নিউজ ডেস্ক:
ভারতের স্বার্থ রক্ষায় ও নিজের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্যে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন শেখ হাসিনা। হত্যাকাণ্ডের মূল মেসেজ ছিল কোনো সেনাকর্মকর্তা যদি ভারতবিরোধী হন, তাহলে তাদের পরিণতি পিলখানার মতো হবে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীতে রাওয়া ক্লাবে বিডিআর তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশে শহীদ পরিবারের মতপ্রকাশ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সাবেক বিডিআরের (বর্তমান বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভারতের স্বার্থে ও নিজের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার স্বার্থে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। কোনো সেনাকর্মকর্তা ভারতবিরোধী হলে তার অবস্থা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মতো হবে, এটাই মেসেজ ছিল এই হত্যাকাণ্ডের। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হতেই হবে, আমরা ছাড়ব না। রিপোর্টে যাদের নাম এসেছে তাদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করতে হবে সরকারকে। মীর জাফরদের বিচার করতে হবে, না হলে আরও একটা পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
রাকিন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রথম আমাদের দেশের মীর জাফরদের দিয়ে শুরু করতে হবে। সেনাবাহিনীর যেসব কর্মকর্তা আমার বাবাসহ ৫৭ জন অফিসারের সঙ্গে বেইমানি করেছেন, তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতেই হবে। যদি এই মীর জাফরদের বিচার না করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে আরেকটা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটানোর সুযোগ রয়ে যাবে। গত ১৬ বছর এতিম হয়ে ঘুরেছি, শরীরে সেনা রক্ত, এখানে কোনো কম্প্রোমাইজ হবে না। এদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতেই হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে পিলখানায় হত্যার শিকার শহীদ কর্নেল কুদরত-এ-এলাহী রহমান শফিকের ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান বলেন, আমরা আশা করেছিলাম কমিশন আমাদের রিপোর্টের সামারাইজ ভার্সন দেবে। একটা মোটামুটি সামারাইজ ভার্সন হয়ত দেশবাসী প্রত্যাশা করেছিল কমিশনের কাছে। তবে সম্পূর্ণ রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত সব বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
মূল সমন্বয়কারী ফজলে নূর তাপসের বিষয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাপসের বিষয়টি নতুন কিছু না, এমনকি তখন পত্র-পত্রিকার সংবাদেও এসেছে তাপস বিভিন্ন সময়ে পিলখানার ভেতরে গিয়েছেন এবং তার বাসায় মিটিং হতো। তার যুক্ত থাকার বিষয়টি একেবারেই সারপ্রাইজিং না। উনার বিরুদ্ধ গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আমরা কিন্তু আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছি। তখন আমরা অনেকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করেছি। লিস্ট ধরে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই মানুষগুলো কিন্তু এখনো আছে, আমাদের আশপাশে তারা থাকে। আমাদের বাবাদের সাথে চাকরি করেছে, মেসে থেকেছে, একসঙ্গে খেয়েছে এবং বিভিন্ন সময় একসঙ্গে অপারেশন করেছে। উনারা আমাদের সামাজিক জীবনের একটা অংশ ছিল। উনাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতেই হবে। না হলে যত সময় যাবে উনাদের কিন্তু আর আস্তে আস্তে পাওয়া যাবে না।
আপনারা বলছেন কমিশন অনেকের নাম প্রকাশ করেনি, আপনারা কি মনে করেন তাদের নাম প্রকাশ করা উচিত নাকি আগে ট্রায়ালে নিয়ে আসা উচিত– এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিব রহমান বলেন, জনসম্মুখে প্রকাশ করার আগে তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। এর আগে প্রকাশ করা হলে এই ঝুঁকিটা থেকে যায় যে, তারা পালিয়ে যেতে পারে।
আপনারা বলছেন সার্ভিং অনেক অফিসার জড়িত ছিলেন, তারা কারা এবং এক্স অনেক অফিসার আপনাদের হুমকি দিচ্ছেন ইন্টারনেটে, তারা কারা? তাদের নাম কী? –এমন প্রশ্নের জবাব শহীদ কর্নেল কুদরত-এ-এলাহীর ছেলে বলেন, বিষয়টি প্রসিকিউশনের হাতে না পড়া পর্যন্ত মন্তব্য করা উচিত হবে না। আর যেসব অফিসার হ্যারাসমেন্টের সঙ্গে জড়িত, আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থে এখন তাদের নাম বলব না। তবে আমাদের কাছে প্রতিটা বিষয়ের প্রমাণ আছে।
তৎকালীন সেনা অফিসারদের কী ভূমিকা ছিল– জানতে চাইলে সাকিব রহমান বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের থেকে শুরু করে অফিসারদের কার কী ভূমিকা ছিল সেটার কিন্তু ডকুমেন্ট আছে। তবে তাদের কার কী ভূমিকা ছিল সেটা টেকনিক্যাল কারণে হলেও আমরা এখন বলতে পারি না। যেহেতু এ বিষয়ে আমরা পেশাদার না। আমরা আমাদের পরিবারের জায়গা থেকে কথাগুলো বলেছি।
বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কী ধরনের নিরাপত্তা হুমকি আপনারা পেয়েছেন বা শহীদ পরিবারের সদস্যরা পেয়েছে– জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সবসময় একটা সিকিউরিটি থ্রেট এসেছে। যাদের নাম এখনো আসেনি, ভবিষ্যতে যদি আসে, সেখান থেকেও আমাদের একটা হুমকি আছে, তাদের নাম আসার পর।
কমিশনের প্রতিবেদনে ভারতের ভূমিকার বিষয়টি উঠে এসেছে, এ বিষয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মন্তব্য জানতে চাইলে সাকিব রহমান বলেন, আমার মনে হয় না সম্পূর্ণ রিপোর্ট পাওয়ার আগে আমরা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব।
এক প্রশ্নে জবাবে সাবেক বিডিআরের ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার জন্য তিনটি এলিমেন্ট কাজ করেছিল। এর মধ্যে একটি ছিল ফরেন এলিমেন্ট, যেটি ভারতকে বলা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে কমিশন বলেছে, ওই সময় পিলখানায় ভারতীয় নাগরিকদের উপস্থিতি ছিল, সেটার প্রমাণ তারা পেয়েছেন। আরেকটা ছিল পলিটিক্যাল এলিমেন্ট, সেটা হলো শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের লোকজন।