পুতিনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কারা এবং যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব কাদের ওপর?

 


 

ভ্লাদিমির পুতিনকে দেখলে একজন নিঃসঙ্গ মানুষ বলে মনে হয়। তিনি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে এমন ঝুঁকিপূর্ণ একটি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছেন, যা তার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে।

প্রেসিডেন্ট পুতিনকে নিজের একান্ত ঘনিষ্ঠ মানুষদের সঙ্গে সাম্প্রতিক দুটি বৈঠকে যেভাবে দেখা গেছে, সেরকম বিচ্ছিন্ন অবস্থায় তাকে দেখা যাওয়ার ঘটনা বেশ বিরল। ছবিতে দেখা যায়, তিনি তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের থেকে অনেক দূরত্বে বসে আছেন।

কমান্ডার ইন চীফ বা সর্বোচ্চ অধিনায়ক হিসাবে, যেকোনো ধরণের যুদ্ধাভিযানের চূড়ান্ত দায়িত্ব তার উপরেই বর্তায়। তবে তিনি এক্ষেত্রে সবসময় তার অত্যন্ত অনুগত কিছু লোকজনের উপর নির্ভর করেন, যাদের মধ্যে অনেকেই রাশিয়ার নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থায় তাদের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।

প্রশ্ন হল, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার মেয়াদকালের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তগুলোতে কারা তাকে পরামর্শ দিচ্ছে?

 

যদি এমন কেউ থাকেন, তবে তাদের মধ্যে রয়েছেন দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন সের্গেই শোইগু, যিনি ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ এবং পশ্চিমাদের তথাকথিত সামরিক হুমকি থেকে রাশিয়াকে রক্ষা করার জন্য এই লড়াই দরকার বলে পুতিনের কথারই পুনরাবৃত্তি করে গেছেন তোতাপাখির মতো।

তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের এতটাই ঘনিষ্ঠ যে, তার সঙ্গে শিকার করতে এবং মাছ ধরতে সঙ্গী হিসেবে সাইবেরিয়ায় যান, এবং তাকে একসময় পুতিনের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসাবে দেখা হয়েছিল।

কিন্তু এই অসাধারণ ছবিতে দীর্ঘ টেবিলের আরেক প্রান্তে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানের পাশে বেকায়দা ভঙ্গিতে বসে থাকা তার চেহারার দিকে তাকান। এতদূর থেকে তিনি আসলে প্রেসিডেন্ট পুতিনের কানে কতোটা কথা পৌঁছাতে পারছেন, সে প্রশ্ন আপনার মনে জাগতে পারে।

এই ছবিটি তোলা হয় ইউক্রেনে তিন দিনের মাথায় রাশিয়ার সামরিক অভিযান যখন অপ্রত্যাশিত তীব্র প্রতিরোধের মুখে রীতিমত হিমসিম খাচ্ছে, রুশদের মনোবল যখন বেশ দুর্বল।

"শোইগুর তো কুচকাওয়াজ করে কিয়েভে যাওয়ার কথা, তিনি রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং এই লড়াইয়ে তার জয়ী হওয়ার কথা ছিল", বলছিলেন সমর বিশেষজ্ঞ ভেরা মিরোনোভা।

২০১৪ সালে সামরিক অভিযান চালিয়ে ক্রাইমিয়া দখলের সাফল্যের কৃতিত্ব তাকে দেয়া হয়।

তিনি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউর দায়িত্বেও ছিলেন। নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগ করে বিষক্রিয়ার দুটি ঘটনার জন্যও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে - যুক্তরাজ্যের সলসবারিতে ২০১৮ সালের ভয়াবহ হামলা এবং ২০২০ সালে সাইবেরিয়ায় বিরোধী নেতা অ্যালেক্সই নাভালনির উপর প্রায়-প্রাণঘাতী হামলার পেছনেও ছিল তার নাম।

বড় করে দেখলে ছবিটার অবস্থা আরও খারাপ। "তাদের দেখে মনে হচ্ছে কেউ মারা গেছেন - যেন তারা কোন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আছেন," মিস মিরোনোভা বলেন।

ছবিতে দেখে মনে হচ্ছে তিনি বেশ বেকায়দা অবস্থায় আছেন, তবে রুশ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং লেখক আন্দ্রেই সোলদাটভ বিশ্বাস করেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনকে যারা পরামর্শ দেন তাদের মধ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোগুই এখনও সবচেয়ে প্রভাবশালী একজন।

"শোইগু শুধুমাত্র সামরিক বাহিনীর দায়িত্বে নন, তিনি আংশিকভাবে মতাদর্শের দায়িত্বেও রয়েছেন - এবং রাশিয়ায় মতাদর্শ মানে মূলত দেশটির ইতিহাস এবং তিনি এই ইতিহাসের বয়ানটা ঠিক কী হবে, সেটি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছেন।"

