December 1, 2025, 1:55 pm
সর্বশেষ সংবাদ:
আশ্রয়ের সিদ্ধান্ত স্থগিত ‘দীর্ঘ সময়’ বজায় রাখার ঘোষণা ট্রাম্পের মেট্রোরেলের ছাদে ওঠা যে কারণে বিপজ্জনক সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেলেন ২২ কর্মকর্তা জাতীয় তিন মাসের মধ্যেই দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারবে অন্তর্বর্তী সরকার: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বন্ধ বার্ষিক পরীক্ষা, সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি শুরু আজ ফের অভ্যুত্থানে জেন-জি, উত্তাল এশিয়ার আরেক দেশ ‘সমুদ্রে অবৈধ ও অতিরিক্ত মৎস্য আহরণে মাছের সংস্থান কমে যাচ্ছে’ দেশের ৩৩ শতাংশ মানুষ রোগাক্রান্ত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের একমাত্র সমাধান: পোপ লিও সশস্ত্র বাহিনীর বঞ্চিত সদস্যদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

এখনো হাসিনার আস্থাভাজনদের নিয়ন্ত্রণে বিটিভি, নেপথ্যে কারা?

Reporter Name
  • Update Time : Wednesday, November 26, 2025
  • 26 Time View

নিউজ ডেস্ক:
কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ থাকার পরও শেখ হাসিনার আস্থাভাজনরা বিটিভিতে এখনো সবচেয়ে ক্ষমতাধর অবস্থানে রয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে দুর্নীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরও তাদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এতে বিটিভিতে দুর্নীতির পাশাপাশি পতিত সরকারের পলাতক প্রভাবশালীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচারের ভয়ংকর ঝুঁকি রয়েই গেছে।

অভিযোগ আছে-তথ্য মন্ত্রণালয় ও বিটিভির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করেই ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) ও বিটিভির নিজস্ব একাধিক তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য। এসব প্রতিবেদন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তা ‘লালফিতায় বন্দি’ করে রাখা হয়েছে। প্রতিবেদনগুলো সচিব বা উপদেষ্টার টেবিলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করা হয়নি। মন্ত্রণালয় ও বিটিভির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের একটি চক্র এ কাজে জড়িত।

এ বিষয়ে জানতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানার মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার একই নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে বক্তব্য নেওয়ার সময় চেয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি জবাব দেননি। এক সপ্তাহ অপেক্ষার পরও সাড়া না পেয়ে সচিবের বক্তব্যের জন্য রোববার তথ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এ প্রতিবেদক। তিনি সচিবের একান্ত সচিব মো. রিফাতুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। মোবাইল ফোনে রিফাতুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন বিষয়ে সচিবের বক্তব্য নিতে প্রয়োজন তা জানতে চান। তার মোবাইল ফোনের হোয়াটসঅ্যাপে সুনির্দিষ্ট বিষয় লিখে পাঠানোর পরদিন সোমবার তিনি জানান এ বিষয়ে সচিব কোনো বক্তব্য দেবেন না।

এ বিষয়ে জানতে সম্প্রতি অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আলতাফ-উল-আলমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে জানান। পরে কয়েক দফা তাকে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। সবশেষ রোববার বিকালে তিনি এই প্রতিবেদকের কল রিসিভ করলেও মিটিংয়ে আছেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি বিটিভির বেশকিছু দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসর হিসাবে পরিচিত কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এদের বিষয়ে মতামত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। যাচাই-বাছাই শেষে ৬ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয় সংস্থাটি। প্রতিবেদনের কপি সংগ্রহ করেছেন এ প্রতিবেদক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মনিরুল ইসলাম আওয়ামী লীগ মতাদর্শী কর্মকর্তা হিসাবে পরিচিত। তিনি বিটিভির সিগন্যাল সিস্টেম ডিজিটাল করার প্রকল্পের কাজ কারচুপির মাধ্যমে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান স্টুডিওটেককে প্রদান করেন। তিনি সরকারি প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই ঘুসের বিনিময়ে ঠিকাদারকে পূর্ণাঙ্গ বিল প্রদান করতেন। এসব অনিয়মের কারণে গত বছরের ৪ নভেম্বর দুদক তার সম্পদের হিসাব তলব করে।’ মনিরুলের পারিবারিক রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ঘরে লেখা আছে-‘তার পিতা ও আপন দুই চাচা বিএনপি মতাদর্শী।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পতিত সরকারের দোসর মনিরুল এখন বাবা-চাচার রাজনৈতিক মতামর্শ পুঁজি করে জার্সি পালটে বিএনপির পরিচয়ে দাপট দেখাচ্ছেন।

