সেনাবাহিনী চায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। জনগণের প্রত্যাশিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে দেশের স্থিতিশীলতা আরো ভালো হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরো স্বাভাবিক হবে। সেনাবাহিনী তখন সেনানিবাসে ফিরে যেতে পারবে। আমরা তার দিকেই তাকিয়ে আছি। এসব কথা বলেছেন জেনারেল অফিসার কমান্ডিং, সদর দফতর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (জিওসি আর্টডক) লে. জেনারেল মো. মাইনুর রহমান।
গতকাল বুধবার সেনাসদরে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কিত আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সরকার এখন পর্যন্ত যেই রূপরেখা প্রণয়ন করেছে, দেশের জনগণের মতো সেনাবাহিনীও চায় সেই রূপরেখা অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এর ওপর ভিত্তি করে আমরা যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এখন সীমিত আকারে চলছে, নির্বাচনের সময় আমাদের কী করণীয় সেটিকে ফোকাস করেই আমরা প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছি।
লে. জেনারেল মো. মাইনুর রহমান বলেন, যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা গত ১৫ মাস দায়িত্ব পালন করেছি, তা একেবারেই সহজ ছিল না। বাংলাদেশ এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি প্রতিদিন হয় না। তাই আমরাও চাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হোক এবং আমরা সেনানিবাসে ফিরে যাই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেনাবাহিনীকে ঘিরে প্রচারিত বিভিন্ন গুজব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ১৫ মাস সেনাবাহিনী অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করেছে।
এ সময় কিছু স্বার্থান্বেষী চক্র সেনাবাহিনীর নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশে মিথ্যা ও সাজানো অপপ্রচার চালিয়েছে। আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে চাই, সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য সেনাবাহিনীর প্রধান ও সিনিয়র লিডারশিপের প্রতি শতভাগ অনুগত। যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন সেনাবাহিনী আরো ঐক্যবদ্ধ, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও ভ্রাতৃত্ববোধে দৃঢ়। মো. মাইনুর রহমান বলেন, এই সেনাবাহিনী দেশের জনগণের সেনাবাহিনী। তাই দেশের স্থিতিশীলতা ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় দায়িত্ব সেনাবাহিনী পালন করে যাবে। আমাদের যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এখন সীমিত আকারে চলছে তার মধ্যে নির্বাচনের সময় আমাদের কী করণীয় সেটিকে ফোকাসে রেখেই প্রশিক্ষণ করছি। প্রশিক্ষণের সঙ্গে একটি বিষয় সম্পর্কিত তা হলোÑ শান্তিকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব হলো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেয়া। আমরা বলে থাকি ‘উই ট্রেইন এজ উই ফাইট’।
গত ১৫ মাস সেনাবাহিনী ব্যারাকে বাইরে অবস্থান করছে উল্লেখ করে সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বা তার কিছুটা পরেও যদি সেনাবাহিনীকে বাইরে থাকতে হয় তাহলে আরো কিছুদিন বাইরে থাকতে হবে। এতে করে আমাদের প্রশিক্ষণ বিঘিœত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনের একটি দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন ঘোষণার পর সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দেওয়ান মোহাম্মদ মনজুর হোসেন বলেন, যখনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয় আসে তখনই নজরদারি করা হয়। সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্যসব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করে। নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন পেছানোর কথা শোনা যাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ মনজুর হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য সরকারের যে ইচ্ছা এবং গাইডলাইন দেয়া আছে এবং নির্বাচন কমিশন যে পরিপত্র প্রকাশ করবে সেই অনুযায়ী সেনাবাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে।
এসময় আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনজুর হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান দেখা করেছেন। কি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ থাকা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে সেই লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে সেনাবাহিনী বদ্ধপরিকর। সেনাবাহিনীকে যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে সহযোগিতা করার জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে, তখনই আমরা আমাদের সর্বাত্মক দিয়ে চেষ্টা করছি। নির্বাচনকালীন সময়ে আমরা ৯০ হাজার থেকে এক লাখ সদস্য মাঠপর্যায়ে মোতায়েন করব। যেটি এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। আমাদের পরিকল্পনায় আছে জেলা পর্যায়ে, উপজেলা পর্যায়েÑ এমনকি আসন-ভিত্তিক ক্যাম্প স্থাপন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করব। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হিসেবে সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন সবকিছু করার জন্য আমরা সদা প্রস্তুত থাকব।
বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে যাওয়া সেনাবাহিনীকে নিয়ে নানা অপপ্রচার চলছে দাবি করে মো. মাইনুর রহমান বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সেনাবাহিনী এখন আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ। যে দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়েছে, সেটি সেনাবাহিনী পালন করবে।
