December 14, 2025, 6:04 am

সামাজিকমাধ্যমে শিশুদের নিয়ন্ত্রণ: আইন বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জের মুখে অস্ট্রেলিয়া

Reporter Name
  • Update Time : Sunday, December 14, 2025
  • 16 Time View

অস্ট্রেলিয়ার সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশুদের নিয়ন্ত্রণে বিশ্বে প্রথমবারের মতো আইন চালু করেছে। তবে আইনটির বাস্তবায়ন নিয়ে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে আলবানিজ সরকার। প্রত্যাশা অনুযায়ী শিশুরা অনলাইন থেকে সরছে না। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক জনপ্রিয় সামাজিম মাধ্যম ‘রেডডিট’ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে। অস্ট্রেলিয়ার ওই আইনে ১৬ বছরের কম বয়সী কিশোর-কিশোরীকে সামাজিকমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। রেডডিটের দাবি, অস্ট্রেলিয়ার আইনটি অসাংবিধানিক, কারণ এটি যোগাযোগের স্বাধীনতাকে লঙ্ঘন করে।

রেডডিট এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি সামাজিকমাধ্যম থেকে শিশুদের সুরক্ষায় অন্য আরও কার্যকর উপায় রয়েছে। ১৬ বছরের কম বয়সীদের সুরক্ষার নীতি সম্পর্কে আমরা একমত। তবে এই আইনের দুর্ভাগ্যজনক প্রভাব রয়েছে। এই আইন মূলত অপ্রাপ্তবয়স্কদের ওপর হস্তক্ষেপমূলক। কারণ কিশোর-কিশোরীদের মতপ্রকাশে এটি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সরকার রেডডিটের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সরকার অস্ট্রেলিয়ান বাবা-মা ও শিশুদের পক্ষে এই পদক্ষেপ নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশু ও তাদের পরিবার যেন ক্ষতির শিকার না হয়, সে বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করব।’

গত বুধবার অস্ট্রেলিয়ার সরকার ঘোষণা করে- সামাজিকমাধ্যম রেডডিট, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, কিক, স্ন্যাপচ্যাট, থ্রেডস, টিকটক, এক্স, ইউটিউব এবং টুইচ যদি শিশুদের অ্যাকাউন্ট অপসারণ না করে, তাহলে ৪৯.৫ মিলিয়ন ডলার (অস্ট্রেলিয়ান) পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার ই-সেফটি কমিশনার জুলি ইনম্যান গ্রান্ট গত বৃহস্পতিবার অন্তত ১০টি প্লাটফর্মকে নোটিশ পাঠান। নোটিশে কতগুলো শিশু অ্যাকাউন্ট অপসারণ করা হলো তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ছয় মাস অন্তর অন্তর তাদের একই নোটিশ পাঠানো হবে বলেও জানানো হয়েছে।

নতুন আইনে কী আছে
আইনটির নাম অনলাইন নিরাপত্তা সংশোধন (সামাজিক মাধ্যম ন্যূনতম বয়স) আইন ২০২৪। এটি গত ১০ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো ১৬ বছরের নিচে বয়স এমন শিশুকে সামাজিমাধ্যম প্লাটফর্মে না রাখা। সামাজিকমাধ্যম কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করা হয়েছে কম বয়সী আকাউন্টের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুন করে যাতে শিশুরা অ্যাকাউন্ট খুলতে না পারে, সে ব্যবস্থাও নিতে হবে।

এই আইনে কোনো শিশু বা তার পরিবার দণ্ডিত হবে না। সংশ্লিষ্ট প্লাটফর্ম আইন না মানলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে শিশুরা লগ-ইন ছাড়া পাবলিক কনটেন্ট দেখতে পারবে, কিন্তু কোনো পোস্ট বা কমেন্ট করতে পারবে না।

নতুন আইনের ফলে কী ঘটল
নতুন আইন জারির ফলে অস্ট্রেলিয়ার শিশুরা এখন বিকল্প প্ল্যাটফর্ম খুঁজছে। মোবাইল অ্যাপ বিশ্লেষণকারী গোয়েন্দা প্ল্যাটফর্ম অ্যাপটোপিয়া জানিয়েছে, আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে ছবি শেয়ার করার অ্যাপ ইয়োপের ডাউনলোড ২৫১ শতাংশ বেড়েছে। বাইটড্যান্সের মতো টিকটকের ফটো এবং ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ লেমন৮ এর ডাউনলোড বেড়েছে ৮৮ শতাংশ।

