December 1, 2025, 8:27 am
সর্বশেষ সংবাদ:
‘সমুদ্রে অবৈধ ও অতিরিক্ত মৎস্য আহরণে মাছের সংস্থান কমে যাচ্ছে’ দেশের ৩৩ শতাংশ মানুষ রোগাক্রান্ত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের একমাত্র সমাধান: পোপ লিও সশস্ত্র বাহিনীর বঞ্চিত সদস্যদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা বেলুচিস্তানে এফসি সদর দপ্তরে হামলা, পাল্টা হামলায় ৩ সন্ত্রাসী নিহত হঠাৎ পাল্টে গেলো বাংলালিংকের লোগো, সামাজিকমাধ্যমে চলছে আলোচনা কক্সবাজারে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা এবং কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার সঙ্গে এবার রেহানা-টিউলিপের রায় সোমবার খালেদা জিয়ার অসুস্থতার জন্য হাসিনা সরকার দায়ী: রাশেদ খান খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল, কিছুটা ভালোর দিকে: তথ্য উপদেষ্টা

মদিনা সনদ: রাসূলুল্লাহর (সা.) রাষ্ট্রচিন্তা ও আজকের বিশ্ব

Reporter Name
  • Update Time : Friday, November 14, 2025
  • 25 Time View

রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর আগমনের আগে মদিনা (তৎকালীন ইয়াসরিব) ছিল গোত্রীয় দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও যুদ্ধ-বিগ্রহে জর্জরিত একটি অশান্ত জনপদ। তাই সেখানকার অধিবাসীরা বহু যুগ ধরেই এমন একজন মহামানবের অপেক্ষায় ছিল, যিনি মদিনার অধিবাসীদের শান্তি, সম্প্রীতি, সাম্য ও ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করবেন, অবসান ঘটাবেন সব দ্বন্দ্ব-সংঘাতের।

পরবর্তী সময়ে মহান আল্লাহর ইচ্ছায় নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় হিজরত করেন। সেসময় মদিনায় প্রধানত ৩টি সম্প্রদায়ের লোক বাস করত, যথা-ইহুদি, পৌত্তলিক তথা মূর্তিপূজারি (আউস ও খাজরাজ গোত্র) এবং স্বল্পসংখ্যক আনসার সাহাবি (মদিনার সাহায্যকারী মুসলিম)। এ ছাড়া মক্কা থেকে আগত মুহাজির (হিজরতকারী) সাহাবিরাও তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। রাসূল (সা.)-এর সুমহান নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা, উদারতা, মহানুভবতা, দয়াশীলতা, মানবতা ইত্যাদি অসাধারণ গুণাবলি কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে মদিনার আপামর জনসাধারণ তার একান্ত অনুরাগীতে পরিণত হয়।

তাই তারা সম্মিলিতভাবে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)কে রাজমুকুট পরিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাদশাহর মর্যাদা দিয়ে মদিনার রাষ্ট্রপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত করে। আর এরই মাধ্যমে বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম ইসলামি রাষ্ট্রের সূচনা হয়।

মদিনার রাষ্ট্রপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সা.) নবগঠিত ইসলামি রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য মদিনার সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে একটি লিখিত সনদ প্রণয়ন করলেন। মদিনায় বসবাসরত মুসলমান, ইহুদি ও পৌত্তলিকদের কাছে এ সনদ এতটাই গ্রহণযোগ্যতা পায় যে, তারা নির্দ্বিধায় সনদটিতে স্বাক্ষর করেন। ইতিহাসে এ সনদটিই ‘মদিনা সনদ’ (The Charter of Medina) বা ‘মদিনার সংবিধান’ (The Constitution of Medina) নামে খ্যাত।

প্রকৃত পক্ষে, মদিনা সনদ ছিল বিশ্বের ইতিহাসে ‘প্রথম লিখিত সনদ’ এবং ‘প্রথম লিখিত সংবিধান’। প্রাচীন সিরাত গ্রন্থ প্রণেতা ইবনে হিশামসহ অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে, মদিনা সনদে সর্বমোট ৫৩টি ধারা ছিল। এ সনদের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ধারার সারমর্ম নিম্নরূপ-

১. মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (সা.) প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান (Head of the State) নির্বাচিত হলেন এবং পদাধিকার বলে তাকে মদিনার সর্বোচ্চ বিচারালয়ের প্রধান বিচারপতি (Chief Justice) হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো।

২. এ সনদে স্বাক্ষরকারী মুসলমান, ইহুদি ও পৌত্তলিক সম্প্রদায়গুলো সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে এবং একটি সাধারণ উম্মাহ (জাতি) গঠন করবে।

৩. মুসলিম ও অমুসলিম বিভিন্ন সম্প্রদায় স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। কেউ কারও ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

৪. অঙ্গীকারবদ্ধ কোনো সম্প্রদায়ই বাইরের কোনো শত্রুকে আশ্রয় দিতে পারবে না এবং কোনো ধরনের সাহায্য করতে পারবে না।

৫. স্বাক্ষরকারী কোনো সম্প্রদায়কে বহিঃশত্রু আক্রমণ করলে অঙ্গীকারবদ্ধ সব সম্প্রদায়ের সমবেত শক্তির সাহায্যে সেই বহিঃশত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। অঙ্গীকারবদ্ধ গোত্রগুলো সর্বদা পারস্পরিক সৌহার্দ বজায় রাখবে এবং একে অপরের কল্যাণ কামনা করবে। একপক্ষ অপরপক্ষকে সুপরামর্শ দেবে। বিশ্বস্ততা রক্ষা করে চলবে। কখনো বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না।

৬. মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অনুমতি ছাড়া কেউই কারও বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না।

৭. সব ধরনের জুলুম-অত্যাচার, অন্যায়-অবিচার প্রতিরোধে সবাই একতাবদ্ধ হয়ে থাকবে। এ বিষয়ে কারও প্রতি কোনো সৌজন্য বা অন্যায় পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না, তা সে যে-ই হোক না কেন। অপরাধীকে অবশ্যই উপযুক্ত শাস্তি ভোগ করতে হবে।

৮. ব্যক্তিগত অপরাধের জন্য অপরাধীই ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হবে। তার অপরাধের জন্য তার সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না।

৯. মদিনা নগরীকে পবিত্র (হারাম) বলে ঘোষণা করা হলো এবং এখানে যুদ্ধ, রক্তপাত, হত্যা ও অন্যায়-অনাচার নিষিদ্ধ করা হলো।

১০. মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সবার নিরাপত্তা সমানভাবে নিশ্চিত করা হলো। কোনো ব্যক্তিকে মদিনায় আশ্রয় দেওয়া হলে যতক্ষণ পর্যন্ত সে সাধারণ জনগণের কোনো অনিষ্ট বা মদিনা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে রাষ্ট্রের অন্যান্য নাগরিকের মতো সমান অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা লাভ করবে।

১১. এই সনদে স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে সিদ্ধান্তের জন্য মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর শরণাপন্ন হতে হবে। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (সা.) নিজে আল্লাহ্র নির্দেশানুযায়ী তা মীমাংসা করবেন।

১২. ইহুদিদের কোনো শান্তি চুক্তির জন্য আহ্বান জানানো হলে এটা তাদের দায়িত্ব যে, তারা তা পালন করবে এবং এর সঙ্গে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়ে যুক্ত থাকবে। একইভাবে মুসলমানদের কোনো শান্তি চুক্তিতে আহ্বান জানানো হলে এটি তাদেরও দায়িত্ব যে, তারা সেটি পালন করবে এবং এর সঙ্গে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়ে যুক্ত থাকবে।

প্রিয় পাঠক! মদিনা সনদ ছিল রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এক অভিনব রাষ্ট্রীয় সংস্কার, যা বর্বর আরব জাতিকে সভ্যতার আলোর পথ দেখিয়েছিল। মদিনা সনদ প্রণয়নের মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল (সা.) দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে চলে আসা গোত্রীয় দ্বন্দ্ব-কলহ, যুদ্ধ-বিগ্রহ দূর করে মদিনাবাসীর মাঝে ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধন স্থাপন করেন। আমরা যদি মদিনা সনদকে ইতিহাস, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোকে পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখা যাবে, এ সনদের মূলনীতিগুলো শুধু সপ্তম শতাব্দীর আরবের জন্যই প্রযোজ্য ছিল না, বরং একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক বিশ্বের জন্যও এটি এক পরম অনুসরণীয় সংবিধান। আজ যখন বিশ্বজুড়ে জাতিগত সংঘাত, ধর্মকেন্দ্রিক সহিংসতা এবং রাষ্ট্রীয় অস্থিতিশীলতা চরম পর্যায়ে, তখন প্রায় ১৪৫০ বছর আগের এ সংবিধানের প্রাসঙ্গিকতা নতুন করে উপলব্ধি করা যায়। আজকের বিশ্বের অনেক উন্নত রাষ্ট্রও মানুষের সমঅধিকার ও ধর্মীয় সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছে। অথচ রাসূলুল্লাহ্ (সা.) মদিনা সনদের মাধ্যমে ইহুদি, পৌত্তলিক (মূর্তিপূজারি) ও মুসলিমদের নিয়ে একটি সাধারণ জাতি গঠন করেন এবং মদিনা রাষ্ট্রের সব অধিবাসীকে সমান মর্যাদা ও অধিকার প্রদানের পাশাপাশি ধর্মীয় স্বাধীনতার পূর্ণ নিশ্চয়তা দেন (২ ও ৩ নং ধারা)। এটি আধুনিক রাষ্ট্রগুলোর জন্য এক উজ্জ্বল উদাহরণ, যা শিক্ষা দেয় যে-রাষ্ট্রীয় ঐক্যের জন্য ধর্মীয় অভিন্নতা নয়, বরং ন্যায়বিচার ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ প্রয়োজন।

মদিনা সনদ পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করে যে, অপরাধীর ব্যক্তিগত অপরাধের জন্য তার গোত্র বা সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না (৮ নং ধারা)। এটি ‘জাতিগত শাস্তি’ (Collective Punishment) প্রথার বিলুপ্তি ঘটিয়ে আইনের শাসনের এক মৌলিক নীতি প্রতিষ্ঠা করে। আজকের যুগেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জাতিগত দাঙ্গায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ওপর যে নিপীড়ন চালানো হয়, মদিনা সনদ তার সম্পূর্ণ বিরোধী।

একইভাবে, সনদের ৪ ও ৫ নং ধারায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ধারণা তথা বহিঃশত্রুকে সহযোগিতা না করা এবং শত্রু আক্রমণ একযোগে মোকাবিলা করার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা আধুনিক বিশ্বের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার ধারণারই প্রাচীনতম ও সফলতম প্রয়োগ। আরেকটি অবাক করা বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে সভ্যতার চরম উৎকর্ষের যুগেও যেখানে শরণার্থীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন, সেখানে প্রায় ১৪৫০ বছর আগে প্রণীত মদিনা সনদে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) শরণার্থীদেরও রাষ্ট্রের নাগরিকদের সমান মর্যাদা ও অধিকার প্রদান করেছিলেন (১০ নং ধারা), যা পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বকালে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার এক অনন্য নিদর্শন হয়ে থাকবে।

মদিনা সনদের এরূপ সার্বজনীন, নিরপেক্ষ ও ন্যায়সঙ্গত ধারাগুলোর কারণেই আধুনিক বিশ্বের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এক বাক্যে স্বীকার করেন যে, এ সনদের মধ্যে আদর্শ সংবিধানের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল। এ কারণেই পরবর্তী সময়ে মদিনা সনদ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইংল্যান্ডে ১২১৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘Magna Carta’, ১৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে ‘Petition of Right’, ১৬৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘Habeas Corpus Act’; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘United States Bill of Rights’ এবং জাতিসংঘে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর ‘Universal Declaration of Human Rights’ অর্থাৎ ‘সার্বজনীন মানবাধিকার’ ঘোষিত হয়। মদিনা সনদের সুদূরপ্রসারী প্রভাব এবং আল্লাহ্র রাসূল (সা.)-এর অতুলনীয় বিচক্ষণতা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মিশরীয় আইনবিদ ও গবেষক ড. মুহাম্মাদ সালিম আল আওয়া (জন্ম : ২২ ডিসেম্বর, ১৯৪২ খ্রি.) বলেন-

‘সম্ভবত আজ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে যতগুলো সংবিধান প্রণীত হয়েছে, সব সংবিধানেই মদিনা সনদের এ দফাগুলো অনুসরণ করা হয়েছে। মানুষ শত শত বছরের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে যেখান পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছে, আল্লাহ্র রাসূল (সা.) আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে মদিনা সনদ নামক অঙ্গীকারনামায় তা লিখিয়ে নিয়েছিলেন।’ (কালান্তর প্রকাশনী কর্তৃক অনূদিত সিরাতুন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা ৭৯)।

পরিশেষে বলা যায়, মদিনা সনদ শুধু একটি ঐতিহাসিক দলিলই নয়, বরং এটি সফল ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র পরিচালনার এক অপরিহার্য দিকনির্দেশনা। এ সনদ অধ্যয়ন করলে স্পষ্টতই উপলব্ধি করা যায় যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) শুধু একজন ধর্ম প্রবর্তকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক, আইন প্রণেতা ও সমাজ সংস্কারক। আজকের সংঘাতময় পৃথিবীর সব রাষ্ট্রে যদি মদিনা সনদের মূলনীতি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়, তাহলে সব ধর্মের, সব শ্রেণির মানুষ সম্প্রীতি, সৌহার্দ ও সহমর্মিতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্বর্গীয় শান্তির মাঝে বসবাস করতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ্।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © dainikkhobor.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com