অ্যামেরিকায় এসে চালাতেন ট্যাক্সি, এখন বার্ষিক আয় ২ মিলিয়ন ডলার
সময়টা ২০০৬ সাল। নতুন জীবন শুরু করতে ভারত থেকে অ্যামেরিকার সান ফ্রান্সিসকোতে আসেন ১৯ বছরের ভারতীয় তরুণ মনি সিং, কিন্তু স্বপ্নের জীবনের পথে ছোটার প্রথম বছরটি সুখকর ছিল না তার।
সামাজিক ও আবেগগত দিক থেকে তরুণের জন্য বছরটি ছিল ঝঞ্ঝাপূর্ণ। ভারত থেকে ক্রেডিট ট্রান্সফার সম্ভব ছিল না বলে কলেজ থেকে ছিটকে পড়েন তিনি।
‘ওই এক বছর আমি বিষণ্ন ছিলাম। আমি (দেশে) ফিরে যেতে চাইছিলাম। সামাজিক দিক থেকে আমি ছিলেন খুবই একা’, বলেন মনি।
এমন বাস্তবতায় মনির ক্যারিয়ারের পথ তৈরির তাগিদ দেন তার মা। তিনি সন্তানকে খুঁজতে বলেন চাকরি।
মায়ের তাগিদের পর ঘণ্টায় ছয় ডলার বেতনে চাচার ট্যাক্সি ক্যাব কোম্পানিতে ডিসপ্যাচার (সেবাগ্রহীতা ও চালকদের মধ্যে যোগাযোগ সমন্বয়কারী) হিসেবে চাকরি নেন মনি। এটিই মূলত তার উদ্যোক্তা জীবনের পথ খুলে দেয়।
এনডিটিভি জানায়, ডিসপ্যাচার থেকে একসময় নিজেই ট্যাক্সি ক্যাব কেনেন মনি। একটি থেকে ধীরে ধীরে তার ক্যাবের সঙ্গে দাঁড়ায় পাঁচটিতে। এরপর নিজেই খুলে বসেন ডিসপ্যাচ কোম্পানি।
সেখান থেকে আরেক যাত্রা শুরু করা এ ভারতীয় প্রতিষ্ঠা করেন মার্কেটিং ও অ্যাডভার্টাইজিং কোম্পানি ‘ড্রাইভার’স নেটওয়ার্ক’, যেটি কাজ করে স্বাধীন চালকদের নিয়ে।
তারপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি মনি সিংয়ের। বর্তমানে তিনি বছরে দুই মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেন বলে এক প্রতিবেদনে জানায় সিএনবিসি।
ড্রাইভার’স নেটওয়ার্কের সাফল্যের নেপথ্যে
মনি মনে করেন, চালকদের সংগ্রাম ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে গভীর বোঝাপড়া আছে তার। আর ড্রাইভার’স নেটওয়ার্কের সাফল্যের মূলে রয়েছে এটিই।
তার প্রতিষ্ঠিত প্ল্যাটফর্মটি রাইড শেয়ার করা চালকদের বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দেয়। এটা তারা করে নিজের গাড়িটিকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভ্রাম্যমাণ বিলবোর্ড বানিয়ে।
ট্যাক্সির বাইরে
ট্যাক্সি ক্যাবের ব্যবসার মাধ্যমে সাফল্য পাওয়া মনি ২০১৮ সালে এ শিল্পের বাইরে ডানা মেলার পরিকল্পনা শুরু করেন। চালকমুখী বিজ্ঞাপনী সংস্থা চালানোর পাশাপাশি ‘এটিসিএস প্ল্যাটফর্ম সল্যুশন্স’ নামের নতুন উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করেন এ ব্যক্তি।
এ যাত্রায় ব্যবসায়িক অংশীদার জয়প্রীতের পরামর্শ এবং অ্যামেরিকা ও নর্দান ক্যালিফোর্নিয়াতে মায়ের বিউটি সেলুন ব্যবসার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান মনি সিং। ২০১৯ সালের জুনে ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউয়ে তিনি চালু করেন ‘ড্যান্ডিজ বারবারশপ অ্যান্ড বিয়ার্ড স্টাইলিস্ট’ নামের সেলুন।
এ ব্যবসাতেও সফল হন মনি। ২০২৪ সালে ড্যান্ডিজ থেকে আসে ১২ হাজার ১২৮ দশমিক ৪৫ ডলার। একই বছরে এটিসিএস থেকে তার আয় ১৩ হাজার ৩৭৫ দশমিক ৩০ ডলার।
বর্তমানে ড্যান্ডিজে পূর্ণকালীন কাজ করেন এ ভারতীয়। এর পাশাপাশি সপ্তাহে প্রায় ২০ ঘণ্টা তিনি কাটান এটিসিএসে।
