নিউ ইয়র্কের মুসলিম ভোটার মুনাওয়ার বলেন, ‘আগে যখন ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা কিছুটা লুকিয়ে থাকতেন, এখন তারা নিজেদের প্রকাশ করার পর বিদ্বেষ যেন আরও তীব্র হয়েছে।’
দুয়ারে কড়া নাড়ছে নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচন। এ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন নিয়ে নিউ ইয়র্কের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো মুসলিম প্রার্থী লড়ছেন মেয়র পদে।
আগাম ভোটের শেষ মুহূর্তে এসে নির্বাচনি জরিপগুলোতে মামদানি এগিয়ে রয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তুলনায়। এমন বাস্তবতায় আলোচনায় এসেছে তার অন্যতম সমর্থক হিসেবে পরিচিত মুসলিম ভোটাররা।
তারা কী ভাবছেন এ তরুণ প্রার্থীকে নিয়ে, তা দেখে আসা যাক একনজরে।
প্রার্থিতা নিয়ে উচ্ছ্বাস
মেয়র পদে জোরান মামদানির প্রার্থী হওয়া নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন নিউ ইয়র্ক সিটির মুসলিমরা। এতদিন নিজেদের ছায়ায় বসবাস করা এ সম্প্রদায়ের লোকজন কিছুটা মুখ তুলে তাকান তার আশপাশের দিকে। নিজেদের ভাবতে শুরু করেন এ শহরের অংশ হিসেবে।
বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার বংশোদ্ভূত নাগরিকরা ছিলেন অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী, কিন্তু নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শঙ্কার মেঘও গাঢ় হতে থাকে। দ্বিধাও ভর করে নিউ ইয়র্কের অনেক মুসলিম ভোটারের মধ্যে, কিন্তু কেন?
ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে জয়ী হয়ে প্রার্থিতা নিশ্চিত করার পর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলো যেন মামদানির ধর্মকেই প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। একের পর এক জরিপে এগিয়ে থাকা মামদানি ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য ও প্রচারের শিকার হতে থাকেন।
এমন বাস্তবতায় নিউ ইয়র্কের মুসলিম ভোটার মুনাওয়ার বলেন,‘আগে যখন ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা কিছুটা লুকিয়ে থাকতেন, এখন তারা নিজেদের প্রকাশ করার পর বিদ্বেষ যেন আরও তীব্র হয়েছে।’
আগের চেয়ে পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
নিরাপত্তা উদ্বেগ
কমিউনিটির মধ্যে নিরাপত্তা উদ্বেগও দেখা গেছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে কমিউনিটির লোকজন তীব্র মুসলিমবিদ্বেষী মন্তব্যের শিকার হন। এটিকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন তারা।
দক্ষিণপূর্ব কুইন্সের সাবেক মুসলিম কাউন্সিলর দানিক মিলার মনে করেন, মামদানির বিরুদ্ধে করা মন্তব্যগুলো মুসলিমদের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এমনকি তারা আশঙ্কা করছেন, এ নির্বাচনের বাইরেও এর প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রপাগান্ডা
মামদানির বিপক্ষে ইসলামবিদ্বেষী প্রচারে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুওমো ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার প্রোপাগান্ডাকে প্রধান বলে মনে করছেন নিউ ইয়র্কের মুসলিম নাগরিকরা।
সম্প্রতি এক টেলিভিশন বিতর্কে কার্টিস স্লিওয়া মামদানিকে ‘বৈশ্বিক জিহাদের’ সমর্থক বলে মিথ্যা অভিযোগ করেন।
অপর এক রেডিও সাক্ষাৎকারে কনজারভেটিভ সঞ্চালকের মন্তব্য ছিল, মামদানি আরেকটি নাইন ইলেভেন ধরনের হামলা হলে খুশি হবেন। এমন বক্তব্যে হেসে ওঠেন কুওমো।
এমনকি বর্তমান মেয়র এরিক এডামস কুওমোকে সমর্থন দেওয়ার সময় বলেন, মামদানি নির্বাচিত হলে শহরটি ইসলামি উগ্রবাদের শিকার হতে পারে, যেমনটি হয়েছে ইউরোপে।
এ নিয়ে ব্রঙ্কসের লিটল ইয়েমেনের একজন কসাই ইউসুফ নাসের বলেন, মামদানি যখন জরিপে এগিয়ে গেল,তখন থেকে ইসলামবিদ্বেষী পোস্টে ছেয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ট্যাবলয়েডগুলো।
সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক পোস্টের এক প্রচ্ছদের শিরোনাম ছিল ‘ওয়েপন্স অফ হামাস ডিস্ট্রাকশন’, যেখানে মামদানিকে গাজার যুদ্ধে অস্ত্রবিরতির বিরোধী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয় এবং তার ছবি এমনভাবে বসানো হয়, যেন তিনি নির্বিকারভাবে বন্দুকধারীদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।
বিশেষ করে চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ডের পর এমন ঘটনা আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন শহরের মুসলিমরা।
ইসলামবিদ্বেষী এ আক্রমণের মধ্যে মামদানি গত এক সপ্তাহে ব্রঙ্কসের ইসলামিক কালচারাল সেন্টারে শুক্রবারের নামাজে একটি নিয়মিত প্রচার সফর পরিবর্তন করে আবেগপূর্ণ ১০ মিনিটের ভাষণ দেন।
এতে মামদানি ইসলামবিদ্বেষ কীভাবে তার ও তার পরিবারের জীবনে প্রভাব ফেলেছে, তা তুলে ধরেন।
মামদানির পাশে দাঁড়ানো পশ্চিম আফ্রিকার অভিবাসী সম্প্রদায়ের নেতা আজিফান্তা মারেনা বলেন, মামদানির উপস্থিতি যেন ঘৃণার বিরুদ্ধে এক ঐক্যবদ্ধ বার্তা হিসেবে উপস্থাপন হয়েছে।
এখন আরও বেশি ধৈর্যের পক্ষে নিউ ইয়র্কের মুসলিমরা। তারা মনে করছেন, যত ঘৃণাই আসুক, সত্য প্রতিষ্ঠা হবেই।