অস্ট্রেলিয়ার সরকারি অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ই-সেফটি জানিয়েছে, তারা ইয়োপ, লেমন৮ এবং অন্যান্য ছোট অ্যাপগুলোকে চিঠি দিয়েছে। প্লাটফর্মগুলো শিশুদের অ্যাকাউন্ট অপসারণ না করলে জরিমানাও গুনতে হবে।

অনেকে বলছেন, আইনটি খুব কড়া এবং কার্যকর কতটুকু হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সামাজিকমাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত প্রবেশাধিকারের বিকল্প থাকা উচিত বলেও দাবি করছেন মানবাধিকার এবং ইন্টারনেটের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা কর্মীরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমে বয়সের সীমাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ করা কঠোর নিয়ন্ত্রণের শামিল। তাছাড়া গোপনীয়তার কারণে প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারকারীদের তথ্য সরকারের হাতে তুলে দিতে বাধ্য নয়।

কিশোর-কিশোরীদের প্রতিক্রিয়া কী
গত বুধবার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর চৌদ্দ বছর বয়সী চিয়ারলিডার লুসি ব্রুকস স্ন্যাপচ্যাটে কিছু বন্ধুকে অল্প সময়ের জন্য হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাদের ফিরে পেয়েছেন। অনেকেই নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছিল। আইডিতে অনেকে বয়স্ক মুখমণ্ডল ব্যবহার করছে। এভাবে বয়স শনাক্তকরণ প্রযুক্তি এড়াতে পেরে তারা খুশি। লুসি বলেন, যারা ইনস্টাগ্রামে অ্যাকাউন্ট হারিয়েছে, তারা স্ন্যাপচ্যাট কিংবা টিকটকে আছে।

সামাজিকমাধ্যমে শিশুদের নিষেধাজ্ঞার সূচনা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ তার সিডনির বাসভবনের লনে একটি সাধারণ অস্ট্রেলিয়ান বারবিকিউ আয়োজন করেছিলেন। অতিথিদের মধ্যে ছিলেন সাইবার বুলিং সহ্য করার পরে আত্মহত্যা করে মারা যাওয়া শিশুদের বাবা-মা। সেখানে অনলাইন নির্যাতন বা যৌন শোষণ থেকে শিশুদের মুক্ত করার প্রচারাভিযানে যুক্ত থাকা কর্মীরাও ছিলেন। তাদের স্লোগান ‘শিশুদের শিশুর মতো থাকতে দাও’।

১৫ বছর বয়সী একদল কিশোর সিএনএনকে জানায়, নতুন আইনের ফলে কেউই তাদের সামাজিকমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট হারিয়ে ফেলেনি। একজন বলল, সে জন্ম তারিখ ২০০০ সাল লিখে একাউন্ট খুলেছে।

আরেকজন জানায়, ‘আমি যদি টিকটক হারিয়ে ফেলি, তবে স্ন্যাপচ্যাটে সক্রিয় থাকব।’

পেজের ফলোয়ার ও অনলাইন ব্যবসা নিয়ে শঙ্কা
অনলাইন নিউজ চ্যানেল সিক্স নিউজের ১৮ বছর বয়সী প্রতিষ্ঠাতা লিও পুগলিসি সরকারি নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করছেন। তিনি মনে করেন, সরকার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে।
তিনি সিএনএনকে বলেন, তার ১৬ বছরের কম বয়সী ভাই সামাজিকমাধ্যম ত্যাগ করার চিন্তাই করতে পারে না।

পুগলিসি ১১ বছর বয়সে তার নিউজ চ্যানেল শুরু করেছিলেন। এখন তিনি নয়জন স্কুল-বয়সী সাংবাদিকের একটি ছোট দল পরিচালনা করেন। এখন তিনি তার প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কর্মরতদের ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তিত।

১৩ বছর বয়সে গ্লসি বয়েজ সামাজিকমাধ্যমে নিজের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এখন ব্যবসাটি মূলত ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক এবং টিকটকের মাধ্যমে ক্রেতা সংগ্রহ করে। তিনি তার ব্যবসা নিয়ে এখন দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

অন্যদিকে ১৫ বছর বয়সী উচ্চাকাঙ্ক্ষী গায়িকা শার লেমন৮-এ একটি অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। তার ৪ হাজার টিকটক ফলোয়ার রয়েছে। তার আশঙ্কা ছিল, নিষেধাজ্ঞার পর ফলোয়ার রাতারাতি কমে যাবে। কিন্তু তা ঘটেনি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © dainikkhobor.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com