December 1, 2025, 6:49 am
সর্বশেষ সংবাদ:
‘সমুদ্রে অবৈধ ও অতিরিক্ত মৎস্য আহরণে মাছের সংস্থান কমে যাচ্ছে’ দেশের ৩৩ শতাংশ মানুষ রোগাক্রান্ত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের একমাত্র সমাধান: পোপ লিও সশস্ত্র বাহিনীর বঞ্চিত সদস্যদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা বেলুচিস্তানে এফসি সদর দপ্তরে হামলা, পাল্টা হামলায় ৩ সন্ত্রাসী নিহত হঠাৎ পাল্টে গেলো বাংলালিংকের লোগো, সামাজিকমাধ্যমে চলছে আলোচনা কক্সবাজারে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা এবং কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার সঙ্গে এবার রেহানা-টিউলিপের রায় সোমবার খালেদা জিয়ার অসুস্থতার জন্য হাসিনা সরকার দায়ী: রাশেদ খান খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল, কিছুটা ভালোর দিকে: তথ্য উপদেষ্টা

বিএনপি কি তরুণ প্রজন্মের চাওয়া বুঝতে পারছে

Reporter Name
  • Update Time : Thursday, April 10, 2025
  • 48 Time View

গত দেড় দশক মানুষ স্বচ্ছ নির্বাচন চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। কিন্তু চব্বিশের অভ্যুত্থান সেই চাওয়ার সঙ্গে আরও বহু আকাঙ্ক্ষা যুক্ত করেছে। বিএনপি তরুণ প্রজন্মের চাওয়া বুঝতে পারছে কি না, তা নিয়ে লিখেছেন আলতাফ পারভেজ

বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে মতামত জরিপের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ কম। বাণিজ্যিক বিষয়ে ‘মার্কেট সার্ভে’ করে কিছু কোম্পানি, যারা মূলত করপোরেটদের তথ্য জোগায়।

দেশে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক-সামাজিক পরিবেশে বড় ধরনের অদলবদল ঘটছে। সেই পরিবর্তনের ধরন বোঝা যেত পদ্ধতিগত নির্মোহ জরিপ হলে। সেই সংস্কৃতিতে পিছিয়ে আছি আমরা। ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণে যেটা দেখি, চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর থেকে রাজনৈতিক ঘরানা হিসেবে বিএনপি ও ‘ছাত্র নেতৃত্বে’র প্রভাব কমছে। বিপরীতে জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক প্রভাব ও জনসমর্থন বাড়ছে।

বাংলাদেশের সমাজের এই পরিবর্তন অনুসন্ধানী বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদেরও নজর কাড়ছে। তাঁরা এটাকে ‘কট্টরপন্থা’র উত্থান আকারে হাজির করেছেন। নিউইয়র্ক টাইমস–এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে তারই ছাপ দেখা গেল। বাংলাদেশের চলতি এই মোড়বদল যতটা রাজনৈতিক, তার চেয়ে বেশি সামাজিকও বটে।

জরুরি মতাদর্শিক টানাপোড়েনে রাজনীতি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে শুরু করে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নিউইয়র্ক টাইমস–এর প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত সত্য নয় বলে দাবি করেছে। সত্য-অসত্যের ছবিটা পাওয়া যেত বড় সংখ্যায় নমুনা নিয়ে জরিপ হলে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ গভীরতা না পেলে আগ্রহীদের সোশ্যাল সার্ভের মতো কাজে নামার সাহস হবে না। সমাজবিজ্ঞানীরাও হয়তো সে কারণে চুপ থাকবেন।

তবে পদ্ধতিগত জরিপ ছাড়াও এটা স্পষ্ট, মধ্য চব্বিশ থেকে বাংলাদেশ যত সামনে এগিয়েছে, তত অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোতে অন্তঃকলহ বেড়েছে। এর মাঝে সবচেয়ে মোটাদাগে নজর কাড়ছে বিএনপির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিরোধ। এই বিরোধ আপাতদৃষ্টিতে সাংগঠনিক চেহারার হলেও একে রাজনৈতিক-দার্শনিক–মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব আকারেও দেখা যায়। ছাত্র নেতৃত্ব এমন দাবি হামেশাই করছেন, দেশের এখনকার প্রধান রাজনৈতিক দল হয়েও বিএনপি তাদের প্রত্যাশার বিপরীত দিকে হাঁটছে। প্রশ্ন হলো, এই দাবি সত্য কি না? এ রকম দাবির সামাজিক তাৎপর্য কী?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গর্ভ থেকে ইতিমধ্যে একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়েছে; আরও হবে শোনা যাচ্ছে। অর্থাৎ তারা একক কোনো শক্তি আকারে এখন আর সমাজে সক্রিয় নেই। তবে নানামুখী দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে গেলেও কিছু আকাঙ্ক্ষায় চব্বিশের তারুণ্যের একক লক্ষণ আছে।

