November 5, 2025
tbn24-20251105131728-7723-germany - 2025-11-05T191236.833

মামদানি তার পরিচয় ও নীতির ওপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন। বিরোধীরা তার পটভূমি বা রাজনীতি নিয়ে আক্রমণ করলেও তিনি তা পরিবর্তন করেননি।

এক বছর আগেও জোরান মামদানি ছিলেন প্রায় অচেনা একজন রাজনীতিক। কুইন্সের বাইরে খুব কম মানুষই তাকে চিনতেন।

অথচ আজ, ৩৪ বছর বয়সে এই ডেমোক্র্যাটিক আধুনিক রাজনীতির সবচেয়ে অবিশ্বাস্য উত্থানগুলোর একটি ঘটিয়েছেন। তিনি এক বছরের মধ্যে দুইবারের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়েছেন এবং সাধারণ নির্বাচনে কুমো ও রিপাবলিকান কার্টিস স্লিওয়া—উভয়ের বিপক্ষে ভূমিধস জয় পেয়েছেন।

একসময় তিনি ছিলেন, আবাসন অধিকার কর্মী, এমনকি ছিলেন র‍্যাপ শিল্পীও। আর এখন তিনি হতে চলেছেন নিউ ইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র, শহরের প্রথম দক্ষিণ এশীয় ও আফ্রিকান বংশোদ্ভূত নেতা, এবং এক শতাব্দীরও বেশি সময় পর সবচেয়ে তরুণ মেয়র।

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে যখন জোরান মামদানি তার প্রার্থিতা ঘোষণা করেন, তখন অনেক বিশ্লেষকই তাকে অপ্রাসঙ্গিক প্রার্থী বলে মনে করেছিলেন।

কেলেঙ্কারির পর গভর্নর পদ থেকে সরে দাঁড়ানো অ্যান্ড্রু কুওমোকে অনেকে ভাবছিলেন সহজেই রাজনীতিতে ফিরে এসে আবারও প্রভাব বিস্তার করবেন।

কিন্তু সব অনুমান উপেক্ষা করে মামদানি মনোযোগ দেন একেবারে সাধারণ মানুষের জীবনের বাস্তব সমস্যায়। আর সেটি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর নিউ ইয়র্কে ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার খরচ।

রাজনীতিতে আসার আগে মামদানি কুইন্সে গৃহহীনতা রোধে পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করতেন। যেখানে তিনি পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করতেন। এই কাজের অভিজ্ঞতাকেই তিনি তার রাজনৈতিক এজেন্ডার মূল অনুপ্রেরণা বলে মনে করেন।

তার প্রচারণার মূল প্রতিশ্রুতি ছিল সাশ্রয়ী আবাসন নিশ্চিত করা। তার প্রস্তাবনার মধ্যে ছিল, স্থিতিশীল অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়াটিয়াদের জন্য ভাড়া স্থগিত রাখা, নতুন সামাজিক আবাসন প্রকল্প তৈরি করা, এবং খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যক্তিগত বাড়িওয়ালা ও শহর পরিচালিত মুদি দোকানগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো।

এছাড়া, তিনি বিনামূল্যে গণপরিবহন, সর্বজনীন শিশু যত্ন, এবং ন্যূনতম ঘণ্টাপ্রতি মজুরি ৩০ ডলার করার প্রস্তাব দেন। এইসব উদ্যোগের অর্থায়নের জন্য তিনি কোটিপতি ও বড় কর্পোরেশনগুলোর উপর অতিরিক্ত কর আরোপের পরিকল্পনা করেন।

তার প্রচারণার কৌশলগুলোও তার নীতির মতোই ছিল ব্যতিক্রমী। অনেক সমর্থকই একে নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম সত্যিকারের ডিজিটাল প্রচারণা হিসেবে উল্লেখ করেন।

তার টিকটক ও ইনস্টাগ্রাম ভিডিওগুলো ছিল মজাদার, বহু ভাষায় তৈরি এবং শহরের রাস্তার সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত যা তাকে নতুন প্রজন্ম থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত জনপ্রিয় মুখে পরিণত করেছে।

তিনি ফুড কার্ট শ্রমিকদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় “হালাল-মুদ্রাস্ফীতি” শব্দটি চালু করেন, আবার ভাড়া স্থগিত করার পরিকল্পনাকে নাটকীয়ভাবে তুলে ধরতে পুরো পোশাক পরে কনি আইল্যান্ডের বরফঠান্ডা জলে ঝাঁপ দেন।

এছাড়া, তিনি স্প্যানিশ, বাংলা ও উর্দু ভাষায় একাধিক ভাইরাল ভিডিও তৈরি করেন যা তার প্রচারণাকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে।

মামদানি তার পরিচয় ও নীতির ওপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন। বিরোধীরা তার পটভূমি বা রাজনীতি নিয়ে আক্রমণ করলেও তিনি তা পরিবর্তন করেননি। ভারতীয়-আফ্রিকান বাবা-মায়ের সন্তান, কাম্পালায় জন্মগ্রহণ করে সাত বছর বয়সে নিউ ইয়র্কে আসা মামদানি অভিবাসী অধিকার এবং মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার।

তিনি গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, ইসরায়েল হওয়া উচিত সমান অধিকার সম্পন্ন রাষ্ট্র শুধুমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র নয়।

৩৪ বছর বয়সী মামদানি এখন ৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষ, ১১৬ বিলিয়ন ডলারের বাজেট, পুলিশি ও আবাসন সংকটসহ বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর পরিচালনার জন্য প্রস্তুত।

সমালোচকরা তার নীতি অবাস্তব মনে করেন। তার নীতি বাস্তবায়ন নিয়ে হয়তো সন্দিহান মামদানির কিছু সমর্থকও তবু বিজয় ভাষণে মামদানি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘এই শহরটিকে আপনার জন্য আগের দিনের চেয়ে ভালো করে তোলার উদ্দেশ্য নিয়েই আমি প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *