জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, “২৪ জুলাইয়ের আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তারা আমাদের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের বীর সৈনিক। আর যারা লড়াই করেছেন, তারা নতুন বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু সেই মুক্তিযোদ্ধারা (জুলাই যোদ্ধারা) যখন চাঁদাবাজি করে, তখন আমাদের কষ্ট হয়। যখন তারা আমাদের প্রবীণদের অপমান করে, তখন আমরা ব্যথিত হই। আর যখন তারা পড়াশোনার পরিবর্তে অন্যের জায়গায় গিয়ে পায়ের ওপর পা দিয়ে পরিচয় দেয়, তখন আমরা লজ্জিত হই।”
শনিবার লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন। শহরের ঐতিহ্যবাহী কনভেনশন সেন্টার মিলনায়তনে পলিটেকনিক শিবির এ আয়োজন করে।
ড. রেজাউল করিম আরও বলেন, “মেধাবীরা যদি চরিত্রহীন হয়, তবে সেই মেধাবীরাই জাতির জন্য কলঙ্কের তিলক। আমাদের দেশ একসময় চারবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য দায়ী নয় রিকশাচালক, কুলি-মজুর বা খেটে খাওয়া মানুষ। দায়ী শিক্ষিত কিন্তু চরিত্রহীন ব্যক্তিরা—ওই সচিব, ওই আমলা, ওই ইউএনও, ওই ডিসি কিংবা আমার মতো রাজনীতিবিদ, যারা কমিশন নিয়েছে, পার্সেন্টেজ তুলেছে। জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে আলোচিত শব্দ হচ্ছে ‘চাঁদাবাজি’। আমরা শপথ নিতে চাই—এর জন্য যদি আমি দায়ী হই, সবার আগে আমাকেই ফায়ার করবে, আমাকে বাদ দেবে, প্রত্যাখ্যান করবে। যারা রাজনীতিবিদ, যারা দেশ শাসন করবে, তারা যদি চাঁদাবাজি করে, দুর্নীতি করে, অস্ত্রবাজি করে, অন্যের পরিবারে ইয়াবা বা অস্ত্র ঢুকিয়ে দিয়ে নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চায়—তবে সেই দুর্নীতিবাজকে ‘না’ বলার জন্য তোমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ১৯৭১ দেখিনি, কিন্তু আমরা ২০২৪ দেখেছি। আমাদের তরুণ প্রজন্ম একটি নতুন বাংলাদেশের জন্য বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অপরাজনীতি ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। আর স্বৈরাচারমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে।”
ড. রেজাউল করিম বলেন, “বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের একজন উপমন্ত্রী লন্ডনে ২৬৬টি বাড়ি কিনেছে দুর্নীতির টাকা দিয়ে—সবই জনগণের অর্থ। গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশের বহু এমপি-মন্ত্রী ও রাজনীতিবিদ বিদেশে বাড়ি কিনেছেন, ‘বেগমপাড়া’ তৈরি করেছেন, ক্ষমতা হারানোর পর প্রকাশ পেয়েছে তারা মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা দুর্নীতি করেছেন। তাদের সব কিছু ছিল, কিন্তু আল্লাহর ভয় ছিল না।”
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিবিরের সভাপতি শাহাদাত হোসেন আরমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম সাদ্দাম।
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিবিরের সেক্রেটারি আবদুল্লাহ আল মারুফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীপুর শহর শিবিরের সভাপতি একেএম ফরিদ উদ্দিন, জেলা কমিটির সেক্রেটারি আবদুর রহমান প্রমুখ