তারা চব্বিশের আগের চেহারায় বাংলাদেশকে আর দেখতে চায় না। তারা প্রশাসনের কর্তাদের ঔপনিবেশিক প্রভুর চেহারায় দেখতে অনিচ্ছুক। তারা রাজনৈতিক দলগুলোতে বটবৃক্ষের মতো শিকড় গজানো নেতৃত্বের বদলে আরও গতিশীল ও গণতন্ত্রমনা মানুষদের আশা করে। তারা মন্ত্রী-ডিজির পদে আরও সৎ ও উদ্ভাবনী মানুষদের দেখতে চায়। জনজীবনে আরও রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ চায়। কাজের সুযোগ বেড়েছে দেখতে চায়। কোটি কোটি এ রকম চাওয়াই ঘনীভূত হতে দেখেছি আমরা আট মাস আগে এবং আট মাস ধরে।

মুশকিল হলো, তরুণেরা জানে না এই চাওয়া কীভাবে মিটবে। কেবল রক্ত দিয়ে এই চাওয়ার বাস্তবায়ন ঘটার কথা নয়। সে কারণেই দিন যত গেছে, অস্থিরতা আর হতাশা বেড়েছে তরুণ সমাজে। সেই সুযোগেই তাদের দিক্‌ভ্রান্ত করতে নেমেছে অনেক শক্তি, যার কিছু কিছু কোথাও কোথাও ‘মব’ আকারে দেখা গেছে। তরুণদের মনোজগতে এ–ও ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আছে, চব্বিশ হলো একাত্তরের নেতিকরণ ও বিকল্প।

তরুণেরা যখন ক্রুদ্ধ, বিষণ্ন, ছটফট করছে

একাত্তর ও নব্বইয়ের গণসংগ্রাম সমাজে যে নতুন মূল্যবোধ, আকাঙ্ক্ষা ও লক্ষ্য হাজির করেছিল, সেগুলো অনেকের জন্যই অস্বস্তিকর। দীর্ঘকাল অস্বস্তিতে ভোগা ওই মহলগুলো চব্বিশের ব্যর্থতাকে বেশ বড় আকারে পুঁজি করেছে এখন। তারা তরুণ সমাজকে বোঝাতে চায় গণতান্ত্রিক পথে, নিয়মতান্ত্রিক আদলে পরিবর্তন হবে না। ভাষা-ভঙ্গি বদলাতে হবে।

তরুণদের একাংশ এসব আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। এই তরুণদের স্মৃতিতে এখনো রাজপথে লুটিয়ে পড়া বন্ধুর স্মৃতি। তাদের জামায় এখনো আট মাস আগের রক্তের দাগ। তারা এখনো ক্লাসে-ক্যাম্পাসে-কাজকর্মের জগতে ঠিকমতো ফিরতে পারছে না।

তারা রাষ্ট্রের বর্বরতা দেখেছে মুখোমুখি নিশানায়। তারা শ্বাসরোধ করা শাসক রাজনীতিও দেখেছে। কিন্তু তারা কিছু পাল্টাতে পারছে না। ছটফট করছে। তারা ক্রুদ্ধ কিন্তু বিষণ্ন। সবাই তাদের কথা বলছে, কিন্তু তারা চালকের আসনে নেই। তাদের অজান্তেই তারা বিশেষ বিশেষ মহলের ‘মব’। তারা নিজস্ব ধাঁচে প্রস্তুত হওয়ার আগে তাদের একাংশকে আগস্টের-জাতীয়-ঐক্য ভাঙার কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়।

