December 14, 2025, 10:48 am

স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের ৫৮ শতাংশের ধরন লুমিনাল এ এবং বি

Reporter Name
  • Update Time : Saturday, December 13, 2025
  • 4 Time View

নিউজ ডেস্ক:
স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীর ৫৮ শতাংশেরই ধরন ‘লুমিনাল-এ’ ও ‘লুমিনাল-বি’। এর মধ্যে ‘লুমিনাল-এ’ ৩০ শতাংশ এবং ‘লুমিনাল-বি’-তে আক্রান্তের হার ২৮ শতাংশ। আক্রান্ত নারীর ৫০ শতাংশই মধ্যবয়সী। এ ছাড়া ট্রিপল নেগেটিভ (টিএনবিসি) ধরনে ২২ শতাংশ এবং ২০ শতাংশের শরীরে মিলেছে এইচইআর-২ এনরিচড ধরনের অস্তিত্ব।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত এক বছরে এই ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিতে আসা ৫০ স্তন ক্যান্সার রোগীর টিস্যু নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। এতে স্তন ক্যান্সারে তরুণীদের মধ্যে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি এবং এ থেকে বাঁচতে সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন ক্যান্সার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. শেফাতুজ্জাহান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতি ২০ নারীর মধ্যে একজন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। এমন হার অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি বছর ৩২ লাখেরও বেশি হতে পারে।

গবেষকরা জানান, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের মধ্যে কোন ধরনটি বেশি দেখা যাচ্ছে, সেটি খুঁজে বের করতেই এই গবেষণা করা হয়েছে। ক্যান্সার চিকিৎসায় ‘লুমিনাল’ বলতে স্তন ক্যান্সারের একটি উপপ্রকারকে বোঝানো হয়, যা হরমোন রিসেপ্টর-পজিটিভ স্তন ক্যান্সার নামে পরিচিত। এই ক্যান্সারের কোষগুলোর মধ্যে ইস্ট্রোজেন অথবা প্রোজেস্টেরন রিসেপ্টর থাকে, যা ক্যান্সার কোষ বাড়াতে উৎসাহিত করে। ক্যান্সারের দুটি প্রধান উপপ্রকার হলো ‘লুমিনাল-এ’ এবং ‘লুমিনাল-বি’। এর মধ্যে ‘লুমিনাল-এ’ হরমোন রিসেপ্টর-পজিটিভ স্তন ক্যান্সারের একটি উপপ্রকার। এগুলো সাধারণত ধীরগতিতে বাড়ে, এর পূর্বাভাস সবচেয়ে ভালো। আর ‘লুমিনাল বি’ হলো হরমোন রিসেপ্টর-পজিটিভ, তবে ‘লুমিনাল এ’র চেয়ে এটি দ্রুত বাড়ে। এই ধরনের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে চিকিৎসা খুবই জরুরি। পারিবারিক ইতিহাস (বংশগত জেনেটিক মিউটেশন), স্থূলতা, মদ্যপান এই ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। স্তনে একটি পিণ্ড বা ত্বকের পরিবর্তন, স্তনের আকারের পরিবর্তন বা বিকৃতি, স্তনবৃত্ত থেকে অস্বাভাবিক স্রাব, বগলে পিণ্ড বা ফোলা ভাব এটির বিশেষ লক্ষণ। গবেষণায় নমুনা সংগ্রহ করা রোগীর বেশির ভাগের শরীরে এসব লক্ষণের অস্তিত্ব মিলেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডা. শেফাতুজ্জাহান সমকালকে বলেন, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হার বাড়ছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, কম বয়সীরাও আক্রান্ত হচ্ছে। যার প্রমাণ মিলেছে গবেষণায়। ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে কিছু নারীও এই দুই ধরনে আক্রান্ত হচ্ছেন। গবেষণায় পাওয়া তথ্য ভবিষ্যতে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের চিকিৎসা কাজে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।

গবেষণাকাজে যুক্ত থাকা ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের কনসালট্যান্ট ডা. নাবিলা আহমেদ বলেন, হরমোন-সংক্রান্ত এবং জীবনধারার কারণেই নারীরা বেশি লুমিনাল-এ ও বি ধরনে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই স্তন ক্যান্সার যতদিনে শনাক্ত হয়, ততদিনে ক্যান্সার শেষ পর্যায়ে চলে যায়। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, জাঙ্কফুড-নির্ভর ডায়েট, শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়ার কারণে স্থূলতা, ধূমপান, পরিবেশ দূষণের মতো একাধিক প্রভাবক স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

গবেষণা কাজে স্তন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর টিস্যু নমুনা সংগ্রহ করাদের মধ্যে ৫০ শতাংশের বয়স ২৮ থেকে ৪৯ বছর এবং বাকি ৫০ শতাংশের বয়স ৫০ থেকে ৮৫ বছরের মধ্যে।
গবেষকরা জানান, নারীর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের শঙ্কা বাড়তে থাকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কম বয়সী মেয়েদের মধ্যে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে। কম বয়সে ঋতুস্রাব শুরু হলে এবং দেরিতে মেনোপজ হলে এতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বেশি থাকে। তা ছাড়া দেরিতে সন্তান নেওয়া, শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, চর্বিজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া, দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন বা হরমোন ইনজেকশন নিলে এ ক্যান্সার হওয়ার শঙ্কা বেশি। এসব বিষয়ে সচেতনতা ও লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসক দেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
স্তন ক্যান্সার থেকে উত্তরণে আক্রান্তদের দ্রুত হরমোন ও রেডিওথেরাপি নেওয়া, স্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা, জীবনযাপনের পরিবর্তন, নিয়মিত ফলোআপ করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন গবেষকরা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © dainikkhobor.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com