চিফ অফ স্টাফ হিসাবে, ইউক্রেন আক্রমণ করা এবং দ্রুত কাজটি সম্পন্ন করা তার কাজ হলেও সেই দায়িত্ব তিনি ঠিকমত পালন করতে পারেননি।

১৯৯৯ সালের চেচেন যুদ্ধে সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়ার পর থেকেই তিনি ভ্লাদিমির পুতিনের সামরিক অভিযানে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে আসছেন। তিনি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান পরিকল্পনায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় ছিলেন। গত মাসে বেলারুসে সামরিক মহড়ার তত্ত্বাবধানেও ছিলেন তিনি।

রাশিয়া বিশেষজ্ঞ মার্ক গ্যালিওত্তি তাকে "রাশভারী, মারকুটে" স্বভাবের বলে বর্ণনা করেছেন। জেনারেল গেরাসিমভও ক্রাইমিয়া দখলের সামরিক অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

কোন কোন খবরে বলা হচ্ছে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুতেই যেভাবে হোঁচট খেয়েছে এবং সৈন্যদের মনোবল যেভাবে দমে গেছে, সেকারণে তাকে মূল দায়িত্ব থেকে কিছুটা সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

কিন্তু আন্দ্রেই সোলদাটভ মনে করেন যারা এরকম কিছু দেখতে চান,এটা তাদের কথা। " পুতিনের একার পক্ষে তো প্রতিটি রাস্তা এবং প্রতিটি ব্যাটালিয়ন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না এবং জেনারেল গেরাসিমভ সেই ভূমিকাটি পালন করেন।"

"প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়তো সামরিক ইউনিফর্ম পরতে পছন্দ করেন, কিন্তু তার আসলে কোন সামরিক প্রশিক্ষণ নেই। এজন্য তাকে পেশাদার সেনা অফিসারদের উপর নির্ভর করতে হয়", বলছেন মিস্টার সোলদাটভ।

ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডনের রাশিয়ান রাজনীতি বিষয়ক সহযোগী অধ্যাপক বেন নোবেল বলেছেন, "পাত্রুশেভ হলেন কট্টরপন্থীদের মধ্যেও সবচেয়ে কট্টর, যিনি মনে করেন, পশ্চিমারা বহু বছর ধরে রাশিয়াকে বাগে আনার চেষ্টা করছে।"

তিনি পুতিনের তিন বিশ্বস্ত মানুষের একজন, যারা ১৯৭০ এর দশকে সেন্ট পিটার্সবার্গের সময় হতে তার সাথে কাজ করেছেন, যখন রাশিয়ার এই দ্বিতীয় শহরটি লেনিনগ্রাদ নামে পরিচিত ছিল।

অন্য দুই নেতা হলেন সিকিউরিটি সার্ভিসের প্রধান আলেকজান্ডার বোর্টনিকভ এবং বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান সের্গেই নারিশকিন। প্রেসিডেন্টের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বৃত্তের ভেতরে থাকা সবাই সিলোভিকি বা বাস্তবায়নকারী হিসাবে পরিচিত, তবে এই তিনজন আরও বেশি ঘনিষ্ঠ।

প্রেসিডেন্টের উপর নিকোলাই পাত্রুশেভের মতো প্রভাব খুব কম মানুষই রাখেন। তিনি কমিউনিস্ট যুগে তার সাথে তৎকালীন কেজিবি-তে কাজ করেছিলেন। পরে ১৯৯৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নতুন সংস্থা এফএসবি-এর প্রধান হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

ইউক্রেনে আক্রমণের তিন দিন আগে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সেই উদ্ভট বৈঠকে মিস্টার পাত্রুশেভই বলেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের "প্রধান লক্ষ্য" রাশিয়াকে ভেঙে ফেলা।

ওই অসাধারণ নাটকীয় বৈঠকে প্রেসিডেন্টকে একটি ডেস্কের পিছনে বসে তার পারিষদবর্গের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। সেখানে তার নিরাপত্তা বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তারা একের পর এক এসে ডায়াসের সামনে দাঁড়িয়ে ইউক্রেনে রাশিয়ান-সমর্থিত বিদ্রোহীদের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করছিলেন।

নিকোলাই পাত্রুশেভ ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। বেন নোবেল বলেছেন, "তিনিই সেদিন যুদ্ধের বড় হুংকারটা দিয়েছিলেন এবং এমন একটি ধারণা রয়েছে যে ওই কারণেই পুতিন আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন"।

