December 1, 2025, 8:16 am
সর্বশেষ সংবাদ:
‘সমুদ্রে অবৈধ ও অতিরিক্ত মৎস্য আহরণে মাছের সংস্থান কমে যাচ্ছে’ দেশের ৩৩ শতাংশ মানুষ রোগাক্রান্ত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের একমাত্র সমাধান: পোপ লিও সশস্ত্র বাহিনীর বঞ্চিত সদস্যদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা বেলুচিস্তানে এফসি সদর দপ্তরে হামলা, পাল্টা হামলায় ৩ সন্ত্রাসী নিহত হঠাৎ পাল্টে গেলো বাংলালিংকের লোগো, সামাজিকমাধ্যমে চলছে আলোচনা কক্সবাজারে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা এবং কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার সঙ্গে এবার রেহানা-টিউলিপের রায় সোমবার খালেদা জিয়ার অসুস্থতার জন্য হাসিনা সরকার দায়ী: রাশেদ খান খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল, কিছুটা ভালোর দিকে: তথ্য উপদেষ্টা

দেশের স্বার্থবিরোধী অন্ধ আনুগত্যের রাজনীতি

Reporter Name
  • Update Time : Sunday, November 30, 2025
  • 8 Time View

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি উদ্বেগজনক এবং মারাত্মক প্রভাবশালী ঘটনা হলো দলের প্রতি অন্ধ আনুগত্যের উন্মাদ প্রবণতা। বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে, সাম্প্রতিক সময়ে এমন একটি শ্রেণি আবির্ভূত হয়েছে—যাকে বলা যায় ‘দলান্ধ দলকানা উম্মাদ’। এই শ্রেণির মানুষ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কোনো অনৈতিক, অগ্রহণযোগ্য বা দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডকেও উলঙ্গভাবে সমর্থন করে। তারা নিজেদের বিচার-বুদ্ধি স্থগিত রেখে, নেতা বা দলের প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রদর্শন করে এবং এই আনুগত্যকে সমালোচনার বাইরে রাখে।

দলান্ধতা বা অন্ধ আনুগত্য কেবল রাজনৈতিক সমস্যাই নয়; এটি সামাজিক, নৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্তরেও গভীর ক্ষতি করে। যখন একজন নেতা বা শীর্ষ নেতৃত্ব দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তখন দলকানা উম্মাদরা তা স্বাভাবিক, ন্যায়সঙ্গত বা অপরিহার্য হিসাবে উপস্থাপন করে। তারা দেশের বৃহত্তর স্বার্থ, নাগরিকদের কল্যাণ, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও নৈতিক নীতি কে উপেক্ষা করে।

রাজনৈতিক ইতিহাসে এ ধরনের উদাহরণ অসংখ্য। বাংলাদেশে যেমন, তেমনি অন্যান্য দেশের ইতিহাসও দেখায় যে, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতা এবং নেতার প্রতি অন্ধ আনুগত্য এই শ্রেণিকে বৃদ্ধি করে। তারা নেতার ব্যক্তিগত ভক্তি বা দলের প্রতি অন্ধ আনুগত্যকে ন্যায়, যুক্তি বা দেশের স্বার্থের উপরে স্থাপন করে। তারা নেতার ভুল বা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কোনো সমালোচনা করতে পারে না। তারা সবকিছুকে দলের লাইন বা নেতার নির্দেশ অনুযায়ী বিচার করে।

দলান্ধতার এই প্রবণতা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে গভীর অশান্তি সৃষ্টি করে। এরা স্বাভাবিকভাবে দেশের স্বার্থকে দলের স্বার্থের subordinate মনে করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো নেতা দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, জাতির সম্পদের অপচয় বা বৈদেশিক নীতিতে দেশের ক্ষতির জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেন, দলকানা উম্মাদরা তা অগ্রহণযোগ্য বা ক্ষতিকর হিসাবে স্বীকার করে না। তারা নেতার কর্মকাণ্ডকে নৈতিক বা দেশের জন্য উপকারী হিসেবে দেখায়।

দলান্ধতা শুধুই রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ নয়; এটি মানসিক ও সামাজিকভাবে মানুষের বিচক্ষণতা হ্রাস করে। মানুষ যখন দলীয় রঙে সবকিছু দেখে, তখন বিচক্ষণতা, স্বাধীন চিন্তাভাবনা এবং নৈতিক দায়িত্ব প্রায়শই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ধরনের শ্রেণি সাধারণ মানুষ, মিডিয়া এবং নাগরিক সমাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তারা রাজনৈতিক পরিবেশকে এমনভাবে দখল করে যে, কোনো সত্য বা ন্যায়পরায়ণ কথা বলার ক্ষমতা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়।

এই শ্রেণির আচরণ শুধু দলের নেতা নয়, সমগ্র রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করে। সমাজে যদি নাগরিকরা নিজের বিচক্ষণতা হারায় এবং সব সিদ্ধান্তকে দলীয় লাইন বা নেতার নির্দেশ অনুযায়ী গ্রহণ করে, তাহলে গণতন্ত্র, অংশগ্রহণমূলক নীতি ও দায়িত্বশীল প্রশাসনের নীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই শ্রেণির কারণে দেশে একপক্ষীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি হয়, যেখানে নৈতিকতা, যুক্তি এবং স্বার্থবোধকে প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়।

