November 5, 2025
tbn24-20251105025602-3646-mamdani wins

আগামী ১ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করলে মামদানি হবেন এক শতাব্দীর বেশি সময়ের মধ্যে নিউ ইয়র্ক সিটির নবীনতম মেয়র।

নিউ ইয়র্ক সিটিতে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মেয়র পদে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জোরান মামদানি।

এর মধ্য দিয়ে উগান্ডায় জন্ম নেওয়া মামদানি হতে যাচ্ছেন নগরটির প্রথম মুসলিম মেয়র। তিনি স্থলাভিষিক্ত হবেন বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের।

৩৪ বছর বয়সী মামদানি হতে যাচ্ছেন সিটির কয়েক দশকের সবচেয়ে উদারপন্থি মেয়র। একই সঙ্গে তিনি হতে যাচ্ছেন দক্ষিণ এশিয়ার উত্তরাধিকার বহন করা ও আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া নিউ ইয়র্কের প্রথম নগরপিতা।

আগামী ১ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করলে মামদানি হবেন এক শতাব্দীর বেশি সময়ের মধ্যে নিউ ইয়র্ক সিটির নবীনতম মেয়র।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এপি জানায়, ৯০ শতাংশের মতো ভোট গণনা শেষে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুওমোর চেয়ে ৯ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন মামদানি।

১৯৬৯ সালের পর সর্বোচ্চ ভোট

নিউ ইয়র্ক সিটিতে মঙ্গলবারের নির্বাচনে ১৯৬৯ সালের পর সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে।

সিটির বোর্ড অব ইলেকশনস-বিওইর বরাতে রয়টার্স জানায়, এ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন দুই মিলিয়ন তথা ২০ লাখের বেশি ভোটার।

বহুল আলোচিত এ নির্বাচনে মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে শুরু হওয়া ভোটদান চলে রাত ৯টা নাগাদ। এর পর থেকে আনুষ্ঠানিক ফলের অপেক্ষায় ছিলেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জোরান মামদানি, স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুওমো ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার সমর্থকসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ।

বিওইর তথ্য অনুযায়ী, এ নির্বাচনে সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ ভোট পড়ে এক দশমিক সাত মিলিয়ন তথা ১৭ লাখের বেশি।

বেলা তিনটা নাগাদ সিটি নির্বাচনে ভোট দেন এক দশমিক চার মিলিয়ন তথা ১৪ লাখের মতো ভোটার।

বিগত নির্বাচনগুলোর মধ্যে ২০২১ সালের ভোটে এক দশমিক এক মিলিয়ন (১১ লাখ) ভোটার তাদের রায় দেন বলে জানায় বিওই।

সংস্থাটির ডেটা অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০০৫ সালে এক দশমিক তিন মিলিয়ন (১৩ লাখ) ছাড়িয়েছিল নিউ ইয়র্ক সিটি নির্বাচনে ভোটদানের সংখ্যা। সে বছর দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন মাইকেল ব্লুমবার্গ।

‘রাজনীতিতে নতুন দিন আনার সময় এখনই’

নিউ ইয়র্ক সিটিতে ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন বলে মঙ্গলবার সকালে মন্তব্য করেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মেয়র পদপ্রার্থী জোরান মামদানি।

ভোটদান শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।

কুইন্স বোরোর অ্যাস্টোরিয়ার কেন্দ্রে মঙ্গলবার ভোট দেন মামদানি।

সে অনুভূতি জানিয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘অ্যাস্টোরিয়ায় এ সুন্দর সকালে আমাদের শহর ও আমাদের ভবিষ্যতের জন্য আমি ভোট দিয়েছি। আমি আশা করি আপনারাও তাই করবেন।’

ভোটের পর উপস্থিত সবাইকে শুভ সকাল জানিয়ে মামদানি বলেন, ‘আজ ভোটের দিন। আমরা এক বছরের বেশি সময় ধরে দিনটির স্বপ্ন দেখছি।’

ওই সময় স্বেচ্ছাসেবীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই এক লাখের বেশি স্বেচ্ছাসেবীকে যারা আমাদের এ বিন্দুতে নিয়ে এসেছেন, যেখানে আমাদের সিটিতে ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছি আমরা।

‘অতীতের রাজনীতিকে বিদায় জানানোর দ্বারপ্রান্তে (আমরা), যে রাজনীতি আপনাদের তাই বলে, যা সে করতে পারে না…।’