এই তরুণেরাই অন্তর্ভুক্তিমূলক বহুত্ববাদী সমাজ চেয়েছিল। এখন তাদের দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে সাংস্কৃতিক প্রাণচাঞ্চল্যের বিরুদ্ধে। তারা দেখেছিল, হলের গেট ভেঙে মাঝরাতে ছাত্রীরা মিছিল করে তাদের সমাবেশে সংহতি জানাতে আসছে। এখন তাদের বোঝানো হচ্ছে, জুলাইয়ের সেই সংহতি রক্ষার চেয়ে ওড়না আর জামাকাপড় নিয়ে আলাপ বেশি জরুরি, মেয়েরা খেলতে গেলে বাংলাদেশ টিকবে না, তারা একা কাজে যেতে পারবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি।

তারুণ্যের মনোজগৎকে এ রকম টানাপোড়েনে ফেলতে পারা ‘এস্টাবলিশমেন্ট’–এর জন্য ‘মধু-মুহূর্ত’ নিয়ে এসেছে। চেয়ারে তোয়ালে ভিজিয়ে বসা নানা আদলের প্রশাসক, রাজনৈতিক পরিচয়ে চাকরি পাওয়া শিক্ষক, চাটুকার বুদ্ধিজীবী, ইউটিউবের ‘ওয়াজিয়ান’, মার্কেট সিন্ডিকেটগুলো অভ্যুত্থানের ব্যর্থতাকে পুঁজি করে আবার ‘স্থিতিশীলতা’য় ফিরতে চায়। তারা আবার খানিকটা নরম চেহারায় পুরোনো বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে ইচ্ছুক। ১৭ কোটি মানুষের একক স্বার্থের চেয়ে তাদের অগ্রাধিকার গোষ্ঠীস্বার্থে।

সেই স্বার্থে জ্বালানি জোগাতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের একাংশ। লাল জুলাইয়ের ‘ছন্দপতন’ পেরিয়ে পুরোনো স্থিতিশীলতায় ফেরা তাঁদের জন্য জরুরি বটে। ফিরেছেনও তাঁরা অনেকখানি। টাকা কাজ করছে। ছাত্র-তরুণদেরও নানান পিচ্ছিল পথে টেনে আনা হচ্ছে। তাদের হেলিকপ্টারে চড়া, ফাইভ স্টার হোটেলে খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস করানো হচ্ছে। অতীত সামন্তীয় রাজনীতির কাঠামোতে অভ্যস্ত করানো শুরু হয়েছে তাদের।

নির্বাচনের খবর নেই; কিন্তু বহু তরুণের চাররঙা লাখ লাখ নির্বাচনী পোস্টারে ছেয়ে গেছে দেশের আনাচকানাচ। যদিও অভ্যুত্থান-কর্মী তরুণ-তরুণীদের বড় অংশ এখনো এ রকম সংস্কৃতির বাইরে দাঁড়িয়ে। বহু সংগঠক নতুন করে আবার সমাজের সঙ্গে সংলাপে নেমেছে; কিন্তু তাদেরও যেন পুরোনো ‘স্থিতিশীলতা’ই ঘেরাও করছে ক্রমে।

প্রশ্ন হলো, দেশের আপাত প্রধান দল বিএনপিও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে এ রকম স্থিতিশীলতায় ফেরাতে চায় কি না? তারুণ্যের চলতি চাওয়া–পাওয়ার বিপরীতে তাদের কাছে ভিন্ন কোনো প্রস্তাব আছে কি না? নির্বাচনের বাইরে তাদের কাছ থেকে বাড়তি আর কিছু প্রত্যাশা করা যায় কি না?

বিএনপি ‘৫৭ ভাগে’র কথা শুনবে কি না

বাংলাদেশে গত দেড় দশক মানুষ স্বচ্ছ নির্বাচন চেয়ে চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, সেটা সত্য। কিন্তু চব্বিশের অভ্যুত্থান সেই চাওয়ার সঙ্গে আরও বহু আকাঙ্ক্ষা যুক্ত করেছে। চব্বিশ এক নতুন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে। এক নতুন তরুণ সমাজের উত্থান ঘটিয়েছে।

