বাংলাদেশের করোনা রোধে ৫ টি ভুল

 
বাংলাদেশের ৫ টি ভুল;
• বিশ্বে করোনা ভাইরাসের ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই আমাদের সজাগ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। সে সময় এয়ারপোর্ট লকডাউন করে ফেললে বা, আগত যাত্রীদের কমপ্লিট আইসোলেশনে নিয়ে ফেললে আজকে পুরো দেশকে লকডাউনে আনার কথা ভাবা লাগত না। সেটা তো আমরা করিই নি, বরং উল্টো করোনা ভাইরাসকে আমরা আন্ডারেস্টিমেট করেছি, তাচ্ছিল্য করেছি। 
 
মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তো বলেও ফেলেছিলেন ‘আওয়ামীলীগ সরকার করোনার থেকেও শক্তিশালী’ (পাতি মন্ত্রীদের করোনাকে মামুলী জ্বর সর্দির সাথে তুলনা করে সেই তাছিল্য করা কথাগুলো আর নাই বললাম) 
 
 
• তাচ্ছিল্যের পরপরই দ্বিতীয় ভুল যেটা হয়েছে সেটা হলো ফলোআপ ফেইলিউর এবং গাউডলাইনের অভাব। যেমন, আমরা এই ‘লকডাউন’ ‘আইসোলেশান’ আর ‘কোয়ারেন্টিন’ এই ৩ টা জিনিস গুলিয়ে ফেলেছি। কোনটার মানে সঠিকভাবে কি, সেটা আমি শিওর আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেও জানেন না (উনাকে একটু পরে ধরছি, এখন না)। 
 
আমাদের সরকার থেকে প্রোপার গাউডলাইন আসেনি এই ৩টা টার্ম নিয়ে। আজকেও সরকারের ওয়েবসাইটে ঢুকলে দেখা যাবে সেখানে দেখাচ্ছে সরকার ৬৫ হাজার ১৫৪ জন বিদেশ ফেরতকে হোম কোয়ারেন্টিনে রেখেছে। এদের মনিটর করা হয়েছে? আই স্ট্রংলি ডাউট। 
 
যদি হয়ে থাকত তাহলে IEDCR এর প্রতিদিনের সংবাদ সম্মেলনের সময় বলা উচিত ছিল, ‘অমুক যাকে আমরা তমুক জেলায় বা এলাকায় তার নিজ বাসভবনে হোম কোয়ারেন্টিনে রেখেছিলাম আজকে টেস্টে তার করোনা পজিটিভ এসেছে’... তা কিন্তু হচ্ছে না। সুতরাং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেগ্লিজেন্সি এখানে স্পষ্টত
 
• ভুলে ভরা ফলোআপ ইস্যুর পরের প্রবলেম হলো এক্সিকিউশানে প্রবলেম। আজ ৭ দিন হতে চলল আর্মি নামানো হয়েছে সারা দেশে সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং মেইন্টেইন করার জন্য কিন্তু তারপরেও তাহলে আজ ভাইরাসের কমিউনিটি স্প্রেড কিভাবে হচ্ছে? নারায়ণগঞ্জের কথা বা, মিরপুরের কথাই ধরি (যে যায়গাগুলোকে এখন করোনা ভাইরাসের হটস্পট বলা হচ্ছে) সেখানে গত ৭ দিন আর্মি কি করেছে? 
 
পোঁ পোঁ করে শুধু টহল দিয়েছে? এটা কি আর্মির ফেইলিউর নাকি প্রশাসন থেকে সঠিক গাউডলাইন আর্মিকে দেয়া হয়নি... কোনটা? আর্মির কাছে কি তার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার কোন বাসায় কোন বিদেশ ফেরত কোয়ারেন্টিনে আছে সেই লিস্টটা ছিল? আই স্ট্রংলি ডাউট... আর যদি বলেন ছিল তাহলে স্প্রেড কেমনে হলো? হিসাব মিলায়ে দেন। রোগীর হিসাব না... 
 
আপনাদের দায়িত্বের হিসাব
 
• চতুর্থ ভুলটা হলো সোশ্যাল ডিসটেন্স জিনিসটা আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে আনতে পারিনি। আজকে দেখেন সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আমরা সবাই আজ করোনা বিশেষজ্ঞ... গরম পানি মুখে নিয়ে বসে থাকা থেকে শুরু করে বিসিজির টিকা থাকলে করোনা হয় না ইত্যাদি আউল ফাউল খবর একটু রিসার্চ না করে এই আমরাই প্রচার করেছি 
 
এই আমরাই একটুও খোঁজ খবর না নিয়ে ভাইরাল করে রিলাক্সড মুডে চলে এসেছি সেই নাম পরিচয়হীন একজনকে যখন তাকে চিবিয়ে চিবিয়ে বলতে শুনেছি ‘২৩ ডিগ্রী তাপমাত্রায় করোনা মরে যায়’ বা, ‘কিশোর তরুণদের ভয়ের কিচ্ছু নেই’... আজকে উনি কোথায়?
 
 
শুধু উনার কথা বলছি না, আজকেও হোমপেইজে দেখা যায় বিভিন্ন মফঃস্বলের ওয়াজে, হুজুরেরা বিভিন্ন যুক্তি দিচ্ছে মাস্ক না পরার পক্ষে, সবকিছু উপেক্ষা করে মসজিদে যাওয়ার পক্ষে বা, ভাইরাসকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে ইসলামের বন্ধু হিসেবে। এগুলো এই আমরাই শেয়ার দিচ্ছি। ওদিকে হোম মিনিস্ট্রি থেকে এদের বিরুদ্ধে কেন এখনও কোন ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না... গুজব আইন তো আপনাদের আছেই। সেটা কবে ব্যবহারের জন্য!
 
 
• সর্বশেষ প্রবলেমটা হলো আমাদের পলিসি মেকারদের সমন্বয়ে। আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই আজ স্বীকার করেছেন যে উনি ন্যাশনাল ডিজাস্টার কমিটির চেয়ারম্যান হওয়া সত্ত্বেও উনাকে কেউ কিছুই জানান না। কবে গার্মেন্টস খুলবে বা, মসজিদ কমিটিকে কি উপদেশ দেয়া হবে এগুলো উনাকে না জানিয়েই হচ্ছে। সুতরাং এটা স্পষ্টত যে পলিসি লেভেলে কোন সিঙ্ক্রনাইজেশন নেই।
 
 যে যার মত চলছে। যেমন, বিজিএমইএ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তার মত আবার তার মত সে নিজের সিদ্ধান্তই আবার চেইঞ্জও করছে। একটা ন্যাশনাল ডিজাস্টারের সময় পলিসি ডিজাস্টার কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় আর এক্সাক্টলি এটাই আমাদের হচ্ছে। 
 
 
আজকে সকালে আমাদের পিএম ঘোষণা দিয়েছেন দরকারে বিদেশ থেকে ডাক্তার আর নার্স আনা হবে। আমি প্রচন্ড খুশি হয়েছি উনার এই মন মানসিকতা দেখে। এটলিস্ট উনি বুঝতে পেরেছেন যে আশেপাশে কাজের লোক না পেলে বাইরে থেকে রিক্রুট করা উচিত
 
এখন শুধু সময়ের দাবী, উনার মাথায় ঢুকুক এদেশে এখন পলিসি বানানো, সেটা প্রোপারলি এক্সিকিউট এবং ফলোআপ করার জন্য কিছু মন্ত্রী মিনিস্টারও বাইরের দেশ থেকে রিক্রুট করার সময় এখনই... এই মুহূর্তেই এসেছে
নবীনতর পূর্বতন