২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের সময় আওয়ামী লীগ সরকারসহ ১৪ দল কোনো ধরনের অন্যায় আশ্রয় নেয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আসামি হাসানুল হক ইনুর আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মনসুরুল হক বলেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের জন্য গত দিনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রস্তাব রাখেন প্রসিকিউশন। আসামিপক্ষে অভিযোগ গঠন হবে কি, হবে না সেই ব্যাপারে আইনি বিধান অনুযায়ী আমি ট্রাইবুনালের সামনে বক্তব্য উপস্থাপন করেছি। রাষ্ট্রপক্ষ আমার আসামির বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ এনেছে। এরমধ্যে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি ও কমপ্লিসিটি অন্যতম। তবে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি প্রমাণ করার এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত তার বিরুদ্ধে আনতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। কমপ্লিসিটি বা সম্পৃক্ততা নিয়েও তার ব্যাপারে কোনো কিছু দেখাতে পারেনি বলে আমি ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছি।
এদিন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর অডিও কথোপকথনে স্পষ্ট ‘কারফিউ হবে কিন্তু গুলি হবে না’ বলা আছে বলে উল্লেখ করেন আইনজীবী। এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে ইনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন না করার জন্যে আদালতে কী বলেছেন সে বিষয়ে তার পক্ষের আইনজীবী কথা বলেন।
ইনুর বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলাটির অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ। সে মামলায় ইনুর আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। তিনি এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ থেকে ইনুর অব্যাহতি চেয়ে আর্জি জানিয়ে শুনানি করেছেন।
অব্যাহতির আবেদনের সময় ট্রাইবুনালের তথ্য তুলে ধরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে টেলিফোনিক কনভারসেশন সেখান থেকে আমি উদ্ধৃতি করে দেখিয়েছি যে, উনাদের কনভারসেশনে স্পষ্টত উনারা বলেছেন, যারা আন্দোলন করছেন তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য আহ্বান করতে হবে। যাতে আন্দোলন বেগবান না হয়, সে জন্য কারফিউ জারি করে, যাতে করে মানুষ আনরুলি (অবাধ্য) না হয় এবং সহিংস কোনো ঘটনা না ঘটাতে পারে, সে জন্য ইনু শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছেন।
মনসুরুল হক বলেন, এবং শেখ হাসিনাও বলেছেন যে কারফিউ হবে, কিন্তু কোনো গুলি হবে না। স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। এবং বলেছেন, কেউ যদি কোনো ভায়োলেন্ট অ্যাক্ট করে তাকে অ্যারেস্ট করা হবে, থানায় নিয়ে যাওয়া হবে, টেলিভিশনে প্রচার করা হবে যে তাকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে, কিন্তু কিছুক্ষণ পরে থানায় রেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এ অবস্থায় এ কনভারসেশন থেকে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, আওয়ামী লীগ সরকারসহ ১৪ দল সাধারণ জনগণের আন্দোলন দমন করার জন্য কোনো অন্যায়ের আশ্রয় গ্রহণ করেন নাই। ট্রাইব্যুনাল আমাদের কথা শুনেছেন।’
রাষ্ট্রপক্ষ ইনুর বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ এনেছে বলেও উল্লেখ করেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, একটি সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি (শীর্ষ নেতৃত্বের দায়) এবং অন্যটি কমপ্লিসিটি (সম্পৃক্ততা)। সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি প্রমাণ করার এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত ইনুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ উপস্থাপন করতে পারেনি। কমপ্লিসিটি বা সম্পৃক্ততার ব্যাপারেও তথ্য-উপাত্ত আনতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।
এর আগে ২৩ অক্টোবর এ মামলায় ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশন শুনানিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন করেন। এরপর আসামিপক্ষ তার বিরোধিতা করে শুনানি করেন। এরপর আদালত আগামী ২ নভেম্বর এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশের জন্য দিন ঠিক করেন।
