
ভেবেছিলেন এবার অন্তত পাঁচ কেজি কমিয়ে ফেলা যাবে, অথচ ব্যাপারটা ঘটল উল্টো, কেনো?
অনেকেই মনে করেন রোজা রাখলে হয়ত ওজনও কমবে। তবে বেশিরভাগ সময় সেই লক্ষ্য পূরণ হয় না।
না খেয়ে থাকার পরে ইফতার ও সেহরিতে অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত খাবার গ্রহণের ফলে অনেকের ওজন বেড়ে যায়।
বিশেষ করে ভাজাপোড়া, মিষ্টিজাতীয় খাবার এবং উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবারের মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণের কারণে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমা হয়।
এই তথ্য জানিয়ে ‘ফিটলাইফ-বিডি ডটকম’য়ের প্রতিষ্ঠাতা ও ‘ফিটনেস’ বিশেষজ্ঞ আবু সুফিয়ান তাজ বলেন, পরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে রোজায় ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
আর এজন্য প্রথমেই জানতে হবে বিভিন্ন খাবারের ক্যালরির পরিমাণ।
ইফতারে খাওয়া বিভিন্ন খাবারের ক্যালরি পরিমাণ
ইফতারে সাধারণত নানান ধরনের খাবার গ্রহণ করা হয়। কিছু খাবার বেশি ক্যালরি যুক্ত, আবার কিছু খাবার তুলনামূলক কম ক্যালরিযুক্ত।
ছোলা (এক কাপ, রান্না করা) ২৭০ ক্যালরি
খেজুর (১টি) ২০-২৫ ক্যালরি
পেয়ারা (১টি মাঝারি আকারের) ৬৮ ক্যালরি
আপেল (১টি মাঝারি আকারের) ৯৫ ক্যালরি
বেগুনি (১টি মাঝারি আকারের) ১৫০-২০০ ক্যালরি
পেঁয়াজু (১টি) ২০০-২৫০ ক্যালরি
সমুচা (১টি মাঝারি আকারের) ১৩০-১৮০ ক্যালরি
আলুর চপ (১টি) ২০০-২২০ ক্যালরি
ডালপুরি (১টি) ৩০০-৩৫০ ক্যালরি
ফলভিত্তিক সালাদ (এক বাটি) ১০০-১৫০ ক্যালরি
মুড়ি (এক কাপ) ২০০-২৫০ ক্যালরি
তরমুজ (১০০ গ্রাম) ৩০ ক্যালরি
কম ক্যালরিযুক্ত ইফতার
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে ইফতারে কিছু কম ক্যালরিযুক্ত খাবার বেছে নেওয়া উচিত। যেমন-
শসা, গাজর, ক্যাপসিকাম ও অন্যান্য কাঁচা সবজি।
গ্রিল্ড বা সেদ্ধ মুরগি
দই ও ছানা
ডাবের পানি
চিড়া ও দই
লেবু ও পুদিনা পাতার শরবত (চিনি ছাড়া)
সেহরিতে খাওয়া বিভিন্ন খাবারের ক্যালরি পরিমাণ
সেহরিতে এমন খাবার বেছে নেওয়া উচিত, যা দীর্ঘ সময় শক্তি প্রদান করবে এবং হঠাৎ ক্ষুধার অনুভূতি তৈরি করবে না।
কিছু প্রচলিত সেহেরির খাবারের ক্যালরি পরিমাণ নিচে দেওয়া হল-
ভাত (১ কাপ রান্না করা) ২০০-২৪০ ক্যালরি
ডাল (১ কাপ) ১৬০-২০০ ক্যালরি
ডিম (১টি সিদ্ধ) ৭০-৮০ ক্যালরি
রুটি (১টি মাঝারি আকারের) ৭০-৮০ ক্যালরি
পরোটা (১টি, সাধারণত তেলে ভাজা) ২৫০-৩০০ ক্যালরি
সবজি (১ কাপ রান্না করা) ৭০-১০০ ক্যালরি
ডিম ভাজি (১টি ডিম দিয়ে তৈরি) ১০০-১২০ ক্যালরি
গরুর মাংস (১০০ গ্রাম রান্না করা) ২৫০-৩০০ ক্যালরি
মুরগির মাংস (১০০ গ্রাম রান্না করা) ২০০-২৫০ ক্যালরি
দুধ (১ কাপ ফ্যাটযুক্ত) ১৫০-২০০ ক্যালরি
কম ক্যালরিযুক্ত সেহরি
ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য সেহেরিতে কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমন-
লাল চালের ভাত বা ওটস
শাকসবজি ও সালাদ
সিদ্ধ ডিম বা গ্রিলড মাছ
কম ননীযুক্ত (লো ফ্যাট) দুধ
চিনি ছাড়া দই বা টকদই
বাদাম ও বিভিন্ন বীজ
ওজন নিয়ন্ত্রণের কৌশল
বিশেষজ্ঞদের মতে, রোজায় ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হলে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। এরমধ্যে রয়েছে-
