গণসংহতি আন্দোলনের (জিএসএ) প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য হচ্ছে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের ভিত্তি। আর এ ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে বিচার সংস্কার, নির্বাচন তার যে পথরেখা ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেই পথরেখাকে সফল করতে হবে।
জিএসএর রাজনৈতিক দল হিসেবে এক দশক পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত সমাবেশ ও মাথাল র্যালিতে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশের পর বর্ণাঢ্য এক মাথাল র্যালি শাহবাগ, বাংলামোটর ও মগবাজার এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মাথাল গণসংহতি আন্দোলনের দলীয় প্রতীক। দলের নেতাকর্মীরা মাথাল পরে, হাতে ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে এক উৎসবমুখর শোভাযাত্রা করেন দল হিসেবে এক দশক পূর্তির এ আয়োজনে। এ সময় স্থানীয় জনগণও এ শোভাযাত্রায় সানন্দে অংশগ্রহণ করেন।
জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের আয়োজনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কেউ যাতে ঐক্যে কোনোভাবে ফাটল ধরাতে না পারে তার জন্য আপনাদের সদা প্রস্তুত, সদা সতর্ক এবং সদা চেষ্টা করে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা একটা ভীষণ জাতীয় সংকটের মধ্যে আছি। দেশের অর্থনৈতিক খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে। রাষ্ট্রব্যবস্থা এখনো বিপর্যয় কাটিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। আমাদের মৌলিক সংস্কার দরকার। সমস্ত হত্যাকাণ্ডের বিচার দরকার। এবং এসব কিছু থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে আমাদের নির্বাচন দরকার। আমাদের দরকার গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচন, যেটা একইসঙ্গে সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির মধ্যে হতে হবে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, যে রাষ্ট্র ন্যায়বিচার দিতে পারে না সেই রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না। বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও নতুন যাত্রা ন্যায়বিচারের ওপর দাঁড়াতে হবে। সব হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, সব ধরনের লুটপাট এবং ঘরে-বাইরে যত ধরনের অপরাধ হয়, মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পায় সেই রকম ব্যবস্থা আমাদের কায়েম করতে হবে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার ছাত্র, শ্রমিক, জনতা, এ দেশের মেহনতি, খেটে খাওয়া মানুষ এ রাষ্ট্রে তাদের ন্যায্য হিস্যা চায়। সেই অনুযায়ী অর্থনৈতিক পরিকল্পনাসহ রাষ্ট্রের সমগ্র পরিকল্পনা তৈরি হতে হবে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টরা ঘৃণা, বিভাজন, নানারকম ট্যাগিং করে তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চেয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার বদলে আজকে যারা ধর্মের নামে, আজকে যারা জাতি পরিচয়ের নামে বিভাজন তৈরি করতে চায়, ট্যাগিং তৈরি করতে চায়, নানাভাবে ঘৃণা উৎপাদন করতে চায়, যারা মানুষকে অপমানিত করে, মব তৈরি করে নিজের মত চাপিয়ে দিতে চায়- এ সমস্ত জবরদস্তিকে গণঅভ্যুত্থান না বলে দিয়েছে।
‘একদল ওই ঘৃণা, বিভাজন এবং ট্যাগিংয়ের পলিটিক্স করে আরেকটা জবরদস্তিমূলক শাসন কায়েম করতে চায়। গণঅভ্যুত্থান পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে, এক ফ্যাসিবাদের বদলে অন্য কোনো জবরদস্তি বাংলাদেশের মানুষ সহ্য করবে না।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, এদেশ স্বাধীন সার্বভৌম মর্যাদা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের মর্যাদা ও জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে আমরা সুসম্পর্ক করতে চাই। কিন্তু কোনো দেশের কাছে পরাধীন হতে চাই না। বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে উৎখাত করে ভারতীয় কর্তৃত্বকে না বলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে এদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কারো কাছে মাথা নোয়াবার জন্য নয়। বাংলাদেশের মানুষ আগেও রক্ত দিয়েছে, ভবিষ্যতেও রক্ত দিয়ে নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করবে।
সমাবেশ ও মাথাল র্যালিতে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, জিএসএর রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার, জিএসএর রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য দেওয়ান আবদুর রশীদ নীলু, মনির উদ্দীন পাপ্পু, হাসান মারুফ রুমী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বাচ্চু ভুইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ, দীপক কুমার রায়, তরিকুল সুজন, আলিফ দেওয়ান, ইখতিয়ার উদ্দিন বিপা, মনিরুল হুদা বাবন, অপরাজিতা চন্দ, গোলাম মোস্তফা, জাহিদ সুজন, সাইফুল্লাহ সিদ্দিক রুমন, পপি রানী সরকার, লুভানা তাবাসসুম, রোকনুজ্জামান মনি, মো. বিপ্লব খান, বেনু আক্তার, মাহবুব রতন, আরিফুর রহমান মিরাজ, লুতফুন্নাহার সুমনা, জাহিদুল আলম আল জাহিদ, তাহসিন মাহমুদ, আবু রায়হান খান প্রমুখ।