November 11, 2025

সৌদি আরবের একটি ফিটনেস স্টুডিওতে আরবি সুরের তালে দুলছেন একদল নারী। তারা অনুশীলন করছেন বেলি ড্যান্সের, যা সমাজে এখনও বিতর্কিত ও গোপনীয়তার মধ্যে রক্ষিত। অংশগ্রহণকারীরা কেউই আসল নাম প্রকাশ করতে চাননি, কেউ মুখ দেখাতে রাজি হননি। এটি স্পষ্ট করে দেয় যে, প্রাচীন এই নৃত্যশৈলীকে ঘিরে দেশটিতে এখনো প্রবল সামাজিক কুসংস্কার বিদ্যমান।

আরব সংস্কৃতিতে বেলি ড্যান্স একসময় ছিল বিনোদন ও শিল্পচর্চার অংশ। মিশরীয় সিনেমাতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিয়েছিল। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারীরা এটিকে শরীরচর্চা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির উপায় হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু সৌদি আরবে এখনও এটি ট্যাবু। এমনকি সম্পূর্ণ নারীদের জন্য নির্ধারিত বন্ধ দরজার ভেতরেও এই আয়োজনকে অনেকেই বিতর্কিত মনে করেন।

একজন অংশগ্রহণকারী বলেন, “আমরা এক রক্ষণশীল সমাজে বাস করি। বেলি ড্যান্সকে অনেকেই যৌনতার সঙ্গে যুক্ত করে দেখেন। কোনো পরিবার বা স্বামী চাইবেন না, অন্য পুরুষরা তার স্ত্রী বা মেয়েকে এমন ভঙ্গিতে দেখুক।” রিয়াদে এএফপির সাংবাদিকদের ক্লাসে প্রবেশাধিকার পেতে মাসের পর মাস সময় লেগেছে। অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় কঠোরভাবে গোপন রাখা হয়। বেশিরভাগ নারী জানিয়েছেন, পরিবার বা বন্ধু জানলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

নারীরা প্রধানত ভয় পান—তাদের ছবি বা ভিডিও যেন প্রকাশ না হয়। তাই ফোন ব্যবহারে রয়েছে কঠোর নিয়ন্ত্রণ। একজন বলেন, “কেউ গোপনে ভিডিও করতে পারে—এই ভয় সব সময় কাজ করে।” অন্যজন জানান, বাবাকে কখনোই বলা হয় না যে তিনি বেলি ড্যান্স উপভোগ করেন।

সৌদি আরব সুন্নি মতাদর্শভিত্তিক ওয়াহাবি ইসলামের জন্মস্থান। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে কিছু সংস্কার হয়েছে—নারীরা গাড়ি চালাতে পারেন, পর্দার বাধ্যবাধকতাও কিছুটা শিথিল হয়েছে। তবে সাংস্কৃতিক মানসিকতায় পরিবর্তন পুরোপুরি হয়নি। বেলি ড্যান্সকে এখনও ‘অতি ইঙ্গিতপূর্ণ’ মনে করা হয়, উজ্জ্বল পোশাক ও অলংকারের কারণে কেউ কেউ এটিকে বিতর্কিত বলেও বিবেচনা করেন।

তবে রিয়াদের এই ক্লাসে অংশ নেওয়া নারীরা জানান, তারা কেবল শরীরচর্চা ও মানসিক প্রশান্তির জন্য নাচেন। প্রশিক্ষকরা নিজেদের ‘নৃত্যশিল্পী’ নয়, ‘কোচ’ হিসেবে পরিচয় দেন। একজন প্রশিক্ষক ‘ওনি’ বলেন, “নাচকে আমরা খেলাধুলার মতো করেছি। এটি নারীদের মধ্যে এক ধরনের ঐক্য ও শক্তির অনুভূতি জাগায়।”

রিয়াদে নারীদের জন্য যোগব্যায়াম, বক্সিং ও বেলি ড্যান্সের ক্লাস বেড়ে গেছে। তবে জিমগুলো এখনও পুরুষ ও নারীর জন্য পৃথক। এই নাচ কেবল আনন্দ নয়, বরং নারীদের আত্মবিশ্বাস ও ক্ষমতায়নের একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *