বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সতর্কবার্তা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের সদস্য লর্ড অ্যালেক্স কার্লাইল। তিনি বলেছেন, অতীতের মতো বিতর্কিত নির্বাচন যেন আর না হয়, সে বিষয়ে সব পক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার বিচার চলমান যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রয়েছে, সেটিকে ‘আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে জরুরি সংস্কার’ প্রয়োজন বলেও মত দিয়েছেন তিনি।
৬ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) এক বিবৃতিতে লর্ড কার্লাইল বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। ২০২৪ সালের পর থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা একাধিক সংকট সৃষ্টি করেছে, যেগুলোর দ্রুত সমাধান প্রয়োজন।’
এই বিবৃতি এমন সময়ে এসেছে, যখন নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে জাতিসংঘের কারিগরি সহযোগিতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছে।
২০০৮ সালে বিপুল বিজয়ে ক্ষমতায় আসার পর টানা সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করে আওয়ামী লীগ। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে, এবং তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। তার শাসনামলে হওয়া তিনটি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে দুটি বিরোধী দলগুলোর বর্জনের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়, যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
লর্ড কার্লাইল বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে অতীতের ভুল যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রচেষ্টা নিতে হবে এবং স্বাধীন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে তা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের সমাজের সব অংশকেই এই প্রক্রিয়ার অংশ হতে হবে—গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্জাগরণ ও চেতনা পুনরুদ্ধারের স্বার্থে।’
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে আন্দোলন দমনে চালানো সহিংসতায় প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয় এবং আরও কয়েক হাজার আহত হন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে’ বলপ্রয়োগ করা হয়েছিল।
ওই সময় সংঘটিত ঘটনাগুলোর বিচারের জন্য বর্তমানে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইন সংশোধন করে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়ার পথও খুলে দিয়েছে।
লর্ড কার্লাইল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলছে, তবে এই আদালতকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে জরুরি সংস্কার প্রয়োজন। বিচার হতে হবে স্বচ্ছ, ন্যায়সংগত এবং সংবিধান ও আইনের প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলো এখন মারাত্মক চাপের মধ্যে রয়েছে। তাদের নিরাপত্তা রাষ্ট্র ও বিরোধী উভয় পক্ষের কাছ থেকেই নিশ্চিত করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যেও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে, তাই আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এখন অত্যন্ত জরুরি।’