রাজনীতিতে নতুন দিন আনার আহ্বান জানিয়ে ৩৪ বছর বয়সী এ প্রার্থী বলেন, ‘আমাদের রাজনীতিতে নতুন দিন আনার সময় এখনই এবং একটি আন্দোলনের অংশ হতে পারা সম্মান ও সুবিধার, যেটি এ দিনকে এগিয়ে আনতে প্রতিটি দিন লড়াই করেছে।’

বেড়ে ওঠা, রাজনীতি

নিউ ইয়র্ক সিটি নির্বাচনে চূড়ান্ত ভোটের আগে থেকেই বিশ্বজুড়ে আলোচনায় ছিলেন মামদানি। তিনি কে, কীভাবে তার রাজনীতিতে আসা এ তথ্যগুলো নিয়ে জানার আগ্রহ আছে অনেকের।

সে বাস্তবতায় টিবিএন স্পেশালে নিজের সম্বন্ধে মামদানি যে তথ্যগুলো জানিয়েছিলেন, তা তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

ওই অনুষ্ঠানে টিবিএনের সঞ্চালক হাবিব রহমান মামদানির কাছে তার সম্বন্ধে কিছু তথ্য জানতে চান।

জবাবে সমাজতন্ত্রী এ ডেমোক্র্যাট নিজের বেড়ে ওঠা নিয়ে বলেন, ‘আমার জন্ম পূর্ব আফ্রিকার (দেশ) উগান্ডার কাম্পালায়। আমি সাত বছর বয়সে নিউ ইয়র্ক সিটিতে আসি।

‘আমি এ শহরে (নিউ ইয়র্ক) বেড়ে উঠেছি। এটি সে শহর, যাকে আমি ভালোবাসি এবং এ শহরে আমি নাগরিকত্ব পেয়েছি; অনেক বছর আগে নয়।’

শিক্ষাজীবন নিয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মেয়র পদপ্রার্থী বলেন, ‘মিডল স্কুল সমাপনী শেষে ব্রঙ্কস হাই স্কুল অব সায়েন্সে যাই এবং মেইনের (স্টেইট) বোডুইন কলেজে যাওয়ার পর অবশেষে ফিরে আসি এবং আমি এমন কিছু কাজ করেছি, যেগুলো মূলত স্থানীয় রাজনীতি।’

রাজনৈতিক জীবন নিয়ে মামদানি বলেন,‘(নিউ ইয়র্কে) প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার সিটি কাউন্সিল সদস্যদের নির্বাচিত করার জন্য কাজ। (এতে সফল হতে) আমরা অনেক বছর আগে চেষ্টা করেছি এবং অবশেষে আমরা সফল হতে পেরেছি। ২০২১ সালে আমরা শাহানা হানিফ ও কৃষ্ণকে দেখেছি, তবে আমার কাজ আমাকে নিউ ইয়র্কের মুসলিম ডেমোক্র্যাটিক ক্লাবের সদস্য হওয়ার দিকে ধাবিত করেছে। আমি সেখানকার বোর্ড সদস্যও ছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘পরিশেষে আমি বন্ধকী সম্পত্তি দখল প্রতিরোধ হাউজিং কাউন্সিলর হই। আমি নিম্ন থেকে মধ্যম আয়ের বাড়ির মালিকদের সঙ্গে কাজ করেছি, যাদের বেশির ভাগ কুইন্স, জ্যাকসন হাইটস (কুইন্স বোরের একটি এলাকা) ও রিচমন্ড হিলের (কুইন্স বোরোর একটি এলাকা) দক্ষিণ এশিয়ার বাসিন্দা। তাদের বাড়িতে যেন তারা থাকতে পারেন, তা নিশ্চিতে কাজ করেছি।

‘২০২০ সালে গর্বিত ব্যক্তি হিসেবে স্টেইট অ্যাসেম্বলিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি; দক্ষিণ এশীয় পুরুষ হিসেবে নিউ ইয়র্ক সিটির যেকোনো অবস্থানে নির্বাচিত প্রথম ব্যক্তি এবং আমি নিউ ইয়র্ক সিটি অ্যাসেম্বলিতে কাজ করছি। আমি তৃতীয় মেয়াদে আছি এবং বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নির্বাচিত ব্যক্তি, প্রথম নির্বাচিত মুসলিম হিসেবে মেয়র পদে লড়ছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *