সহকর্মীকে অশালীন ও আপত্তিকর মন্তব্যের দায়ে নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম খানকে দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ঘটনাটি তদন্তে তিন সদস্যের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সোমবার (০৩ নভেম্বর) নিউরোসার্জারি বিভাগ এক জরুরি বিভাগীয় সভা শেষে এই সিদ্ধান্ত জানায়।
তার বিরুদ্ধে ঢামেক হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের এক রেসিডেন্ট চিকিৎসক অভিযোগ জানিয়েছিলেন। এর আগে ওই সহযোগী অধ্যাপকের মন্তব্যের প্রতিবাদে দেড় ঘণ্টা রুটিন অপারেশন বন্ধ রাখেন অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের চিকিৎসকরা। এরপর হাসপাতাল পরিচালকের ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসে চিকিৎসকরা কর্মক্ষেত্রে ফিরে যান।
নিউরোসার্জারি বিভাগের ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের রেসিডেন্ট ডা. নুসরাত নওশিন নওরিন। তার করা অভিযোগের কপি অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের পক্ষ থেকে নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধানের কাছে পাঠানো হয়।
বিষয়টি পর্যালোচনা করতে তাৎক্ষণিকভাবে বৈঠক করে নিউরোসার্জারি বিভাগ। বৈঠক থেকে জানানো হয়, অভিযোগে বর্ণিত মন্তব্য ও আচরণ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের ব্যক্তিগত আচরণ হতে পারে, যা বিভাগ কোনোভাবেই সমর্থন করে না। একই সঙ্গে বিভাগের পক্ষ থেকে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদুর রহমান সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, নিউরোসার্জারি বিভাগ পেশাগত নৈতিকতা, আন্তঃবিভাগীয় সম্মান এবং রোগী সেবার মান বজায় রাখতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বৈঠক থেকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হলো- ১। অভিযোগ তদন্তের জন্য তিন সিনিয়র অধ্যাপকের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সহযোগী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম খানকে নিউরোসার্জারি বিভাগের সব দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৩। অভিযোগকারী রেসিডেন্ট চিকিৎসক ডা. নুসরাত নওশিন নওরিনকে অন্য ইউনিটে পদায়ন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের রেসিডেন্ট ডা. নুসরাত নওশিন নওরিনের অভিযোগ থেকে জানা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনেসথেসিওলজি বিভাগের ফেজ-এ রেসিডেন্ট ডা. নুসরাত নওশিন নওরিন গত ১ নভেম্বর নিউরোসার্জারি বিভাগের ‘হোয়াইট ইউনিট’-এ যোগদানের পর ইউনিট প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম খানের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি এনেসথেসিওলজি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের নিয়ে একের পর এক অশালীন, কুরুচিপূর্ণ ও অপমানজনক মন্তব্য করেন।
অভিযোগে বলা হয়, তিনি এনেসথেসিওলজিস্টদের ‘কুকুরের জাত’ বলে বারবার সম্বোধন করেন এবং নির্দিষ্ট চিকিৎসকদের নাম উল্লেখ করে গালিগালাজ করেন। এমনকি সহকর্মী চিকিৎসক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়েও অশোভন মন্তব্য করেন।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ রয়েছে, ডা. শামসুল ইসলাম খান এনেসথেসিওলজি পেশাকে ‘নিম্নমানের ও নির্ভরশীল সাবজেক্ট’ বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন এবং এক পর্যায়ে ব্যক্তিগতভাবে অপদস্থ করার মতো ভাষা ব্যবহার করেন। এ ঘটনায় সহকর্মীদের তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়, যা শেষ পর্যন্ত আজকের প্রতীকী কর্মবিরতিতে রূপ নেয়।
এদিকে এছাড়া এনেস্থেসিয়া সোসাইটির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়, তাকে সরকারি-বেসরকারি কোনো অপারেশন থিয়েটারে সহযোগিতা করা হবে না। এদিকে, প্রায় দেড় ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রুটিন অপারেশন পুনরায় শুরু হয়। তবে ইমারজেন্সি অপারেশন কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছিল বলে জানা গেছে।
