মাল্টার ‘রেসিডেন্সি বাই ইনভেস্টমেন্ট’ প্রোগ্রাম ইউরোপের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবস্থাগুলোর একটি।
ইউরোপে স্থায়ীভাবে বসবাসের স্বপ্ন দেখেন এমন ব্যক্তিদের জন্য মাল্টা হতে পারে বিশাল সুযোগ, যা এতদিন হয়তো আপনি খেয়ালই করেননি।
মাল্টার ‘রেসিডেন্সি বাই ইনভেস্টমেন্ট’ প্রোগ্রাম ইউরোপের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবস্থাগুলোর একটি। এই ভিসার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা, শেনজেন এলাকায় অবাধ ভ্রমণের সুযোগ এবং পরিবারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির সুবিধা পাওয়া যায়। আবার সেখানে পূর্ণসময়ের জন্য থাকার বাধ্যবাধকতাও নেই।
নিয়মও খুব সোজা। আর্থিকভাবে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে, মাল্টায় সম্পত্তি কিনতে বা ভাড়া নিতে হবে, সরকারের তহবিলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে হবে এবং কিছু যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া পেরোতে হবে।
এর বিনিময়ে পাওয়া যাবে ইউরোপে বসবাসের অধিকার—অর্থাৎ, ইউরোপই হতে পারে আপনার নতুন ঘর।
প্রোগ্রামটি কী দিচ্ছে
মাল্টার ‘গোল্ডেন ভিসা’প্রোগ্রামের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের নাগরিকরা মাত্র ছয় থেকে আট মাসের মধ্যেই স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেতে পারেন।
এই ভিসা পাওয়া ব্যক্তিরা মাল্টায় অনির্দিষ্টকাল বসবাসের অধিকার পান এবং শেনজেন অঞ্চলের দেশগুলোতে স্বল্পমেয়াদি ভ্রমণ করতে পারেন অবাধে।
এছাড়া এই স্কিমে আবেদনকারীর পরিবারের সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী, সন্তান এবং নির্ভরশীল বাবা-মা—সবাইকে একসাথে একই আবেদনের আওতায় আনা যায়।
কারা আবেদন করতে পারবেন
১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের যাদের কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই এবং অর্থের উৎস যাচাইযোগ্য, তারা এমপিআরপি (মাল্টা পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম)এর জন্য আবেদন করতে পারেন।
আবেদনকারীর মোট কমপক্ষে ৫ লক্ষ ইউরো (প্রায় ৭ কোটি ১২ লাখ টাকা) সম্পদ থাকতে হবে, যার মধ্যে অন্তত ১ লক্ষ ৫০ হাজার ইউরো (প্রায় ১ কোটি ২১ লাখ টাকা) হতে হবে আর্থিক সম্পদ হিসেবে (যেমন ব্যাংক ডিপোজিট বা বিনিয়োগ।
কিছু নির্দেশনায় বিকল্প শর্তও রাখা হয়েছে যেখানে ৫ লক্ষ ইউরো (প্রায় ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা) মোট সম্পদের সঙ্গে ৭৫ হাজার ইউরো (প্রায় ৭৬ লাখ টাকা) আর্থিক সম্পদ থাকলেও আবেদন করা যায়।
মাল্টার রেসিডেন্সি এজেন্সি আবেদনকারীদের ওপর চার ধাপের কঠোর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে যাতে তাদের অর্থের উৎস ও সম্পদের বৈধতা নিশ্চিত করা যায়।
আর্থিক প্রতিশ্রুতি
২০২৫ সাল থেকে মাল্টা সরকার আর্থিক প্রতিশ্রুতি কাঠামো আরও সহজ করেছে। এখন মোট অবদান ৩৭ হাজার ইউরো (প্রায় ৫কোটি ২৪ লাখ টাকা), যা সম্পত্তি কিনুন বা ভাড়া নিন উভয়ের ক্ষেত্রেই একই।
প্রধান আবেদনকারীর জন্য প্রশাসনিক ফি ৬০ হাজার ইউরো যা যা দুই কিস্তিতে দিতে হবে। আবেদন জমা দেওয়ার সময় ১৫ হাজার ইউরো এবং অনুমোদনের পরে ৪৫ হাজার ইউরো।
প্রাপ্তবয়স্ক নির্ভরশীলদের (স্বামী/স্ত্রী বাদে) জন্য ৭৫০০ ইউরো ফি প্রযোজ্য। তবে স্বামী/স্ত্রী এবং নাবালক সন্তানরা নতুন নিয়ম অনুযায়ী ফি মউকুফ করা হয়েছে। এছাড়া, ২হাজার ইউরো দাতব্য অবদান হিসেবে অবশ্যই দিতে হবে নিবন্ধিত মাল্টিজ এনজিও-তে। এবং বৈধ হেলথ ইন্স্যুরেন্স থাকা আবশ্যক, যা মাল্টা ও ইউ-কে কভার করবে।
আবেদনকারীদের মাল্টা বা গোজোতে যোগ্য রিয়েল এস্টেট কেনা বা ভাড়া নেওয়া আবশ্যক এবং তা পাঁচ বছর ধরে রাখতে হবে। সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে ন্যূনতম মূল্য ৩,৭৫০০০ ইউরো আর ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে বার্ষিক ন্যূনতম ১৪ হাজার ইউরো।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যারা সম্পত্তি কিনবেন তারা ভাড়া দিতে পারেন, আর যারা ভাড়া নিচ্ছেন তারা নির্দিষ্ট শর্ত মেনে সাবলেট করতে পারেন।
আবেদন করার প্রক্রিয়া
প্রথমে, আবেদনকারীদের লাইসেন্সপ্রাপ্ত মাল্টিজ এজেন্ট নিয়োগ করতে হবে। সমস্ত আবেদন অনুমোদিত স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। এজেন্ট প্রাথমিকভাবে প্রার্থী সম্পর্কে যাচাই (কেওয়াইসি) সম্পন্ন করবেন।
এরপর, আবেদনকারীদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুত করতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে পাসপোর্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সম্পদের প্রমাণ, সম্পত্তি সংক্রান্ত কাগজপত্র এবং স্বাস্থ্যবীমা।
এর পর, আবেদন জমা দেওয়ার সময় প্রশাসনিক ফি ১৫ হাজার ইউরো প্রদান করতে হবে। এই পর্যায়ে অস্থায়ী আবাসিক কার্ডও দেওয়া হতে পারে।
ব্যাকগ্রাউন্ড চেক সম্পন্ন হলে আবেদনকারী প্রাথমিক অনুমোদন পান এবং বাকি ৪৫ হাজার ইউরো দিতে হবে। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকে ৩৭০০০ হাজার ইউরো অবদান, সম্পত্তি কেনা বা ভাড়া, ২ হাজার ইউরো মাল্টিজ দাতব্য সংস্থায় দান এবং বৈধ স্বাস্থ্যবীমা বজায় রাখা।
শেষে, সমস্ত শর্ত পূরণের পর চূড়ান্ত রেসিডেন্স সার্টিফিকেট ও কার্ড ইস্যু করা হয়। আবেদনকারীদের পাঁচ বছর ধরে সম্পত্তির মালিকানা রাখতে হবে।