পরিমিত খাবার গ্রহণ: ইফতার ও সেহেরিতে অতিরিক্ত খাবার না খেয়ে পরিমিত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
ভাজাপোড়া যেমন- বেগুনি, পেঁয়াজু, সমুচার পরিবর্তে গ্রিল্ড বা বেইকড খাবার খাওয়া ভালো।
চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা।
মিষ্টি শরবত, হালুয়া ও অন্যান্য চিনি সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
প্রচুর পানি পান করা।
সারা রাত পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীর আর্দ্র থাকে এবং ক্ষুধা কম অনুভূত হয়।
সুষম খাবার গ্রহণ: প্রোটিন, আঁশ ও ভালো চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত, যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে।
শরীরচর্চা: রোজায় হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
অতিরিক্ত খাবার না খেয়ে ধীরে ধীরে খাওয়া: ধীরে ধীরে খেলে খাবার ভালোভাবে হজম হয় এবং অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণের ঝুঁকি কমে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
আবু সুফিয়ান তাজ বলেন, ঈদ শেষে অনেকে সময় দেখা যায় পাঁচ পাউন্ড বা এর বেশি ওজন বেড়ে যায়। আর এই বৃদ্ধিটা স্বাস্থ্যকর নয়। রোজার সময়ে একবেলা বা দুইবেলা না খেয়ে থাকা আসলে বড় কথা নয়, এতে ওজন কমেও না। ওজন বাড়ে বা কমে ২৪ ঘণ্টায় একজন কী করছে অথবা সারা সপ্তাহ ও মাসে কী করা হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে- বলেন তিনি।
সাধারণ একটি দিনে সকালে প্রায় ৫০০ ক্যালরি, দুপুরে ৭০০ ক্যালোরি, বিকেলে প্রায় ৫০০ ক্যালোরি খাওয়া হয়। তবে রমজান মাসে সারাদিনে এই ১৭০০ থেকে ২০০০ ক্যালোরি খাওয়া হয় না।
তবে ইফতারে বসেই একসাথে প্রায় ২০০০ থেকে ২৫০০ ক্যালোরি খাওয়া হয়ে যায়।
এক গ্রাম তেলে থাকে ৯ ক্যালোরি। যে কারণে ভাজাপোড়াতে প্রচুর ক্যালোরি হয়ে যায়। এ ধরনের খাওয়া শেষে এক বসাতেই ২০০০ ক্যালোরির মতো গ্রহণ করা হয়ে যেতে পারে।
সারা দিন রোজা রেখে হয়ত ১৫০০ ক্যালোরি কম খাওয়া হচ্ছে। তবে ইফতারে খাওয়া হচ্ছে ২০০০ ক্যালোরি।
এই বাড়তি ৫০০ ক্যালোরি শরীরে চর্বি হিসেবে জমা হয়ে যাবে। যদি ৩৫০০ ক্যালোরি বেশি গ্রহণ করা হয় তবে এক পাউন্ড ওজন বেড়ে যাবে।
অর্থাৎ একদিনে ৫০০ ক্যালরি বেশি খেলে সারা মাসে ১৫০০০ ক্যালোরি বেশি খাওয়া হয়। এতে মাস শেষে প্রায় ৫ পাউন্ড ওজন বেড়ে যাবে।
অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে পেট ভরালে শরীর কিন্তু পুষ্টি পায় না। অর্থাৎ চর্বি ও কার্বোহাইড্রেইটস খেলে প্রোটিন এবং ভিটামিন বাদ পড়ে যায়। ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। যা হচ্ছে বাড়তি ফ্যাট।
দেখা যাবে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ উপাদানের অভাবে পেশি শুকিয়ে যাবে, শক্তি কমে যাবে কিন্তু পেট বড় হয়ে যাবে।
ফলে ঈদ শেষে দেখা যাবে ৫ পাউন্ড বা ২ কেজি ৩শ’ গ্রামের মতো ওজন বেড়ে গেছে- ব্যাখ্যা করেন এই ফিটনেস বিশেষজ্ঞ।
তাই রোজায় স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখতে এই হিসাব করে খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়তে হবে।