যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম শহর নিউ ইয়র্কে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত মেয়র নির্বাচন। প্রবাসী মুসলিম রাজনীতিক ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানিকে ঘিরে এবারের নির্বাচনে দেখা গেছে অভূতপূর্ব উত্তেজনা। ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
সর্বশেষ জরিপে ৩৪ বছর বয়সী মামদানি ৪৩ শতাংশ সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আছেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো। তিনি যৌন নিপীড়নের অভিযোগের পর ডেমোক্র্যাট দলের মনোনয়ন হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া তৃতীয় স্থানে রয়েছেন ১৪ শতাংশ ভোটে।
কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপ অনুযায়ী, ২৩ থেকে ২৭ অক্টোবরের মধ্যে পরিচালিত সমীক্ষায় মামদানির জনপ্রিয়তা শহরজুড়ে দ্রুত বেড়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়ে সমালোচনা করলেও, তরুণ ভোটারদের উচ্ছ্বাসে তার প্রচারণা আরও গতিশীল হয়েছে।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি অধ্যাপক লিংকন মিচেল বলেন, জোহরান মামদানি এই সময়ের প্রতীক, একজন মুসলিম প্রার্থী হিসেবে নিউ ইয়র্কের মতো শহরে তার জনপ্রিয়তা নিজেই এক বিশাল ঘটনা।
মামদানি কুইন্সের প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্য আইনসভায় দায়িত্ব পালন করছেন। প্রচারণায় তিনি ইসলামবিরোধী মন্তব্য ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণার অভিযোগ তোলেন প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে। তিনি বলেছেন, আমাদের শহরে ইসলামবিদ্বেষ এখন এমনভাবে গেঁথে গেছে, যা ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলেই দেখা যায়।
ইতোমধ্যে ২ লাখ ৭৫ হাজার ডেমোক্র্যাট, ৪৬ হাজার রিপাবলিকান এবং ৪২ হাজার স্বতন্ত্র ভোটার ব্যালট দিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, তরুণদের পাশাপাশি বয়স্ক ভোটাররাও এবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
তরুণ ভোটারদের উচ্ছ্বাসই মামদানির উত্থানের মূল চালিকা শক্তি। তার প্রচারণা শিবির দাবি করেছে, প্রায় ৯০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক সরাসরি প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। ১৫ বছর বয়সী কুইন্সের বাসিন্দা আবিদ মাহদি বলেন, আমার কাছে জোহরান হচ্ছেন নিউ ইয়র্কের বার্নি স্যান্ডার্স।
মামদানি সম্প্রতি সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের সঙ্গে কুইন্সে এক জনসভায় অংশ নেন। অন্যদিকে কুয়োমো শেষ মুহূর্তে বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসকে সঙ্গে নিয়ে কৃষ্ণাঙ্গ ও মুসলিম ভোটারদের টানার চেষ্টা করছেন।
নির্বাচনের মূল আলোচ্য বিষয়, জীবনযাত্রার ব্যয়, অপরাধ দমন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্ন। ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, নিউ ইয়র্ক শহর তার নীতির বিরোধিতা করলে ফেডারেল অর্থায়ন বন্ধ করে দেবেন। মামদানি ধনীদের ওপর ২ শতাংশ অতিরিক্ত আয়কর আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন।
প্রচারণার শেষ সপ্তাহে ভারী বৃষ্টিতে প্রচারকাজ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও মামদানি, কুয়োমো ও স্লিওয়া; তিনজনই শেষ মুহূর্তের ভোটারদের কাছে টানতে ব্যস্ত ছিলেন। কুয়োমো শেষ পর্যন্ত দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত বর্তমান মেয়র অ্যাডামসের সমর্থনও পান।
নির্বাচনের আগের সপ্তাহে ব্রিটিশ এক সংবাদপত্রে সাবেক মেয়র বিল ডে ব্লাসিওর নামে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে মামদানির ব্যয় পরিকল্পনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হলেও পরে তিনি সেই সাক্ষাৎকার অস্বীকার করেন এবং প্রতিবেদনটি মুছে ফেলা হয়।
নিউ ইয়র্কের রাজনীতিতে মুসলিম প্রার্থী হিসেবে জোহরান মামদানির উত্থান এখন জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আগামী মঙ্গলবারের ভোট নির্ধারণ করবে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মুসলিম একজন কি না বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী শহরটির নেতৃত্বে আসছেন।