ক্রেমলিনের পর্যবেক্ষকরা বলেছেন যে প্রেসিডেন্ট অন্য যে কোনও উৎসের চেয়ে সিকিউরিটি সার্ভিস থেকে পাওয়া তথ্যের উপর বেশি বিশ্বাস করেন এবং আলেকজান্ডার বোর্টনিকভকে পুতিনের অভ্যন্তরীণ বৃত্তের অংশ হিসাবে দেখা হয়।

তিনি লেনিনগ্রাদ কেজিবি থেকে আসা আরেক পুরানো কর্মকর্তা।

নিকোলাই পাত্রুশেভ এফএসবি থেকে সরে যাওয়ার পর তিনি এর স্থলাভিষিক্ত হয়ে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।

তারা দুই জনই প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি বলে পরিচিত, কিন্তু বেন নোবেল উল্লেখ করেছেন: "কে আসলে বেশি প্রভাবশালী, কে আসল সিদ্ধান্তটা দিচ্ছে, সেটা আসলে নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন।"

অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপরও এফএসবি-এর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে, এমনকি তাদের নিজস্ব বিশেষ বাহিনীও রয়েছে।

বিশ্লেষক আন্দ্রেই সোলদাটভ মনে করেন, "তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেও অন্যদের মতো তিনি রাশিয়ান নেতাকে চ্যালেঞ্জ করে পরামর্শ দেয়ার অবস্থানে নেই।"

পুরানো লেনিনগ্রাদের ওই তিন জনের বাইরে, সের্গেই নারিশকিন তার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় প্রেসিডেন্টের সাথেই ছিলেন।

কিন্তু রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক চলাকালে যখন তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে প্রসঙ্গান্তরে চলে যাচ্ছিলেন, তখন পুতিন তাকে যেভাবে অপদস্ত করেন, সেটার তাহলে কী অর্থ?

প্রেসিডেন্ট পুতিন যখন পরিস্থিতি সম্পর্কে তার মূল্যায়নের কথা জানতে চাইলেন, গোয়েন্দা প্রধান তখন আমতা আমতা করছিলেন। তখন প্রেসিডেন্ট তাকে এই বলে ধমকে দেন যে 'এখানে আমরা তো ওই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি না।"

দীর্ঘ বৈঠকটির অল্প কিছু অংশই সম্পাদনা করে টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে। কাজেই এটা স্পষ্ট যে, তার বিব্রতকর পরিস্থিতি বিরাট সংখ্যাক টেলিভিশন দর্শক দেখুক, ক্রেমলিন সেটাই চেয়েছে।

বেন নোবেল বিবিসিকে বলেছেন, "এটা অবাক করা বিষয়। তিনি অবিশ্বাস্য রকম ঠান্ডা প্রকৃতির মানুষ। তাই মানুষের মনে প্রশ্ন, এখানে কী হচ্ছে।"

মার্ক গ্যালিওত্তি পুরো অনুষ্ঠানের বিষাক্ত পরিবেশ দেখে হতবাক হয়েছেন।

তবে আন্দ্রেই সোলদাটভ মনে করেন যে তিনি এটির প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করছেন: "পুতিন তার ঘনিষ্ঠ গণ্ডির ভেতরে থাকা মানুষের সাথে গেম খেলতে পছন্দ করেন, এবং তাকে সেখানে [নারিশকিন] বোকা বানানো হয়েছে।"

সের্গেই নারিশকিন বহু দশক ধরে প্রেসিডেন্ট পুতিনের ছায়াসঙ্গী। ১৯৯০ এর দশকে সেন্ট পিটার্সবার্গে, তারপর ২০০৪ সালে মিস্টার পুতিনের অফিসে এবং অবশেষে পার্লামেন্টের স্পিকার হিসেবে।

তবে তিনি রাশিয়ান হিস্টোরিক্যাল সোসাইটির প্রধান এবং সোলদাটভের দৃষ্টিতে, তিনি প্রেসিডেন্টের প্রতিটি কাজের পেছনে একটি আদর্শিক ভিত্তি দাঁড় করাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

গত বছর তিনি বিবিসির মস্কো সংবাদদাতা স্টিভ রোজেনবার্গকে একটি সাক্ষাত্কার দিয়েছিলেন যেখানে তিনি অস্বীকার করেছেন যে রাশিয়া বিষ প্রয়োগ এবং সাইবার হামলা চালিয়েছে বা অন্য দেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে।

টানা ১৮ বছর ধরে তিনি রাশিয়ার শীর্ষ কূটনীতিক, তিনি রাশিয়াকে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করেছেন, যদিও যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তার বড় কোন ভূমিকা নেই।

ভ্লাদিমির পুতিন যে তার অতীতের লোকদের উপর অনেক বেশি নির্ভর করেন, ৭১ বছর বয়সী সের্গেই ল্যাভরভ তার আরেকটি উদাহারণ।

