভিশন দেখে কারও কারও সময় কাটছে। তাদের জন্য বেশ কয়েকজন সেবক রয়েছেন। নামাজ-কালামও পড়ছেন তারা। সেবকরা তাদের জন্য চা বানিয়ে দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় কাজে সহযোগিতা করছেন।

কারা সূত্র জানায়, গ্রেফতার ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির করার জন্য প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে গাড়ি চাওয়া হয়েছিল সেনাবাহিনীর কাছে। কিন্তু ‘বিতর্ক হবে’ বিবেচনায় সেনাবাহিনী গাড়ি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে কারা কর্তৃপক্ষ সবুজ রঙের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক একটি গাড়ি (প্রিজন ভ্যান) প্রস্তুত রাখে। আগের রাতেই কারা সদর দপ্তর এলাকায় এনে রাখা হয় গাড়িটি। পরে ওই গাড়িতে করেই তাদের আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের কার্যক্রম শেষে একই গাড়িতে করে তাদের নেওয়া হয় সেনানিবাসে অবস্থিত সাব-জেলে।

সূত্র আরও জানায়, যে প্রিজন ভ্যানে সেনা কর্মকর্তাদের বহন করা হয়, কারা কর্তৃপক্ষের কাছে সে ধরনের আরও ছয়টি প্রিজন ভ্যান রয়েছে। তবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি দুইটি। ওই প্রিজনগুলো অভ্যন্তরীণ বন্দি আনা-নেওয়ার জন্য (এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে স্থানান্তর) ২০২৩ সাল থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমেরিকান অ্যাম্বাসির কাছ থেকে এগুলো নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, সাব-জেলে প্রত্যেক সেনা কর্মকর্তাকে পৃথক রুমে রাখা হয়েছে। ওই সাব-জেলে ১৬টি রুম আছে। তবে সেখানে যদি আরও আসামি আসে তাহলে প্রতি রুমে দুই-তিনজন করেও দেওয়া হতে পারে। কারণ, দেশের অন্যান্য কারাগারে এক রুমে তিন-চারজনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার যুগান্তরকে বলেন, সাব-জেলটি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অধীনে অবস্থিত হলেও সব বিধিবিধান এবং নিয়মকানুন মানা হচ্ছে অন্যান্য কারাগারের মতোই। তিনি বলেন, বুধবার আমি সাব-জেলে গিয়েছিলাম। আসামিদের কিছুটা বিমর্ষ মনে হয়েছে। তারা কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। তবে অস্বাভাবিক কোনো আচরণ কেউ করেনি। তাদের বলেছি, ‘সাব-জেলে থাকা অবস্থায় অবশ্যই কারাবিধি মেনে চলতে হবে।’ তারা বিধি মেনে চলবেন বলে জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *