December 1, 2025, 4:04 pm
সর্বশেষ সংবাদ:
হাসিনার বিচার পুরনো আদালতে করাটা ঠিক হয়নি: ফরহাদ মজহার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে স্পষ্ট বার্তা প্রেসসচিবের দেশের নিরাপত্তা নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে একটি চক্র: বাণিজ্য উপদেষ্টা আশ্রয়ের সিদ্ধান্ত স্থগিত ‘দীর্ঘ সময়’ বজায় রাখার ঘোষণা ট্রাম্পের মেট্রোরেলের ছাদে ওঠা যে কারণে বিপজ্জনক সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেলেন ২২ কর্মকর্তা জাতীয় তিন মাসের মধ্যেই দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারবে অন্তর্বর্তী সরকার: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বন্ধ বার্ষিক পরীক্ষা, সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি শুরু আজ ফের অভ্যুত্থানে জেন-জি, উত্তাল এশিয়ার আরেক দেশ ‘সমুদ্রে অবৈধ ও অতিরিক্ত মৎস্য আহরণে মাছের সংস্থান কমে যাচ্ছে’

হাসিনার বিচার পুরনো আদালতে করাটা ঠিক হয়নি: ফরহাদ মজহার

Reporter Name
  • Update Time : Monday, December 1, 2025
  • 1 Time View

“সেনা কর্মকর্তাদেরও একই আদালতে নিচ্ছেন। নিচ্ছেন ভালো কথা; বিচার করতে পারলে করেন। কিন্তু এ বিচার করতে তো ১০ বছর লাগবে।”

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার অপরিহার্য হলেও সেটা পুরনো ট্রাইব্যুনালে করাটা ‘সঠিক ছিল না’ বলে মনে করেন কলামিস্ট ও চিন্তক ফরহাদ মজহার।

যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছেন, নতুন ট্রাইব্যুনালে বিচার হলে তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্যতা পেত। কিন্তু এখন রায় নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠবে; কেউ কেউ এটাকে প্রতিশোধমূলক বিচার হিসেবেও মূল্যায়ন করবে।

রোববার এক আলোচনা অনুষ্ঠান ইনসাইড আউটে তিনি এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।

জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

রায়ে শেখ হাসিনা ও তার সময়কার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামন খাঁন কামালের হয় মৃত্যুদণ্ড। আর রাজসাক্ষী হওয়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের কারাদণ্ড হয় পাঁচ বছরের।

ফরহাদ মজহার মনে করেন, শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়াটা গ্রহণযোগ্য হয়নি।

“আমি মনে করি, আন্তর্জাতিকভাবে তো ‘ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট’ গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে এটা আপনি কী করে গ্রহণযোগ্য করবেন? ঠিক যেভাবে আপনার জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের আপনি (শেখ হাসিনা) ফাঁসি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ‘রেট্রোঅ্যাকটিভ’ আইন করে আপনি ফাঁসি দিয়েছেন। ফাঁসি দেবার জন্য আইন করেছেন। এটা তো ভয়াবহ ব্যাপার।”

এ ধরনের আইন করার জন্য শেখ হাসিনার পাশাপাশি তৎকালীন সংসদ সদস্যদের বিচারের মুখোমুখি করা উচিত বলে মনে করেন ফরহাদ মজহার।

তিনি বলেন, “যারা তখন জাতীয় সংসদে ছিল, তারা যে ‘রেট্রোঅ্যাকটিভ’ আইনে কাদের সাহেবকে ফাঁসি দিয়েছে, তাদের প্রত্যেকের তো বিচার হতে হবে। আপনি যে আইনে বিচার করছেন, সেই আইনকে স্থগিত রেখে আরেকটা নতুন আইন দিয়ে আপনি তাকে ফাঁসি দেবেন শুধু ফাঁসি দেবার জন্য, এটা তো মার্ডার।

“মানে এই যে জাতীয় সংসদ জাতীয় সংসদ বলেন, তাহলে পার্লামেন্ট তো আইন করার নামে একটা খুনের ভূমিকা পালন করেছে। এর উত্তরটা আপনি কী দেবেন?”

শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় কী কী সমস্যা তৈরি হতে পারে, তার একটি ধারণা দেন ফরহাদ মজহার।

তিনি বলেন, “সমস্যা অনেক ক্ষেত্রে। কারণ এই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। বলবে যে, এটা একটা প্রতিশোধ হয়েছে। তো আমি তো এটা শুনতে চাই না। আমি তো শেখ হাসিনাকে, সত্যিকার অর্থে যিনি একজন ফ্যাসিস্ট, তিনি যেসব অন্যায় করেছেন, অবিচার করেছেন, তাকে আমি শুধু ফাঁসি দিয়ে তো ক্ষান্ত হতে চাই না। তিনি কী কী করেছেন, অবশ্যই সেসব প্রমাণ চাই।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সমালোচনা করে ফরহাদ মজহার বলেন, “যদি আমার সুযোগ থাকত, তাহলে আমি বলতাম যে, একই ট্রাইব্যুনাল করাটা সঠিক ছিল না; করা উচিত ছিল ভিন্ন ট্রাইব্যুনাল।

“এই যে শুরুতে বলেছি, নতুন গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যখন শুরু হতো, তখন অবশ্যই নতুন আদালত তৈরি হতো। ফলে নতুন আদালতে যখন আপনি যেতেন, সে আদালতে আন্তর্জাতিক যেসব বিধান, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করে আপনি বিচারটা করতেন। এটা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতো।”

তিনি বলেন, “এজন্য আমরা ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলেশন কাউন্সিল চেয়েছিলাম। কিন্তু ড. ইউনূস এটা করেন নাই। কারণ আপনি যদি ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলেশন কাউন্সিল হতো, তাহলে আপনি কী করতেন? আজ যারা শেখ হাসিনার হুকুমে অপরাধ করেছে, এদের কিন্তু পাপটা লঘু হতো। সত্যিকার যে পাপী, তাকে কিন্তু আপনি পেতেন।”

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়ানোর অভিযোগে সেনা কর্মকর্তাদেরও নামেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দুই মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়েছিল ১৩ সেনা কর্মকর্তাকে।

ফরহাদ মজহার মনে করেন, এই ট্রাইব্যুনালে সেনা কর্মকর্তাদের বিচার করাটা ঠিক হয়নি। এর মধ্য দিয়ে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের বিচার না করার মানসিকতাও সরকারের মধ্যে দেখছেন তিনি।

ফরহাদ মজহার বলেন, “সেনা কর্মকর্তাদের এই আদালতে আপনি নিচ্ছেন। তো নিচ্ছেন, ভালো কথা। আপনি যদি বিচার করতে পারেন, করেন। কিন্তু এই বিচার করতে তো ১০ বছর লাগবে।

“তার মানে আপনি বিচার করতে চাইছেন না আসলে। এটাও কিন্তু একটা কৌশল। মানে, যারা সত্যিকার অর্থে গুম করেছে, আয়নাঘর বানিয়েছে, এদের আপনি বিচার করছেন না। আপনি যখন আদালতে নিয়ে যাচ্ছেন, সেখানেও তো আপনার সময় লাগবে। এক্সিকিউট করা তো এত সোজা না।”

সামরিক আইনে তাদের বিচার করা যেত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তাহলে এখন আমি ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করি। তিনি তো ক্ষমতায় ছিলেন। তাহলে তিনি সেনাবাহিনীকে, ওয়াকার-উজ-জামান সাহেবকে (সেনাপ্রধান) বললেন না কেন যে, আপনার তো একটা মিলিটারি আইন আছে। সেই মিলিটারি আইনে (বিচার) করেন।
আরও দেখুন

“মিলিটারি আইনে বিচার কেন হলো না? এটা তো আমার প্রশ্ন। আমি তো ওয়াকার-উজ-জামান সাহেব, আমাদের যে সেনাপ্রধান আছেন, শ্রদ্ধার সঙ্গে তাকে বলব, আপনি কেন বিচারটা করেননি? তাহলে এটা কি আপনারা চক্রান্ত করছেন, এদেরকে বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্য? আমরা তো বাঁচিয়ে দিতে চাইছি না।”

তিনি বলেন, “এরপর আপনি দেখুন, আপনি যদি সত্যিকার অর্থে তদন্ত না করেন, তাহলে অনেক অপরাধীকে তো আপনি শাস্তি দিবেন না। পাশাপাশি অনেকে, যারা সত্যিকার অর্থে কিন্তু অপরাধী নয়, কারণ সে তো কমান্ডের অধীন। খেয়াল করেন সেনাবাহিনী কিন্তু। সেনাবাহিনী তার অফিসার যে কমান্ড দিয়েছে, সে কমান্ড পালন করেছে। তো আপনি তার জন্য তাকে দোষী করবেন, নাকি যিনি কমান্ড দিয়েছেন, তাকে দোষী করবেন? তাহলে এই আদালত, তার কি এমন কোনো আইন আছে, যাতে সে এটা বের করতে পারবে? তার তো কোনো আইন নাই।”

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © dainikkhobor.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com