December 2, 2025, 1:36 am
সর্বশেষ সংবাদ:

গুমের সাজা যাবজ্জীবন, ফাঁসিও হতে পারে

Reporter Name
  • Update Time : Tuesday, December 2, 2025
  • 14 Time View

গুমের সাজা হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রেখে ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ’ এর গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। একই সঙ্গে গুমের ফলে মৃত্যু হলে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে অধ্যাদেশে। রাখা হয়েছে ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ডের বিধান। এ আইনে গুমের আদেশ বা অনুমতি দানকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা কমান্ডারদেরও সমান সাজার বিধান রাখা হয়েছে। অধস্তনদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলেও সমান দণ্ড প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে আইনে।

সোমবার রাতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ করেছে। গত ৬ নভেম্বর এ অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ, যেখানে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন এবং অভিযোগ গঠনের ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

অধ্যাদেশে গুমের অপরাধকে জামিন ও আপোস অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি গুম অপরাধের বিচারে বিভাগীয় বা জেলা পর্যায়ে এক বা একাধিক ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার ট্রাইব্যুনাল’ গঠনের কথা বলা হয়েছে। শুধুমাত্র জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অপরাধ আমলে গ্রহণ করে বিচার করতে পারবে এই ট্রাইব্যুনাল। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করার আগ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির অবস্থান ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে’ গোপন রাখা যাবে।

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের অভিযোগ নিয়ে গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের সমালোচনা রয়েছে। গত বছর ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ‘আয়নাঘর’ হিসেবে পরিচিত গোপন বন্দিশালা থেকে দীর্ঘ সময় পর বেশ কয়েকজন ব্যক্তি মুক্ত হওয়ার পর গুমের বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে আসে। এই পরিস্থিতিতে গত বছর ২৯ আগস্ট গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এ সনদে যুক্ত হওয়ার ফলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের জন্য সরকার বা এর যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির আওতায় আনার বিষয়ে ভূমিকা রাখবে জাতিসংঘ। দেশে গুম বিরোধী এই আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর করতেই এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হয়েছে বলে গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে।

অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য যদি কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার, আটক, অপহরণ বা স্বাধীনতা হরণ করার পর বিষয়টি অস্বীকার করে অথবা ওই ব্যক্তির অবস্থান, অবস্থা বা পরিণতি গোপন রাখে এবং এ কাজের ফলে ওই ব্যক্তি আইনগত সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হন তাহলে কাজটি গুম বা শাস্তিযোগ্য ফৌজদারী অপরাধ বলে গণ্য হবে। একই সঙ্গে দায়ী ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ডের দণ্ডিত হবে। এই অপরাধে দায়ী ব্যাক্তি সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, গুমের ফলে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটলে বা গুমের পাঁচ বছর পরেও তাকে জীবিত বা মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব নাহলে দায়ী ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। একই সঙ্গে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিতও হবেন তিনি। অধ্যাদেশে বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি গুমের স্বাক্ষ্য-প্রমাণ নষ্ট করেন বা গুমের উদ্দেশে গোপন আটককেন্দ্র নির্মাণ, স্থাপন বা ব্যবহার করেন, তাহলে সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা কমান্ডারদের জন্যও সাজার বিধান রয়েছে অধ্যাদেশে। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা কমান্ডার বা দলনেতা এ ধরনের অপরাধ সংঘটনে অধস্তনদের আদেশ, অনুমতি, সম্মতি, অনুমোদন বা প্ররোচনা দেন, কিংবা নিজেই অংশ নেন, তাহলেও তিনি মূল অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা কমান্ডারের অবহেলা বা অদক্ষতার কারণে অধস্তনরা এমন কোনো কর্মকাণ্ডে জড়ালেও সাজা পেতে পারেন সেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, শৃঙ্খলা বজায় রাখা বা অধস্তনদের নিয়ন্ত্রণ বা তত্ত্বাবধান করার ব্যর্থতার ফলে অধস্তনরা যদি এ ধরনের অপরাধ করে তাহলেও তিনি মূল অপরাধের দায়ে দণ্ডিত হবেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি পলাতক হলেও তার অনুপস্থিতিতে বিচার সম্পন্ন করা যাবে বলে অধ্যাদেশে বলা হয়েছে। আর গুম হওয়া ব্যক্তির সম্পত্তি ব্যবহার বা হস্তান্তরের বিষয়ে এই অধ্যাদেশে পৃথক ধারা রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © dainikkhobor.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com