
গাজার ত্রাণ আটকানোয় ইসরায়েলকে তিরস্কার করলো জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত (আইসিজে)। আইসিজে বলেছে, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবাহে বাধা দিয়ে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করেছে। বুধবার (২২ অক্টোবর) দেওয়া আদালতের আইনি মতামতে বলা হয়, ‘দখলদার শক্তি’ হিসেবে ইসরায়েলের দায়িত্ব জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করা এবং গাজার মানুষের কাছে জরুরি ত্রাণ পৌঁছানো নিশ্চিত করা।
বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি রায়ের ব্যাখ্যায় বলেন, কোনো দখলদার শক্তি নিরাপত্তার অজুহাতে মানবিক কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ স্থগিত রাখতে পারে না। তিনি আরও জানান, গাজার জনগণ যথাযথভাবে ত্রাণসাহায্য পাচ্ছে না, এ বিষয়ে আদালত নিশ্চিত হয়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অনুরোধে এই রায়টি দেওয়া হয়েছে, যা ইসরায়েলের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়াতে পারে। তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়।
রায়ে আরও বলা হয়, জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ নিরপেক্ষতা লঙ্ঘন করেনি। আদালত স্পষ্টভাবে জানায়, ইউএনআরডব্লিউএর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
ইসরায়েল এর আগে অভিযোগ করেছিল, ইউএনআরডব্লিউএর এক হাজারের বেশি কর্মী হামাসের সঙ্গে যুক্ত এবং তাদের স্কুলে ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব শেখানো হয়। তবে জাতিসংঘের নিজস্ব তদন্তে দেখা যায়, মাত্র নয়জন কর্মীর হামাসের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকতে পারে, যা গোটা সংস্থাকে দায়ী করার মতো নয়।
বিচারপতি ইউজি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানে জাতিসংঘ, বিশেষ করে ইউএনআরডব্লিউএ, অপরিহার্য ভূমিকা রাখছে। ইসরায়েলকে এই প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নাগরিক জনগোষ্ঠীকে অনাহারে রাখাকে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ।
ইসরায়েল জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতের এই রায়কে ‘রাজনৈতিক দলিল’ বলে অভিহিত করেছে। জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, দ্য হেগ ইচ্ছাকৃতভাবে হামাসের অপরাধ উপেক্ষা করছে এবং ইউএনআরডব্লিউএ’কে সন্ত্রাসের কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করছে না।
এর আগে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে আইসিজে অভূতপূর্বভাবে রায় দিয়েছিল যে, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের উপস্থিতি অবৈধ। তখন আদালত ইসরায়েলকে দখলদারত্ব বন্ধ করে ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছিল।
এছাড়া একই বছর আদালত গাজার রাফা শহরে সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল।
ইসরায়েল যদিও আইসিসিকে স্বীকৃতি দেয় না, তবে জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে আইসিজের বিধান মানতে বাধ্য।