শ্রেণিটির বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
১. নেতার কোনো ভুল বা অনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বীকার না করা।
২. দলের সিদ্ধান্তকে সর্বোচ্চ সত্য বা ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে দেখানো।
৩. দেশের স্বার্থকে দলের স্বার্থের subordinate মনে করা।
৪. স্বাধীন গণমাধ্যম, সমাজ ও ব্যক্তিগত মতামতকে অবমূল্যায়ন করা।

এই ধরনের অন্ধ আনুগত্য দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, নৈতিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামোতে ক্ষতির কারণ হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি সরকার শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে বৈদেশিক নীতিতে দেশের ক্ষতি করে এবং এই শ্রেণি তা সমর্থন করে, তাহলে দেশের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদি তারা দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে স্বাভাবিক মনে করে, তাহলে আর্থিক দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়।

দলান্ধতার এই প্রবণতা ইতিহাসে অনেক বার প্রমাণিত হয়েছে যে, এটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং রাষ্ট্রের পতনের কারণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা যায়, রাজনৈতিক নেতা বা দল দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলেও যদি নাগরিকরা দলের লাইন অন্ধভাবে অনুসরণ করে, তখন স্বৈরাচার, দুর্নীতি এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে।

এই শ্রেণির রাজনৈতিক মনোভাব সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে। তারা দলের লাইন এবং নেতার সিদ্ধান্তের সঙ্গে যে কোনো বিরোধকে প্রতিহিংসার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। এটি রাজনৈতিক বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করে, গণতান্ত্রিক বিতর্কের পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সমাজকে একতরফা চিন্তার প্রভাবাধীন করে তোলে।

দলান্ধতার ফলে মানুষের স্বাধীন চিন্তাভাবনা এবং নৈতিক দায়িত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই শ্রেণি সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক সক্রিয়তা থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং নেতৃত্বের প্রতি অন্ধ আনুগত্যকে প্রশ্রয় দেয়। তারা সমাজে সত্য এবং ন্যায়ের বিরোধিতা করে, দল বা নেতা সন্তুষ্টি বা ক্ষমতার স্বার্থে মানুষের বিশ্বাসকে বিকৃত করে।

এখানে আমি বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করব কিভাবে দলান্ধতা দেশে রাজনৈতিক দমন, সামাজিক বিভাজন, বিচার ব্যবস্থার ব্যর্থতা এবং অর্থনৈতিক অপচয়কে প্ররোচিত করে। আমরা দেখব, কিভাবে এই শ্রেণি রাজনৈতিক নেতাদের অশোভন ও স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডকে স্বাভাবিক বা ন্যায়সঙ্গত হিসাবে উপস্থাপন করে। এছাড়াও, প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে কিভাবে নাগরিক সমাজ এবং মিডিয়া স্বাধীনতা এই ধরনের অন্ধ আনুগত্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে পারে।

দলান্ধতা কেবল রাজনৈতিক নেতাদের জন্য নয়, সাধারণ জনগণের জন্যও হুমকি। এই শ্রেণি যখন রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া বা সমালোচনার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখে, তখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এবং সামাজিক ন্যায় ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আমরা ইতিহাসের উদাহরণ থেকে শিখতে পারি যে, দমনমূলক নেতৃত্বের প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রায়শই দেশের পতনের পথ প্রস্থ করে। উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন সময়ে রাজনীতির ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যখন জনগণ বা দলীয় সদস্যরা নেতার কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে, তখন শাসকগোষ্ঠী স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছে এবং দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে।

শ্রেণিটির কার্যকারিতা শুধুমাত্র নেতার ক্ষমতা ধরে রাখায় নয়, বরং এটি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ধ্বংস করতে সহায়তা করে। তারা স্বাভাবিক, নৈতিক বা দেশের স্বার্থের বিরোধিতা করার শক্তিকে অবমূল্যায়ন করে। এটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, নৈতিকতা এবং জবাবদিহিতা দূর করে।

পরিশেষে বলা যায়, দলান্ধ দলকানা উম্মাদের সমস্যা শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং সামাজিক এবং নৈতিক। এটি দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি গভীর হুমকি। তাই নাগরিকদের সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। স্বাধীন চিন্তাভাবনা, বিচার-বুদ্ধি এবং নৈতিক দায়িত্বের মাধ্যমে আমরা এই শ্রেণির প্রভাব কমাতে পারি। গণমাধ্যম, শিক্ষাব্যবস্থা এবং সমাজের সচেতনতা এই দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

দলান্ধতা দেশের স্বার্থবিরোধী, অন্ধ আনুগত্যের রাজনীতি জন্ম দেয়। এই শ্রেণি দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং নৈতিক মানদণ্ডকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ইতিহাস ও বাস্তব উদাহরণ প্রমাণ করে যে, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক শান্তি এবং নৈতিক সুশাসন রক্ষা করতে হলে নাগরিকদের স্বাধীন চিন্তাভাবনা, সচেতনতা এবং নেতার কর্মকাণ্ডের স্বতঃসিদ্ধ সমালোচনার ক্ষমতা বজায় রাখতে হবে।

শুধুমাত্র সুশিক্ষা, তথ্যপ্রাপ্তি এবং সমালোচনামূলক মনোভাবের মাধ্যমে আমরা দলান্ধতা এবং অন্ধ আনুগত্যের বিপদ মোকাবেলা করতে পারি। দেশের ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে, প্রতিটি নাগরিককে ন্যায়, স্বচ্ছতা এবং দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ মূল্য দিতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © dainikkhobor.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com