এ মুহূর্তে দেশে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণী প্রায় সোয়া তিন কোটি। আরেকভাবে দেখা যায়, ২৯–এর কম বয়সী জনসংখ্যাই দেশে ৫৭ ভাগ। এদের সবাই ভোটার নয়। কিন্তু এরাই তো আজ ও আগামীকালের বাংলাদেশ। এখনকার সমাজ ও রাজনীতিতে এই ৫৭ ভাগই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বর্গ।

চব্বিশ এদের বিশেষভাবে পাল্টে দিয়েছে। পরিবারতন্ত্রের ছায়ায় বড় হওয়া এতদিনকার রাজনৈতিক আবহে তারা সন্তুষ্ট নয়। অচিন্তনীয় এক অর্জনে তারা সম্পূর্ণ নতুন প্রজন্ম। তারেক রহমান এদের হয়তো খানিকটা বুঝতে পারছেন। তিনি এদের সঙ্গে নিতে আগ্রহী বলে বোধ হয়েছে। অন্তত গত কয়েক মাসে তাঁর কথাবার্তা ও দলীয় নির্দেশনায় সে রকম ইঙ্গিত মেলে।

কিন্তু সেই চাওয়াকে কাজে অনুবাদ করতে তাঁর ‘৩১ দফা’ যথেষ্ট কি না, সে বিষয়ে গভীর প্রশ্ন আছে সমাজে। নির্বাচনকালীন ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ছাড়া ৩১ দফায় বিস্তারিত কোনো আর্থসামাজিক অঙ্গীকার খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অনেকগুলো ‘কমিশন’ গঠনের প্রতিশ্রুতি ছাড়া সেখানে গণ–অভ্যুত্থানের বিবিধ চাওয়ার সুনির্দিষ্ট করে তাৎক্ষণিক উত্তর নেই।

এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়েও বাংলাদেশের অতীত অভিজ্ঞতা তিক্ত। কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক সংস্কার এবং মার্কেট মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে ৩১ দফায় ভরসা করার মতো কিছু মিলছে না।

সরাসরি বললে, ৩১ দফা ঘোষণার সময় এবং এখনকার সময় সম্পূর্ণ আলাদা। ১৯৭০-এর ডিসেম্বর এবং ১৯৭১-এর এপ্রিল যেভাবে আমূল ভিন্ন ছিল। ইতিহাসে অনেক সময়ই চার মাস, আট মাস এক দশকের চেয়েও বেশি এগিয়ে দেয় কোনো জনপদকে। রাজনৈতিক দলগুলো এবং তাদের পরামর্শদাতাদের এই পরিবর্তন শনাক্ত করার হিম্মত দেখাতে হবে।

কট্টরপন্থা উত্থানের দায় বিএনপিকেও নিতে হতে পারে

বাংলাদেশে চব্বিশে বিপ্লব ঘটে যায়নি—এটা সত্য; কিন্তু বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। বিপ্লবী পার্টি থাকলে অনায়াসে এখানে পুরোনো এস্টাবলিশমেন্টকে ছুড়ে ফেলে দেশ এগিয়ে যেতে পারত। এস্টাবলিশমেন্টের সৌভাগ্য সেটা হয়নি। তাই বলে রাজপথে জন্ম নেওয়া বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষাকে অবজ্ঞা করে কেউ এগিয়ে যেতে চাইলে সেটা শেখ হাসিনার মতোই একরোখা আচরণ হবে।

বিএনপির সঙ্গে আজকের শহুরে-শিক্ষিত-মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত তারুণ্যের এখানেই মতাদর্শিক দূরত্ব দেখা যাচ্ছে। এই দূরত্ব সংঘাতের চেহারা নিয়ে তেতে উঠছে। যে সংঘাত থেকে সহিংসতা বাড়াও বিচিত্র নয়। হয়তো এসব বাজে অনুমান, যদিও তার লক্ষণগুলো আছে।

তারেক রহমান ও তাঁর দল নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের মতো করে এ রকম দ্বন্দ্বে জিততে চান না। কিন্তু বিএনপির মেঠো সংগঠক ও কর্মী দল সেটা চাইতে পারেন। ছাত্র নেতৃত্বকেও সেদিকে উসকে দিতে পারে কেউ। এই শঙ্কার সুরাহা কী?