জানা গেছে, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও ফ্যাসিস্টের চিহ্নিত দোসর কর্মকর্তারা এখনো দাপটে আছেন বিটিভিতে। জুলাই আন্দোলনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে এলেও বিটিভিকে দুর্নীতি ও আওয়ামী দোসরমুক্ত করা যায়নি। এখনো বিটিভির ভেতরে-বাইরে ফ্যাসিস্ট দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্য থাকায় শিল্পী, কলাকুশলী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রমাণিত দুর্নীতিবাজ ও পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম। তিনি বিটিভি সদর দপ্তরের সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ারের (চলতি দায়িত্ব) পদে বহাল তবিয়তে আছেন। তার বিরুদ্ধে দুদকে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান। এরপরও তিনি অদৃশ্য ক্ষমতার বলে পদোন্নতি বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। টানা ছয় বছর ধরে উচ্চপদে চলতি দায়িত্বে আছেন মনিরুল।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রের নির্বাহী প্রযোজক সফির হোসাইনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তে নজিরবিহীন দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই সফির নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। এরপরও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। একই কেন্দ্রের উপমহাপরিচালক বার্তা ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ ও অনুষ্ঠান নির্বাহী মাহবুবা ফেরদৌসকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রেখে লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রক বা মুখ্য শিল্প নির্দেশক মোহাম্মাদ সেলিমও আছেন বহাল তবিয়তে। এদের সবার বিরুদ্ধেই বিভাগীয় তদন্তে দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনেক অপরাধের পরও তারা এখনো চাকরিতে বহাল। ন্যূনতম শাস্তিও পেতে হয়নি তাদের। এদের বিরুদ্ধে দুদক ও মন্ত্রণালয়ে আরও কিছু তদন্ত চলমান আছে। কিন্তু চাকরিতে বহাল থাকায় নানাভাবে তদবির করে তারা তদন্ত কাজ বাধাগ্রস্ত করছেন বলে অভিযোগ আছে।

দুদকের তদন্ত ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের কোনো তথ্য আমার জানা নেই। ফিরতি প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়েই তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।

ঢাকা কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রক মোহাম্মাদ সেলিম সম্পর্কে এনএসআইর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সেলিম আওয়ামী লীগ মতাদর্শী কর্মকর্তা হিসাবে পরিচিত। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি ঢাকা কেন্দ্রের বহুল আলোচিত সাবেক জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তার ও বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য। বিটিভির অনুষ্ঠান নির্মাণের নামে অনুমোদন ছাড়াই অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, ভুয়া-বিল ভাউচার তৈরি করে অবৈধভাবে অর্থ উত্তোলনসহ নানা ধরনের আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন।’ দুদক থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, মনিরুল ইসলাম, জিল্লুর রশিদ ও আফিফা আফরোজের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এদিকে বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্রের নির্বাহী প্রযোজক, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মো. সফির হোসাইন ওরফে ইলনের জালিয়াতি, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষমতার অপপ্রয়োগের ভয়ংকর তথ্য পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে তথ্য প্রকাশ করা হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর বিটিভি সদর দপ্তর থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে সাত পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়।

প্রতিবেদনের মতামতের অংশে ভয়ংকর তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘সরকারি আদেশ ছাড়া তিনি (সফির হোসাইন) পূর্ববর্তী কর্মস্থলে অবস্থানপূর্বক বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অনুষ্ঠান প্রযোজনা করেছেন, সরকারি অর্থ ব্যয়ের সঙ্গে নিজেকে সংশ্লিষ্ট রেখেছেন এবং অনুষ্ঠানের প্রযোজক হিসাবে অনুষ্ঠান বাজেটে স্বাক্ষর করেছেন। তার প্রযোজিত ‘অনুষ্ঠান ব্যয় প্রস্তাবনামা’ পর্যালোচনায় দেখা যায়, কোনো সরকারি আদেশ ব্যতিরেকে তিনি স্বীয়পদের চেয়ে উচ্চতর পদের কর্মকর্তার স্বাক্ষরের জন্য নির্ধারিত স্থানে নিজেই স্বাক্ষর করেছেন এবং এর ভিত্তিতে সরকারি অর্থ ব্যয় হয়েছে। ফলে তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ ব্যয়ের অভিযোগ প্রমাণিত।’

আরও বলা হয়েছে, ‘সরেজমিন তদন্তকালে তিনি তার চেয়ে উচ্চ পদের কর্মকর্তাদের সম্পর্কে দাপ্তরিক শিষ্টাচারবহির্ভূত ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করে সরকারি চাকরি শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালার ২০১৮-এর অনুছেদ-২(খ) এর পরিপন্থি কাজ করেছেন-যা তদন্তে প্রমাণিত। এছাড়া তার প্রযোজিত ও পরিশোধিত ‘অনুষ্ঠান ব্যয় প্রস্তাবনামার’ পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার পরম্পরা পাওয়া যায়-যা তদন্তে প্রমাণিত।’

অভিযোগ আছে, এই প্রতিবেদন তথ্য মন্ত্রণালয়ের একটি দুষ্টচক্র চাপা দিয়ে রেখেছে। এ কারণে এখনো তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে জানতে সফির হোসাইন ইলনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার একই নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে বক্তব্য চেয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি জবাব দেননি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © dainikkhobor.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com