ট্রাম্প, নিশ্চিতভাবে মামদানির সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হবেন। নতুন মেয়রের জন্য কাজগুলো জটিল করার অনেক উপায় রয়েছে তার হাতে।
নিউ ইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোরান মামদানি অনেক কারণেই বিশেষ হয়ে উঠেছেন। ১৮৯২ সালের পর শহরের সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র, প্রথম মুসলিম মেয়র এবং আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া প্রথম মেয়র হিসেবে মামদানি ইতোমধ্যেই আলোচনায়।
বিবিসি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিনামূল্যে শিশুদের যত্ন, সম্প্রসারিত পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এবং মুক্ত বাজারে সরকারের হস্তক্ষেপের মতো বামপন্থী নীতিগুলো সমর্থন করেন মামদানি যা তার জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ।
মামদানি মুখ্য অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর প্রতি দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত করতে পারার অসাধারণ ক্ষমতা দেখিয়েছেন—যা সম্প্রতি শ্রমজীবী ভোটারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এদের মধ্যেই অনেকেই ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন।
মামদানির মেয়র নির্বাচনের প্রচারণা বিশ্ব মিডিয়ার মনোযোগ পেয়েছে। যার মানে দাঁড়ায় মেয়র হিসেবে তার সাফল্য এবং ব্যর্থতা উভয়ই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
বারো বছর আগে, ডেমোক্র্যাট বিল ডি ব্লাসিও নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে জিতেছিলেন শহরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য দূর করার প্রতিশ্রুতিতে। মামদানির মতো, বামপন্থী আমেরিকানরাও তাকে নিয়ে আশা করেছিলেন।
তবে আট বছর পর ডি ব্লাসিও যখন পদত্যাগ করেন তখন তার জনপ্রিয়তা ছিল তলানিতে। কারণ নতুন নীতি বাস্তবায়নে মেয়রের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার সঙ্গে তিনি লড়াই করে জিততে পারেননি।
মামদানিকেও এই সীমাবদ্ধতা এবং উচ্চ প্রত্যাশার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হকুল ইতোমধ্যেই বলেছেন যে মামদানির ঘোষিত কর্মসূচি অর্থায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কর বৃদ্ধির পক্ষে তিনি নন।
এছাড়াও, পর্যাপ্ত তহবিল থাকলেও মামদানি এককভাবে সব প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় নিউ ইয়র্কের কর্পোরেট ও ব্যবসায়ী প্রভাবশালী শ্রেণীর সমালোচক হিসেবে পরিচিতি পান। তবে কার্যকরভাবে শাসন করতে হলে তাকে সম্ভবত তাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে। যা তিনি সাম্প্রতিক সপ্তাহে ইতোমধ্যেই শুরু করেছেন।
তিনি গাজা যুদ্ধে ইজরায়েলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নিউ ইয়র্কে আসলে তাকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গ্রেপ্তার করবেন। মেয়র হিসেবে যা তাকে পরীক্ষার মুখোমুখি করতে পারে।
তবে এই সব বিষয় ভবিষ্যতের সমস্যার অংশ। বর্তমানে, মামদানি নিজেকে জনসাধারণের সামনে উপস্থাপন করার কাজ শুরু করবেন। যদিও তার প্রচারণা জাতীয় মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, তবুও তিনি এখনও বেশিরভাগ অ্যামেরিকার কাছে নতুন এবং অপরিচিত।
একটি সাম্প্রতিক সিবিএস পোল বলছে, ৪৬ শতাংশ অ্যামেরিকান নিউ ইয়র্ক মেয়র নির্বাচনের দিকে খুব বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন না। এটি মামদানি এবং ডেমোক্র্যাটিক বামপন্থীদের জন্য একই সাথে একটি সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ।
ট্রাম্প থেকে শুরু করে সংরক্ষকরা চেষ্টা করবেন নতুন নির্বাচিত মেয়রকে সমাজতান্ত্রিক হুমকি হিসেবে চিত্রিত করতে, যার নীতি ও অগ্রাধিকার নিউ ইয়র্ক সিটিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। তারা প্রতিটি ভুল ধরবে এবং প্রতিটি নেতিবাচক অর্থনৈতিক সূচক বা অপরাধের পরিসংখ্যানকে সামনে নিয়ে আসবে।
ট্রাম্প, নিশ্চিতভাবে মামদানির সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হবেন। নতুন মেয়রের জন্য কাজগুলো জটিল করার অনেক উপায় রয়েছে তার হাতে।
তবে সে যাই হোক, মামদানির রাজনৈতিক প্রতিভা এবং দক্ষতা তাকে এ পর্যন্ত এনে দিয়েছে যা মোটেই ছোট কৃতিত্ব নয়। তবে আগামী বছরের পরীক্ষাগুলো তার জন্য অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে তা বলাই বাহুল্য।
আগামী বছর ডেমোক্র্যাট পার্টি মিডটার্ম নির্বাচনের প্রার্থী নির্বাচন করবে। তখন দেখা যাবে পার্টিতে কি ধরনের মতবাদ এবং দৃষ্টিভঙ্গি প্রাধান্য পায়। নির্বাচনের সময় উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে এবং পার্টির ঐতিহ্যবাহী বিভাজন বা মতপার্থক্য আবারও সামনে আসতে পারে। যার সুযোগ নিতে পারে রিপাবলিকানরাও।
তবে মঙ্গলবার নির্বাচনে নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি এবং ভার্জিনিয়ায় ডেমোক্র্যাটদের জয় বলছে অর্থনীতি ভোটারদের প্রধান উদ্বেগ ছিল।
পার্টির মধ্যে বিভিন্ন মতামতের জন্য স্থান থাকা গুরুত্বপূর্ণ, এবং মামদানির বিজয় দেখিয়েছে যে শ্রমজীবী মানুষকে সেবা করার লক্ষ্যই তাদের একত্রিত করেছে।