এর ফলে যে অবস্থা তৈরি হবে বা ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে, সেখানে কট্টরপন্থীরা ‘সম্ভাবনা’ দেখছে। গত আট মাসে তারা আট বছরের চেয়ে বেশি এগিয়েছে। নির্বাচনে দক্ষিণপন্থী দলগুলো কত আসন পাবে, সেটা নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু তাদের ভোট যে অনেক বাড়বে সে বিষয়ে সমাজমনস্ক কেউ দ্বিমত করবে না। আবার ‘ভোট’ বাড়ার চেয়েও বড় ঘটনা হলো সামাজিক শাসকের জায়গায় নিজেদের স্থাপন করতে পারা।

কিন্তু একটা ‘থিওলজিক্যাল স্টেট’ কি আদৌ চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল? যদি তা না হয় তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব রাতারাতি মধ্য-বাম মেরুকরণ থেকে মধ্য-ডান মেরুকরণে বদলে যাওয়াকে কে থামাবে?

লাল জুলাইয়ের মৌলিক ইস্যু ছিল ‘বৈষম্য’। লক্ষ্য ছিল ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ’। চব্বিশের জুলাই যত পঁচিশের জুলাইয়ের দিকে এগোচ্ছে, তত আমরা দেখলাম একাত্তরকে অবজ্ঞা, ১৬ ডিসেম্বরকে অস্বীকার, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা, যুদ্ধাপরাধীদের অতীত অস্বীকারের প্রচেষ্টা, ভিন্নমতাবলম্বীদের ফাঁসির হুমকি ইত্যাদি এজেন্ডা প্রধান হয়ে উঠছে। সলিমুল্লাহ খান ও ফরহাদ মজহারের মতো অভ্যুত্থানচাঙাকারী শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীও ফাঁসির হুমকিতে পড়েছেন।

জুলাইয়ে মাঠের প্রধান এক শক্তি ছিল নারী সমাজ। ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশকে রক্ষা করে চলেছেন নারী শ্রমজীবীরা। কিন্তু এখন নারী সমাজকে সামাজিকভাবে কোণঠাসা করার একটা দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহারিকভাবে বেশ জোরদার হচ্ছে।

প্রশ্ন হলো, দেশের প্রধান দলের দাবিদার বিএনপি এবং তার নেতৃত্বও চব্বিশকে এভাবে বিকৃত হতে দেবে কি না? ছাত্র-তরুণদের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে ৩১ দফাকে আরও সময়োপযোগী ও বিস্তারিত করতে সমস্যা কোথায়? রাজনীতি তো মানুষের জন্য। তাহলে ৩০–অনূর্ধ্ব ৫৭ ভাগের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ হতে সমস্যা কোথায়?

১৯৭২-৭৩ এর প্রধান রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষায় দেশ ও সমাজকে পুনর্গঠন এবং পাকিস্তানি ধাঁচের রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার করতে না পেরে যদি ব্যর্থ হয়ে থাকে, তাহলে ২০২৫–এর প্রধান দলও চব্বিশের আকাঙ্ক্ষায় নিজেকে পুনর্গঠন করতে না পারলে বিধ্বংসী ফল আসবে। ক্ষমতায় না থেকেও নিশ্চিতভাবে বিএনপি ঐতিহাসিক সেই দায়ভারের মুখোমুখি। বাংলাদেশকে বদলে দিতে হলে বিএনপিকেও অনেকখানি বদলে যেতে হবে।

বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন প্রয়োজন। কিন্তু নির্বাচনের আগে আগে সমানতালে দ্রুত আরও কিছু প্রয়োজন মনে করছে তরুণ সমাজ। অবস্থাটা ‘জিরো-সাম-গেম’ বা শূন্য অঙ্কের খেলার মতো সাজানোর সুযোগ নেই। তৃতীয় পক্ষ সেভাবেই বিষয়টা প্রচারে আনতে তৎপর। কিন্তু কাজিয়া নয়, জিততে হবে অভ্যুত্থানের সব শক্তিকে। তা না হলে শেষ বিচারে দক্ষিণপন্থা জিতবে। বাংলাদেশ হারবে। নিউইয়র্ক টাইমস–এর প্রতিবেদনে তার ইঙ্গিত ছিল, সবাই মিলে অস্বীকার করেছি, সামনের বছরগুলোতে এ রকম ‘অস্বীকার’ কঠিন হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © dainikkhobor.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com