কয়েক দিন ধরেই মেসি-জ্বরে কাঁপছিল কলকাতা। গতকাল শনিবার সেই মহাতারকা শহরে পা রাখার পর উত্তেজনার পারদ চূড়া ছোঁয়। তাঁকে একনজর দেখতে সল্ট লেক স্টেডিয়ামে জড়ো হয় প্রায় ৬০ হাজার দর্শক। তার আগে তিনি নিজের ৭০ ফুট উঁচু ভাস্কর্য ভার্চুয়ালি উন্মোচন করেন। এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন বলিউড কিং শাহরুখ খানও।
যদিও এই মেসি উন্মাদনার শেষটা হয়েছে অঘটনের মধ্য দিয়ে। সল্ট লেকে মেসি প্রবেশ করার পর তাঁকে ঘিরেই ছিল কয়েক শ মানুষ। সেখানে অনেক নেতা, মন্ত্রী, তারকা ছিলেন।
এর ফলে গ্যালারির দর্শকরা মেসিকে ঠিকভাবে দেখতেই পারছিল না। তারা উত্তেজিত হয়ে উঠলে নিরাপত্তার স্বার্থে মেসিকে দ্রুত মাঠ ছাড়তে হয়। এরপর স্টেডিয়ামে ভাঙচুরও চালিয়েছে দর্শকরা। প্রায় ১৪ বছর পর কলকাতায় পা রাখেন মেসি।
এবার এসেছিলেন আরাধ্য বিশ্বকাপ ট্রফি জিতে। এর আগে ২০১১ সালে এসেছিলেন আর্জেন্টিনা দল নিয়ে। তখন কলকাতায় ম্যাচ খেলে ঢাকায় জাতীয় স্টেডিয়ামেও নাইজেরিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলেছিলেন মেসি এবং তাঁর সতীর্থরা।
এবারের তিন দিনের ভারত সফরে মেসির সঙ্গী হয়েছেন রদ্রিগো দি পল এবং উরুগুইয়ান তারকা লুই সুয়ারেসও। কলকাতা থেকে হায়দরাবাদের বিমান ধরেছেন তাঁরা।
এরপর মুম্বাই ও দিল্লিতেও যাবেন মেসি। সাক্ষাতের কথা রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও। গত শুক্রবার মধ্যরাতে কলকাতায় পৌঁছেন মেসি। যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে যাওয়ার হোটেল থেকেই ভার্চুয়ালি নিজের ৭০ ফুট ভাস্কর্য উন্মোচন করেছেন তিনি। বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে ধরা মেসির এই ভাস্কর্য বানানো হয়েছে লেকটাউনে তাঁর এই সফর উপলক্ষেই। গতকাল সেখানেও হাজির হয়েছিল হাজারো মেসি ভক্ত।
জায়ান্ট স্ক্রিনে মেসির ভাস্কর্য উন্মোচনের আনুষ্ঠানিকতা দেখেছে তারা। হোটেলে সেই অনুষ্ঠানও হয়েছে জমকালো। আমন্ত্রিত অতিথিরা ছিলেন। শাহরুখ খান এসে তাঁর সঙ্গে হাত মেলান এবং ছবি তোলেন। আরো অনেক ভক্তের ছবি তোলার আবদার মেটান তিনি। দি পল, সুয়ারেস—তাঁরাও একেকজন বড় তারকা। শুধু তাঁরাই যদি কলকাতায় আসতেন, কম মাতামাতি হতো না। এর আগে গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেসকে নিয়ে যেমনটা হয়েছিল। কিন্তু কলকাতায় মেসির সেই তারকারাও যেন এদিন সাধারণ বনে গিয়েছিলেন। আর্জেন্টাইন তারকার এমনই দ্যুতি, খ্যাতি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও যোগ দেওয়ার কথা ছিল সল্ট লেকের আয়োজনে, কিন্তু মেসি নির্ধারিত সময়ের আগেই স্টেডিয়াম ত্যাগ করায় এবং দর্শকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠায় তিনি মাঝপথ থেকেই ফিরে গেছেন। ভাস্কর্য উন্মোচন অনুষ্ঠানটি বাইরে না করে হোটেলে ভার্চুয়ালি করা হয় নিরাপত্তাঝুঁকি ও বিশৃঙ্খলা এড়াতেই। মেসি যেখানেই গেছেন ভক্তরা ভেঙে পড়েছে সেখানেই। রাতে বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে জড়ো হয়েছিল হাজারো মানুষ। সল্ট লেকে মেসিকে দেখতে টিকিট কাটা নিয়েও ছিল উন্মাদনা। তবে বাড়তি এই উন্মাদনার চাপেই কলকাতায় অবস্থানটা সংক্ষিপ্ত করে ফিরতে হয়েছে তাঁকে।