২০২৩ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ইরানি মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদিকে শুক্রবার ‘হামলা করে’ গ্রেফতার করেছে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী। চলতি মাসের শুরুতে মৃত এক আইনজীবীর স্মরণসভা থেকে তাকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন তার সমর্থকেরা। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে অস্থায়ী মুক্তি পাওয়া মোহাম্মদিকে পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাশহাদে আইনজীবী খসরো আলিকোর্দির স্মরণসভা থেকে গ্রেফতার করা হয়। একই অনুষ্ঠান থেকে আরেক অ্যাক্টিভিস্ট সেপিদেহ গোলিয়ানসহ আরও কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্যারিসপ্রবাসী মোহাম্মদির স্বামী তাগি রহমানি।
গত ৫ ডিসেম্বর নিজ কার্যালয়ে ৪৫ বছর বয়সী আলিকোর্দির লাশ উদ্ধার হয়। ২০২২ সালের দেশব্যাপী বিক্ষোভে গ্রেফতার ব্যক্তিদের পক্ষে মামলা লড়াসহ স্পর্শকাতর মামলায় তিনি আইনি সেবা দিতেন। তার মৃত্যুকে রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড হিসেবে সন্দেহ করে তদন্তের দাবি জানিয়েছে নরওয়েভিত্তিক সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটস।
ইরানি মানবাধিকার সংগঠন এইচআরএএনএ প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, বাধ্যতামূলক হিজাব না পরে মোহাম্মদি আলিকোর্দির সমর্থকদের ভিড়ের মধ্যে রয়েছেন। ইসলামি রীতি অনুযায়ী মৃত্যুর সপ্তম দিনের অনুষ্ঠানে তারা ‘ইরান চিরজীবী’, ‘আমরা লড়ি, আমরা মরি, অপমান মানি না’ ও ‘মৃত্যু একনায়কের’ স্লোগান দেন।
ইরানের বাইরে অবস্থিত পারস্য ভাষার টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত আরেক ভিডিওতে দেখা গেছে, মোহাম্মদি একটি গাড়ির ওপর উঠে মাইক্রোফোন হাতে জনতাকে স্লোগান দিতে উৎসাহিত করছেন।
৫৩ বছর বয়সী মোহাম্মদি সর্বশেষ ২০২১ সালের নভেম্বরে গ্রেফতার হন। গত এক দশকের বেশির ভাগ সময় তিনি কারাগারে কাটিয়েছেন। ২০২৩ সালে তার যমজ সন্তানেরা অসলোয় তার পক্ষে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করেন। গত ১১ বছর ধরে তিনি সন্তানদের দেখেননি। গত মাসে যমজদের ১৯তম জন্মদিনে পাঠানো বার্তায় তিনি জানান, ইরান ত্যাগে তার ওপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
কারাগারের বাইরেও তিনি অবিচল। হিজাব না পরা, ভিডিও কনফারেন্সে বিদেশি শ্রোতাদের সঙ্গে কথা বলা এবং দেশজুড়ে অ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ক্ষমতায় থাকা ধর্মীয় শাসনব্যবস্থার পতনের পূর্বাভাসও তিনি নিয়মিত দিয়ে আসছেন।