December 14, 2025, 10:37 am

সঠিক চিকিৎসায় সুস্থ জীবন

Reporter Name
  • Update Time : Saturday, December 13, 2025
  • 19 Time View

পুরুষের মূত্রথলির ঠিক নিচে বৃহদন্ত্রের (Rectum) সামনে ও মূত্রনালির (Urethra) ওপরের অংশকে ঘিরে আখরোটের মতো একটি মাংশপিণ্ড থাকে, যার নাম প্রোস্টেট গ্রন্থি। প্রতিটি স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহে এটি বিদ্যমান। বীর্য তৈরি, শুক্রাণুর পরিচর্যা ও বীর্য বের হতে সাহায্য করে এটি। বয়সের সঙ্গে এর আকৃতি বৃদ্ধি পায়।

পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষদের মধ্যে ৬০ শতাংশেরই স্ফীত প্রোস্টেট গ্রন্থি রয়েছে। বয়স ৮০ পেরোলে এর হার ৯০ শতাংশ। প্রোস্টেট বড় হলেই ভীত হওয়ার প্রয়োজন নেই। ক্যান্সার শনাক্ত না হলে এটি দেহের জন্য হুমকি নয় (Benign)।
কেন বাড়ে প্রোস্টেট

এর সঠিক কারণ এখনো অজানা। ধারণা করা হয়, পুরুষ হরমোনের (Testosterone) তারতম্য এর প্রধান কারণ। বংশগত কারণেও বাড়তে পারে। দৈনন্দিন জীবনযাপনের রুটিনও হতে পারে কারণ।

নিয়মিত কায়িক শ্রম বা ব্যয়াম করলে প্রোস্টেট স্ফীতির ঝুঁকি অনেকটাই কমে।

উপসর্গ

♦ ঘন ঘন প্রস্রাব, কমপক্ষে দিনে ৮-১০ বার।

♦ প্রস্রাবের বেগ হলে ধরে রাখার অক্ষমতা।

♦ প্রস্রাব শুরু করতে দেরি হওয়া, সরু নালায় প্রস্রাব হওয়া অথবা থেমে থেমে হওয়া, চেপে চেপে প্রস্রাব বের করার প্রয়োজনীয়তা।

♦ প্রস্রাবের বেগ শেষেও কিছুক্ষণ ফোঁটায় ফোঁটায় প্রস্রাব বের হওয়া।

♦ রাতে কয়েকবার প্রস্রাব করা ইত্যাদি।

জটিলতা

প্রস্রাব আটকে থাকায় প্রস্রাবের নালি বা ব্লাডারে প্রদাহ হতে পারে। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে কিডনির কার্যক্ষমতাও কমতে পারে। প্রস্রাব পুরোপুরি আটকিয়ে যেতে পারে (Acute Urinary retention)। প্রস্রাবে রক্তপাত হতে পারে। মূত্রথলিতে পাথর হয়ে যেতে পারে। সর্বোপরি কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হতে পারে (End stage renal diseases)।

রোগ নির্ণয়

উপসর্গ অনুযায়ী প্রোস্টেট স্ফীতি সন্দেহ হলে চিকিৎসক আঙুলের সাহায্যে (Digital rectal examination প্রোস্টেট পরীক্ষা করে দেখতে পারেন সেটি স্ফীত কি না, প্রদাহ আছে কি না অথবা ক্যান্সারের কোনো উপসর্গ রয়েছে কি না। আলট্রাসনোগ্রাম করে প্রোস্টেট ও মূত্রথলির আকার, কিডনির সার্বিক পরিস্থিতি এবং কিডনি ফুলে গেছে কি না বোঝা যায়। এ ছাড়া জানা যায় কিডনিতে পাথর অথবা টিউমারের উপস্থিতি রয়েছে কি না। ইউরোফ্লোমেটির (uroflowmetry) মাধ্যমে রোগীর কতটুকু প্রস্রাব হয়, কেমন ধারায় হয় এবং কত সময় ধরে বেগ থাকে, সেটি বের করা যায়। এ ছাড়া মূত্র পরীক্ষা (Urine RME), রক্তে ক্রিয়োটেনিনের মাত্রা (creatinine) এবং পিএসএ পরীক্ষা করা হয়। প্রয়োজনে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে অতি সূক্ষ্ম যন্ত্র ঢুকিয়ে মূত্রনালি, প্রোস্টেট ও মূত্রনালি দেখা (urethrocystoscopy) হয়।

চিকিৎসা

♦ প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করে চিকিৎসা করা হয়। ঠাণ্ডা পানীয়, অ্যালকোহল, ক্যাফেইন (চা, কফি, কোলা) এবং বিকল্প মিষ্টি (Artificial Sweeteners) পরিহার করা।

♦ রাতে কম পানি খাওয়া, প্রস্রাব করে লম্বা ভ্রমণে বের হওয়া এবং বেশিক্ষণ প্রস্রাব ধরে না রাখা।

♦ প্রস্রাব করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার প্রস্রাব করা।

♦ বৃদ্ধরা অনেক ধরনের ওষুধ গ্রহণ করেন, যা এসব উপসর্গ বাড়াতে পারে; যেমন—Antidepressant, Decongestant, Antidiabetics, Antihistamine ইত্যাদি।

♦ প্রস্রাব লিক হলে বাড়তি প্যাড পরে নেওয়া। যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, তাঁদের সবজি ও ফলমূল বেশি খাওয়া।

♦ কিছু ব্যায়াম/মেডিটেশন (relaxation/muscle exercise/pelvic floor exercise) করা যেতে পারে।

♦ আলফা ব্লকার জাতীয় ওষুধ প্রোস্টেট ও মূত্রথলির মুখের মাংসপেশিকে শিথিল করে এবং প্রস্রাব করতে সহায়তা করে। আলফা রিডাকটেজ ইনহিবিটর প্রোস্টেট গ্রন্থির স্ফীতি কমিয়ে সেটির আকৃতি কমাতে সহায়ক। প্রয়োজনে দুই ধরনের ওষুধই সেবনের নির্দেশনা দেবেন চিকিৎসক। হোমিওপ্যাথি, আকুপাংচার এবং ভেষজজাতীয় মেডিসিন পদ্ধতি প্রচলিত আছে, যার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

♦ অ্যাডভান্সড স্টেজে ইউরোলজিস্টের পরামর্শে অপারেশন করা যেতে পারে। এর নাম টিইউআরপি (TURP)। মাত্র দু-তিন দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। যাঁদের হৃদরোগ আছে, তাঁদের জন্য Saline TURP/Laser দিয়ে অপারেশন করা হয়। এ ছাড়া Water ablation, prostatic urethral lift ইত্যাদি অপারেশন আছে, যা কিছু দেশে করা হচ্ছে।

মনে রাখতে হবে, বয়স বাড়লে প্রোস্টেট বাড়বেই। উপসর্গ দেখা দিলেই ভীত হবেন না। তবে দ্রুত ইউরোলজিস্টের পরামর্শে চিকিৎসা নিন, অবহেলা করা যাবে না।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © dainikkhobor.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com