গত মাসে তিনি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাসকে তার রাশিয়ার ভূগোল জ্ঞান নিয়ে উপহাস করেছিলেন। এক বছর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেলকেও অপমান করার চেষ্টা করেন।

তবে ইউক্রেন ইস্যুতে তাকে দীর্ঘদিন একপাশে সরিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি রাগী এবং অবন্ধুসুলভ বলে পরিচিত, কিন্তু তারপরও তিনি ইউক্রেনের বিষয়ে আরও কূটনৈতিক আলোচনার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট এবার তাকে উপেক্ষা করারই সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি একটি ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে রাশিয়ার আগ্রাসনের পক্ষে যখন যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করছিলেন, তখন জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের এক বৈঠক থেকে বেশিরভাগ সদস্য ওয়াক আউট করেন। যদিও বিষয়টিকে যে তিনি খুব একটা পাত্তা দিয়েছেন, তা মনে হয়না।

পুতিনের ঘনিষ্ঠ মহলের মধ্যে তিনি এক বিরল নারী চরিত্র। রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে বিদেশে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছে তার সভাপতিত্বে, আর এর মাধ্যমেই ইউক্রেনে সেনা অভিযানের পথ খুলে গেছে।

ভ্যালেন্টিনা মাতভিয়েনকো হলেন সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে আসা পুতিনের বিশ্বস্ত এবং অনুগত ব্যক্তিদের আরেকজন। তিনি ২০১৪ সালেও ক্রাইমিয়াকে দখল করার প্রচেষ্টায় সাহায্য করেছিলেন৷

তবে তাকে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হিসাবে বিবেচনা করা হয় না। তবে তার পরও বলতে হয়, খুব কম লোকই সম্পূর্ণ নিশ্চিতভাবে বলতে পারে যে, আসল সিদ্ধান্ত আসলে কে নিচ্ছে, আসল কাজগুলো কে করছে।

রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদে তার ভূমিকাটাও ছিল অন্যান্য সদস্যদের মতোই, তারা যেন সম্মিলিতভাবে একটি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সেরকম একটা ধারণা দেয়া। যদিও এমন সম্ভাবনাই বেশি যে পুতিন হয়তো আগেই তার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।

তিনি প্রেসিডেন্টের একজন প্রাক্তন দেহরক্ষী, এখন রাশিয়ার ন্যাশনাল গার্ড, রোসগভার্ডিয়া পরিচালনার দায়িত্বে আছেন।

রোমান সাম্রাজ্যের প্রাইটোরিয়ান গার্ডের আদলে এটি মাত্র ছয় বছর আগে গঠন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন, যা অনেকটা তার ব্যক্তিগত সেনাবাহিনী হিসাবে কাজ করবে।

প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীকে এই বাহিনীর প্রধান হিসেবে বেছে নিয়েছেন, যাতে এটি সবসময় তার প্রতি অনুগত থাকে। ভিক্টর জোলোটোভ এরই মধ্যে এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা চার লাখে উন্নীত করেছেন।

ভেরা মিরোনোভা ধারণা করেন যে, রাশিয়ান পরিকল্পনা ছিল কয়েক দিনের মধ্যে অভিযান শেষ করা, এবং যখন সামরিক বাহিনী ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে হয়েছিল, তখন রাশিয়ার ন্যাশনাল গার্ড এর নেতৃত্বে নিয়ে নেয়।

সমস্যা হল যে ন্যাশনাল গার্ডের নেতার কোন সামরিক প্রশিক্ষণ নেই, এবং তার বাহিনীর কোন ট্যাংক না থাকায় আক্রমণের মুখে তারা বেশ ঝুঁকিতে ছিল।

পুতিন আর কার কথা শোনেন?

প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্টিন রাশিয়ার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কঠিন কাজের দায়িত্বে, তবে যুদ্ধের বিষয়ে তার তেমন কিছু বলার নেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইয়েভজেনি মিনচেনকোর মতে, মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন এবং রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি রোসনেফ্টের প্রধান, ইগর সেচিনও প্রেসিডেন্টের বেশ ঘনিষ্ঠ।

ধনী ব্যবসায়ী দুই ভাই বরিস এবং আর্কাডি রোটেনবার্গ, প্রেসিডেন্টের শৈশবের বন্ধু ছিলেন, তারাও দীর্ঘকাল ধরে তার ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন হিসেবে আছেন। ২০২০ সালে, ফোর্বস ম্যাগাজিন তাদের রাশিয়ার সবচেয়ে ধনী পরিবার হিসাবে তালিকাভুক্ত করে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন