ইসলামের মূল মর্মবাণী হলো, মানুষের সর্বস্ব আল্লাহতায়ালার কাছে সোপর্দ করে দেওয়া। তার সব শক্তি, তার যাবতীয় কামনা-বাসনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, ভাব-আবেগ, তার সব প্রিয় বস্তু এক কথায় মাথার চুল থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত, যা কিছু আছে, সবকিছুকে আল্লাহতায়ালার কাছে অর্পণ করার নামই হলো ইসলাম। পবিত্র কুরআনের ভাষায় ইসলাম মানে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করা।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি আনুগত্য ও বাধ্যতা স্বীকার করে নেওয়া যে জীবনাদর্শের লক্ষ্য তারই নাম ইসলাম। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিস্তরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিধিনিষেধ পালন করা, তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা-এ লক্ষ্যে নিজেকে বিলীন করে দেওয়ার নামই ইসলাম। সমাজ ও রাষ্ট্রকে অশান্তি, জুলুম ও বিশৃঙ্খলামুক্ত করার নির্দেশ ইসলামে রয়েছে বলেই ইসলাম শান্তির আদর্শ আর ইসলাম শান্তির ধর্ম। মানুষ যদি সত্যিই শান্তি পেতে চায়, তাহলে তার নিজের ইচ্ছামতো জীবনযাপন না করে আল্লাহর দেওয়া বিধান মেনে চলতে হবে।
ইসলাম শব্দটির অর্থের মধ্যে বিশেষ গুণের পরিচয় পরিস্ফুটিত। ইসলামের তুলনা ইসলাম কেবল নিজেই। নাম থেকেই বোঝা যায়, ইসলাম কোনো ব্যক্তি বিশেষের আবিষ্কার নয়, কোনো জাতির নামানুসারেও এ মতাদর্শের নাম হয়নি। ইসলাম নামটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রদত্ত। তাই ইসলাম নামটি অনেক গুরুত্ব বহন করে। আর ইসলামের সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক সুগভীর।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। জীবনাদর্শ, জীবনব্যবস্থা ও জীবনবিধান হিসাবে ইসলামে রয়েছে সব সমস্যার সঠিক সমাধান। এতে রয়েছে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি সমস্যার সমাধান আর মৃত্যুর পর আখেরাতের অনন্ত জীবনে নিশ্চিত সুখ-শান্তি লাভের উপায়। ইসলাম মানুষের চলার পথের সন্ধানদাতা, উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধশালী জীবন এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জন তথা মানবজীবনের চরম লক্ষ্য হাসিলের একমাত্র পন্থা। এর ব্যাপ্তি জীবনের সর্বক্ষেত্রে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের সব ক্ষেত্রেই ইসলামের নিয়ন্ত্রণাধিকার। তাই ইসলাম মানুষের সঠিক পথের দিশারি, দুনিয়া ও আখেরাতের সর্বাঙ্গীন ও পূর্ণাঙ্গ একমাত্র জীবনব্যবস্থা।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে সূরা আলে ইমরানের ১৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘ইন্নাদ দিনা ইনদাল্লাহিল ইসলাম’ অর্থাৎ ইসলামই আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবনাদর্শ। পবিত্র কুরআনের অপর এক স্থানে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দিনাকুম ওয়া আতমামতু আলাইকুম নি’মাতি ওয়া রাযিতু লাকুমুল ইসলামা দ্বিনা’ অর্থাৎ ‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম। তোমাদের ওপর আমার যাবতীয় নেয়ামত সম্পন্ন করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য একমাত্র দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (সূরা আল মায়েদা, আয়াত : ৩)। এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, আল্লাহ ইসলামকে মানবতার জন্য নেয়ামত হিসাবে পাঠিয়েছেন, যেখানে রয়েছে মানুষের জীবনের সব সমস্যার সমাধান।
এখন হয়তো কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, ইসলাম গ্রহণ করলে আমাদের কী লাভ? এক কথায় বলা যায়, ইসলাম গ্রহণ করলে অনেক লাভ রয়েছে। প্রথম যে লাভ তাহলো, ইসলাম গ্রহণ করলে আমরা আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্য লাভ করতে পারি। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা আমল করলে জাগতিকভাবেও লাভবান হব এবং আধ্যাত্মিকভাবেও। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে ‘মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন বান্দা ইসলাম গ্রহণ করে আর তার ইসলাম খাঁটি হয়, আল্লাহ তা দ্বারা তার প্রায়শ্চিত্ত করে দেন, সে আগে যা অপরাধ করেছে। অতঃপর তার সৎকাজ হয় অসৎ কাজের বিনিময়, সৎকাজ তার দশগুণ থেকে সাতশ গুণ বরং বহু গুণ পর্যন্ত আর অসৎকাজ তার একগুণ মাত্র, তবে আল্লাহ্ যাকে ছেড়ে দেন তার একগুণের শাস্তিও হবে না’ (বুখারি)।
আসলে কেউ যদি ইসলাম গ্রহণ করার সৌভাগ্য লাভ করে, তাহলে মূলত সে নিজেকেই অনুগ্রহীত করে থাকে। যেভাবে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা ইসলাম গ্রহণ করে তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছে বলে মনে করে। তুমি বল, তোমরা ইসলাম গ্রহণ করে আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছ বলে জাহির কর না। পক্ষান্তরে তোমাদের মুমিন হওয়ার দাবিতে তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকলে একথা স্বীকার কর, আল্লাহই প্রকৃত ইমানের দিকে পরিচালিত করে তোমাদের ওপরই অনুগ্রহ করেছেন’ (সূরা আল হুজুরাত, আয়াত : ১৭)।
সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকেই বিভিন্ন নবী-রাসূলের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা মানুষকে ধর্মের দিকে আহ্বান করেছেন। কিন্তু ইসলাম তার সত্য ও ন্যায়ের শাশ্বত সৌন্দর্যের আলোকে পথ দেখিয়ে চলেছে মানব জাতিকে। মানুষের মধ্যে যারা প্রকৃত জ্ঞানী ও অনুসন্ধানী, কেবল তারাই খুঁজে পেয়েছেন সত্যের ও শান্তির সন্ধান, খুঁজে পেয়েছেন একমাত্র প্রতিপালক আল্লাহকে এবং জেনেছেন নিজের চিরস্থায়ী গন্তব্যের আসল ঠিকানা। অত্যাধুনিক কম্পিউটার চালিত যান্ত্রিক সভ্যতার এ যুগে মানুষ আজ কঠিনতম বাস্তবতার শিকার। সবাই চায় সচ্ছলতা, চায় শান্তি। বস্তুত মানুষ আত্মিক শান্তির পিয়াসী এবং বেঁচে থাকার জন্য এটি অপরিহার্য। মহান আল্লাহর মনোনীত ধর্ম দ্বীন ইসলাম সেই অনন্ত শান্তির বাণীই প্রচার করছে। তাই তো শাশ্বত ধর্ম দ্বীন ইসলামের অনিন্দ্য সুন্দর আদর্শে মানুষ যুগ যুগ ধরে ইসলাম গ্রহণ করে আসছে।
ইসলাম যে দিনের পর দিন উন্নতি করেই যাচ্ছে, এর কারণ কী? দিনের পর দিন ইসলামের যে উন্নতি হচ্ছে এর প্রধান কারণ হচ্ছে, ইসলামের অতুলনীয় আদর্শ ও শিক্ষা। সত্য আর শান্তির অন্বেষায় পাগলপাড়া হয়ে মানুষ আজ ছুটে আসছে প্রকৃত ইসলামের দিকে, আশ্রয় নিচ্ছে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে। আল্লাহতায়ালা আমাদের প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা অনুসরণ করে চলার তৌফিক দিন, আমিন।