October 28, 2025
নিহত-কালামের-স্ত্রী-সন্তান

লাশবাহী গাড়ি বাড়ির সামনে থেমে আছে। গাড়ির ভেতরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে আবুল কালাম। গাড়ির গ্লাসের পাশে তাকিয়ে আছে তার দুই ছোট্ট সন্তান—আব্দুল্লাহ (৫) ও পারিসা (৩)। ছোট্ট শিশু দুটি মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতে থাকে, ‘মা তুমি কান্না কোরো না, বাবা ঘুমাচ্ছে।’

কিন্তু মা প্রিয়া অনবরত কান্না ও আহাজারিতে ভেঙে পড়েছেন। তিনি বলেন, “আমার সন্তানরা এখনো বুঝতে পারেনি, তাদের বাবা আর ফিরবে না। ওরা বলে, ‘বাবা ঘুমাচ্ছে মা, তুমি কান্না কোরো না।’ আমি কিভাবে ওদের বোঝাই যে ওদের বাবা আর কখনো জাগবে না! আবুল কালামই ছিল আমাদের একমাত্র ভরসা, এখন আমি ও সন্তানরা একেবারে দিশাহারা হয়ে গেছি।”

আইরিন আক্তার পিয়া বলেন, “রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ফোন আসছে—বাচ্চাদের বাবা নাকি অ্যাক্সিডেন্ট করছে, হাসপাতালে ভর্তি। তখন কিন্তু আমার কলিজা নাই এই পৃথিবীতে। বাচ্চারা তো বাবারে খুঁজতাছে, এখনো বাচ্চারা বোঝে না বাবা কী, বাবা হারানোর বেদনা কী। কিছুক্ষণ পরেই তারা খুঁজব, ‘ডেডি আসে নাই, ডেডি কোথায়, ডেডি আমার জন্য চকোলেট, কোক নিয়ে আসো। কারে বলবে, ‘আমার জন্য রুটি, সস নিয়ে আসো ডেডি, ও আমার আল্লাহ।”

তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষ হতে পারি, কিন্তু ছেলেমেয়েদের কষ্ট দিইনি। আমার কলিজাগো আমার বাচ্চাদের বাবাকে ফেরত দেন, যেন সারা জীবন তারা দেখতে পারে। এই অল্প বয়সে শেষ হয়ে গেছে। ওরা কার কাছে যাবে, কার কাছে থাকবে।

আমাদের অভিভাবক তো ছিলেন তিনি। ওদের ভবিষ্যৎ কী হবে, ওরা কিভাবে চলবে, কিভাবে থাকবে। কে করবে ওদের দেখাশোনা। আমরা তো এতিম হয়ে গেলাম রে।’
এর আগে রবিবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রো দুর্ঘটনায় নিহত আবুল কালামের মরদেহ ভোর রাতে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি গ্রামে আকাশ-বাতাসে তখন শুধু স্বজনদের আর্তনাদ আর শোকাবহ পরিবেশ। কালামের আকস্মিক মৃত্যু পরিবার ও পুরো এলাকাবাসীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। সকাল ৯টায় স্থানীয় মাদ্রাসা মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর নড়িয়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়।

নিহতের চাচাত ভাই নোমান চৌকিদার বলেন,আবুল কালাম খুবই সৎ ও পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন। আমাদের সবার সঙ্গে খুব সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখতেন। ওর স্ত্রী ও সন্তানসহ পরিবারের জন্য সরকার কিছু করবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

নড়িয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) লাকী দাস বলেন, আবুল কালামের মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা তার জানাজা ও দাফনে অংশ নিয়েছি। আমরা সার্বক্ষণিক তার পরিবারের পাশে আছি এবং পরিবারের লোকজন যে কোনো প্রয়োজনে প্রশাসনের সহযোগিতা পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *