October 28, 2025
হামলা-1

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও থামেনি ইসরাইলের হামলা। এর পাশাপাশি পশ্চিমতীর, সিরিয়া ও লেবাননজুড়ে দেশটির হামলা অব্যাহত থাকায় পুরো মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বাড়ছে ইসরাইলের হামলা। ইসরাইলি বাহিনী পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান জোরদার করেছে।

ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় মঙ্গলবার অধিকৃত পশ্চিমতীরে তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ। হামাস জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে দুজন তাদের সদস্য এবং তিনজনই ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন। এদিকে ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি চিহ্নিত অস্থায়ী হলুদ রেখাটি এখন যেন ক্রমেই বাস্তব রূপ নিচ্ছে। অস্থায়ী রেখাকেই গাজার স্থায়ী সীমানা বানানোর চেষ্টা করছে ইসরাইল। খবর আলজাজিরার।

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন বন্ধ হয়নি। গত ১০ অক্টোবর ঘোষিত যুদ্ধবিরতি গাজার ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপ কিছুটা কমালেও সেখানে এখনো ইসরাইলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। একইসঙ্গে লেবানন, সিরিয়া ও পশ্চিমতীরেও দেশটি নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে। আর এটি প্রতিবেশী দেশগুলোকে অস্থিতিশীল ও দুর্বল রাখার ইসরাইলি নীতিই সামনে আসছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সম্প্রতি ইসরাইল সফর করেছেন। তবু তেলআবিবের প্রধান মিত্র ওয়াশিংটন এখনো ইসরাইলের এসব আঞ্চলিক আগ্রাসনের দায় নিতে বা থামাতে আগ্রহী নয়। বরং গাজার পরিস্থিতিতেই মনোযোগ দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।

এদিকে দখলদার ইসরাইলের কাছে মঙ্গলবার একটি কফিন বুঝিয়ে দেয় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। আর এই কফিনে এক ইসরাইলি জিম্মির মরদেহের বাকি অংশ ফিরিয়ে দিয়েছে তারা। তার মরদেহের বাকি অংশ ২০২৩ সালের নভেম্বরে গাজা থেকে উদ্ধার করেছিল ইসরাইলি সেনাবাহিনী। নতুন জিম্মির মরদেহ না দিয়ে আরেকজনের দেহাংশ ফেরত দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছে দখলদাররা। তাদের দাবি, হামাস এর মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার জরুরি বৈঠকে বসে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এদিকে ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি চিহ্নিত অস্থায়ী হলুদ রেখাটি এখন যেন ক্রমেই বাস্তব রূপ নিচ্ছে।

ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি যখনই স্থবির হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তখনই এ সীমারেখা যেন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য গতিপথ পাল্টে দেওয়ার নাটকীয় পরিণতি হয়ে উঠছে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এখন প্রতি ২০০ মিটার অন্তর হলুদ রঙের কংক্রিটের ছোট ছোট পিলার বসাচ্ছে। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল নির্ধারণের জন্য। এ সীমারেখা কার্যত গাজাকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। পশ্চিমাংশে হামাস আংশিক ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের পর সৃষ্ট শূন্যতায় নিজেদের কর্তৃত্ব ফেরাতে চাইছে। তারা প্রকাশ্যে দমন করছে প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠী ও গ্যাং সদস্যদের। যাদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের মদদপুষ্ট হওয়ার অভিযোগ আছে। অন্যদিকে ইসরাইলের গাজার উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্তসংলগ্ন পূর্বাংশে আইডিএফ তাদের সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা জোরদার করছে। যে বা যারা ভুলেও এ রেখা পার হওয়ার চেষ্টা করছে, তাদের ওপর গুলি চালাচ্ছে তারা।

এ বিষয়ে ওই হলুদ লাইনের পূর্ব পাশের, যা এখন আইডিএফের নিয়ন্ত্রিত এলাকা এক সময়ের বাসিন্দা খালেদ আল হুসাইন বলেন, আমাদের এলাকায় ওই হলুদ লাইনগুলো স্পষ্ট দেখা যায় না। কোথা থেকে শুরু, কোথায় শেষ, কিছুই জানি না। তিনি বলেন- যেই আমরা ঘরের কাছাকাছি যাই, চারদিক থেকে গুলি ছুটতে থাকে। ছোট ছোট ড্রোন, ওই কোয়াডকপ্টারগুলো, মাথার ওপর ঝুলে থাকে, আমাদের প্রতিটি নড়াচড়া দেখে। এদিকে নিজের উত্তরসূরির নাম ঘোষণা করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। এক লিখিত ঘোষণায় ৮৯ বছর বয়সী আব্বাস বলেছেন- যদি কখনও তিনি আর দায়িত্ব পালন করার মতো অবস্থায় না থাকেন, সেক্ষেত্রে অস্থায়ীভাবে তার স্থলাভিষিক্ত হবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হুসেইন আল শেখ।

মাহমুদ আব্বাসের ঘোষণাটি ছেপেছে ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তাসংস্থা ওয়াফা। সেখানে তিন বলেছেন, কোনো কারণে যদি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) প্রধানের পদ শূন্য হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ফিলিস্তিনের এবং প্যালেস্টাইনিয়ান লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) ভাইস প্রেসিডেন্ট হুসেইন আল শেখ অস্থায়ীভাবে এই পদে স্থলাভিষিক্ত হবেন। তার দায়িত্ব হবে ফিলিস্তিনের নির্বাচনী আইন মেনে নির্বাচনের আয়োজন করা এবং তারপর নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।

ইসরাইলি বাহিনীর গত দুই বছরের হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার ৯০ শতাংশ ভবন হয় পুরোপুরি, না হয় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত-ক্ষতিগ্রস্ত এসব ভবনের ধ্বংসাবশেষ এখন বড় মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে গাজাবাসীদের মধ্যে। গাজার বৃহত্তম শহর গাজা সিটির পৌরসভা মুখপাত্র আসিম আল নাবিহ আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, আমাদের প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী গাজা উপত্যকায় বর্তমানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কমপক্ষে আড়াই লাখ টন ধ্বংসাবশেষ। এর পরিমাণ আরও বেশিও হতে পারে। এসব ধ্বংসাবশেষ এবং এগুলো থেকে উঠে আসা ধুলো-বালি স্বাস্থ্যের জন্য রীতিমতো হুমকি।

এগুলো পরিষ্কার করা এখন আমাদের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যদি শিগগিরই এগুলো দূর করা না যায় তাহলে স্বাস্থ্য বিপর্যয় দেখা দেবে গাজায়। নাবিহ জানান, গাজা সিটির পৌরসভা কিংবা আঞ্চলিক প্রশাসনের পক্ষে এই বিপুল পরিমাণ ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করা এখন অসম্ভব। কারণ গাজার আঞ্চলিক প্রশাসনের কাছে জঞ্জাল সরানোর উপযোগি যেসব যন্ত্রপাতি, ক্রেন ছিল সেগুলোর বেশিরভাগই ইসরাইলি বাহিনী ধ্বংস করে দিয়ে গেছে।

অল্প যে কিছু যন্ত্রপাতি এখনও সচল আছে। সেগুলো দিয়ে হয়তো জঞ্জাল পরিষ্কারের কাজ শুরু করা যেতো, কিন্তু সেখানেও বাধা আছে। গাজার কিছু এলাকায় এখনও রয়ে গেছে ইসরাইলি সেনারা। এদিকে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখ-ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সেনা পাঠানোর বিষয়ে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নিতে পারে পাকিস্তান। দেশটির সরকারি ও সামরিক সূত্র জানাচ্ছে, সেনা পাঠানোর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের দিকেই এগোচ্ছে ইসলামাবাদ। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য ডন। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজায় শান্তি ও পুনর্গঠনের জন্য গঠিত ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্সে (আইএসএফ) পাকিস্তান সেনা পাঠাবে কি না, সে বিষয়ে ইসলামাবাদ শীঘ্রই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *